সর্বশেষঃ

চরের মানুষের জীবন : পর্ব-৯

চর কচুয়াখালীতে আকতার মাতাব্বরের কৃষি বিপ্লব

চরের মানুষের জীবন : পর্ব-৯


জাহিদ দুলাল ॥ ৩৫ বছর বয়সী যুবক মো. আকতার মাতাব্বর। তিনি ভোলার লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দুর্গম চর কচুয়াখালীর বাসিন্দা। ওই চরের আলমগীর মাতাব্বরের ছেলে আকতার। তিনি বিগত প্রায় ১৫ বছর ধরে চর কচুয়াখালীতে বিভিন্ন ধরনের কৃষি ফসল উৎপাদন করছেন। এ বছর চরে মোট এক হাজার ৫২০ শতাংশ জমিতে সবজির চাষ করেছেন। যার মধ্যে তরমুজ ৮৮০ শতাংশ, চিচিঙ্গা ৮০ শতাংশ, শসা ৮০ শতাংশ, করলা ২৪০ শতাংশ এবং বিভিন্ন জাতের মরিচ ২৪০ শতাংশ জমিতে চাষাবাদ করেন। বর্তমানে জমি থেকে তরমুজ ছাড়া অন্য সব ফসল বিক্রি করছেন যুবক আকতার মাতাব্বর। চরের বুকে তার এমন কৃষি আবাদ দেখলে মনে হবে তিনি দুর্গম চরে একাই কৃষি সা¤্রাজ্য গড়ে তুলেছেন।
যুবক আকতার মাতাব্বর বলেন, বছরের অন্য সময় চরে ধান চাষ হলেও এ মৌসুমে ব্যাপক রবি শস্য আবাদ করা হয়। এ বছর আমি চরে ইরি ধান বাদে কেবল সবজিই চাষ করেছি এক হাজার ৫২০ শতাংশ জমিতে। যার মধ্যে শসা, চিচিঙ্গা, মরিচ ও করলার ফলন আসতে শুরু করেছে। প্রতি তিন চার দিন পরপর শসা, চিচিঙ্গা, মরিচ ও করলা তুলে বাজারে বিক্রির জন্য পাঠাই। এখনো পুরোপুরিভাবে তরমুজের ফলন আসেনি। তবে আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে তরমুজ বিক্রির উপযোগী হবে। এই চরের জমি অনেক উর্ভর। যার জন্য সব ধরনের কৃষি ফসল এখানে ভালো হয়।
তিনি আরো বলেন, আগে আমার বাবা এই চরে কৃষি চাষাবাদ করতেন। তার কাছ থেকে আমি চাষাবাদ শিখেছি। বিগত প্রায় ১৫ বছর ধরে আমিই চরে বিভিন্ন ধরনের কৃষি ফসল চাষাবাদ করি। যেখানে নিয়মিত ৩০ জন শ্রমিক কাজ করেন। আর মাস দেড়েক আবহাওয়া ঠিক থাকলে আমার চাষাবাদকৃত জমি থেকে এ বছর অন্তত ৭০ লাখ টাকার ফসল বিক্রি করতে পারবো। তবে চাষাবাদের জন্য জমি উপযোগী করা, সেচ, বীজ, বিভিন্ন কৃষি সরঞ্জাম, শ্রমিক, কীটনাশক ও বাজারে বিক্রি পর্যন্ত এ বছর খরচ হবে অন্তত ৪০ লাখ টাকা। তারপরও এ বছর ফসল বিক্রি করে আমি প্রায় ৩০ লাখ টাকার মতো লাভবান হতে পারবো। চরে উৎপাদিত এসব ফসল পার্শ্ববর্তী চরফ্যাশন উপজেলা, পটুয়াখালী ও বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করি।
ওই যুবকের জমিতে কৃষি কাজ করা শ্রমিক তছির, বশার এবং লিটন জানান, যুবক আকতার একজন পরিশ্রমী মানুষ। তিনি নিজের কাজকেই বেশি ভালোবাসেন। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা আকতার মিয়ার ফসলের ক্ষেতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছি। এর বিনিময়ে যে টাকা পাই তা দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোভাবে নিজেরাও সংসার চালাচ্ছি।


এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আবু হাসনাইন বলেন, প্রতি বছর লালমোহন উপজেলার মূল ভূখন্ড ও বিভিন্ন চরাঞ্চলে ব্যাপক পরিমাণে কৃষি চাষাবাদ হয়। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে এসব কৃষকদের নানা ধরনের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষি চাষাবাদ করতে গিয়ে কেউ কোনো সমস্যার সম্মুখিন হলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ রইলো। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো তাদের পাশে থাকতে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।