স্বাধীনতার ৫১ বছরেও মেলেনি স্বীকৃতি ও ভাতা

ভোলায় প্রতিবন্ধী ছেলের ভিক্ষার টাকায় চলে মুক্তিযোদ্ধা আঃ অদুদের সংসার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধকরে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার লক্ষ্য আজও পূরণ হয়নি বলে দাবি করেন মুক্তিযোদ্ধা আঃ অদুদ এর পুত্র ওহাব। সাম্য মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও লড়াই করছেন মুক্তিযোদ্ধারা। কেউ বেঁচে থাকার লড়াই করেন, কেউবা চিকিৎসার জন্য লড়াই করেন, আবার কেউ একমুঠো ভাত খাওয়ার জন্য লড়াই করেন। ভোলায় একমুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়ের একজন মুক্তিযোদ্ধাই আঃ অদুদ।
হ্যাঁ দেশকে তথা ভোলাকে পাকসেনাদের কবল থেকে মুক্তির নেশায় ৬ মাসের শিশুকে ঘরে রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা ভোলা সদর উপজেলার চরনোয়াবাদ এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আঃ অদুদ। অদুদ ১৯৭১ সালে ভোলাকে হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করতে একজন সম্মুখ যোদ্ধা ছিলেন। বিজয়ের ৫১ বছর পেরিয়েও অদৃশ্য কারণে আজও মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বা সনদপত্র মিলেনি অদুদ মিয়ার ভাগ্যে। আঃ অদুদের খাবার জোটে তার একটি প্রতিবন্ধী ছেলের ভিক্ষের টাকায়। আব্দুল অদুদ তখন আলী আকবর (বড় ভাই) নামে খ্যাত এর নেতৃত্বে ভোলাকে সর্বশেষ হানাদার মুক্ত করতে সক্ষম হয়।
এক শ্রেণির মানুষ মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে সম্পদের পাহাড় গড়তে যখন ব্যস্ত তখনো মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া আঃ অদুদ মুক্তিযোদ্ধা অজানা কারণে স্বীকৃতি বঞ্চিত রয়েছেন। স্বাধীনতার লাল-সবুজ পতাকা ছিনিয়ে আনতে নিজের জীবন বাজী রেখেছিলেন আঃ অদুদ। সেই মুক্তিযোদ্ধা অদুদের এখন দিন কাটছে দুরাবস্থার মধ্যে। ভাগ্য বিড়ম্বিত মুক্তিযোদ্ধাদের একজন আঃ অদুদ।
একাত্তরে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন আঃ অদুদ। দেশ স্বাধীন হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলেও ভাগ্যে জোটেনি মুক্তি যোদ্ধা স্বীকৃতি। ভোলায় মুক্তিযোদ্ধা অদুদের দিন কাটছে এখন খুব অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে। দারিদ্রতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে ও প্রতিবন্ধী ছেলে আবু কালামের ভিক্ষার টাকায়ই চলছেন তার ঔষধ কেনা ও সংসার।
জানা গেছে, ভোলার তজুমদ্দিন গহুরচৌখা নামক স্থানে সর্বশেষ পাকসেনা ও রাজাকার আটকে অংশ নেন তিনি। সেদিন ১৩জন পাকসেনাকে আটক করেন মুক্তিযোদ্ধা শাহেদ আলম, মুক্তিযোদ্ধা কিরন ও আঃ অদুদ। তাদের আটক করে বরিশাল মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে পৌছে দিয়েছিলেন তারা। সেই বীরযোদ্ধাদের একজন আঃ অদুদ। অদুদের আজ দিন কাটাচ্ছেন খেয়ে না খেয়ে, দারিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করে। ঔষধ কেনার টাকা না থাকায় ছেলের ভিক্ষের টাকায় পরিবার নিয়ে কোন রকমে দিন পার করছেন তিনি। অথচ স্বীকৃতির সনদপত্রের জন্য সহযোদ্ধাসহ সংশ্লিষ্ট কমান্ডারের পিছনে ঘুরেছেন দীর্ঘদিন।
এই দেশকে স্বাধীন করতে যাদের এতো আত্মত্যাগ, এতো রক্তদান তাদের মুল্যায়ন নেই এ দেশের মাটিতে। তাহলে কি পেলেন অদুদের মত মুক্তিযোদ্ধারা ? ভোলায় আঃ অদুদের সহযোদ্ধাদের অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা এম এ তাহের বলেন, অদুদসহ আমরা দেশের লাল সবুজ পতাকা পেয়েছি এটা বড় গৌরবের হলেও আমার সহযোদ্ধা আঃ অদুদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিপত্র আজও পায়নি এটা বড় দুঃখের।
ভোলা সদর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহিদুর রহমান বলেন, আঃ অদুদ মানবেতর জীবন-যাপন করছেন এটা আমি জানি। তবে আমরা আঃ অদুদকেসহ উপজেলার ৯৭ জন মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছি, আশা করছি শ্রিঘ্রই গেজেট পাশ হবে।
ভোলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, আঃ অদুদ মিয়ার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতির বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কিছু করার নেই। তবে তার মানবেতর জীবন-যাপন করার বিষয়টি সমাজসেবা অধিদপ্তর অবশ্যই দ্রুততার সাথে দেখবে বলে জানান তিনি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।