সর্বশেষঃ

ভোলা কলেজের সোনালী দিন

১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের দ্বীপ মহকুমা ভোলাতে স্থাপিত হয় ভোলা মহাবিদ্যালয়। তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক জনাব আবদুল আজিজের উৎসাহ ও উদ্দিপনায় ভোলা কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। ভোলা কলেজের প্রথম গভর্নিং বডির মেম্বার হলেন সর্বজনাব মরহুম আলতাজের রহমান তালুকদার, হাবিবুর রহমান তালুকদার, ইউনুস তালুকদার, ছিদ্দিক কনট্রাকটর, হাজী খোরশেদ আলম এবং ভোলা কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল ছিলেন জনাব আবদুল হক।
শিক্ষকদের মধ্যে সর্বজনাব শ্রদ্ধেয় মোহাম্মদ হোসেন স্যার, শাখায়েত হোসেন, মিজানুর রহমান, সুধীর কুমার দত্ত, হাসনা হেনা বকুল, শামসুল আলম চোকদার, মাঃ হালিম, সাইদুর রহমান, আবু বকর, নারায়ন দত্ত, মো লোকমান, সানউল্লাহ, শামসুল আলম চৌধুরী, ভোলানাথ দত্ত, মোঃ জাহাঙ্গীর, আবু তাহের, আবদুল মোতালেব, মোঃ শহিদুল্লাহ, মো লিয়াকত, গোলাম মোস্তফা, মাসুদুর রহমান, মাহফুজুর রহমান (ডেমনস্ট্রেটর) আবদুল মতিন, মহিউদদিন রুবী।
ভোলা কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাদ্র-ছাত্রীদের মধ্যে মাত্র কয়েকজনের নাম মনে করতে পারি। তারা হলেন সর্বজনাব হাসান মাসুদ কান্চন মিয়া, ফজলু মিয়া, মোঃ ফারুক, আবদুল মোতালেব, সুলতানা বেগম অরুনা প্রমুখ।
আমি ভোলা কলেজে ভর্তি হই ১৯৬৬ সালে বিজ্ঞান বিভাগে। আমাদের পূর্বের ব্যাচের যাদের কথা মনে পরে তারা হলেন- সর্বজনাব ছালে আহমেদ, সাইফুল্লাহ, জুলফিকার, আনোয়ার হোসেন ভূইয়া, আলমগির, আলতাফুর রহমান, আবু তাহের, নাসির উদ্দিন, নিজাম উদ্দীন, নুরুদ্দিন খান, শাহাবুদ্দিন, পুলিন বিহারী, আবদুস রশিদ, মোতাসিন বিল্লাহ, মোঃ মানিক, কাজী শাহজাহান, আনোয়ার, শাহজাহান গোলদার, আবদুল লতিফ, মওলানা আবদুল খালেক প্রমুখ।
প্রিন্সিপ্যাল জাকির হোসেন স্যার ভোলা কলেজে যোগদানের পর কলেজের আমূল পরিবর্তন হয়। বানিজ্য, বিজ্ঞান ও কলা বিভাগের সাথে সাথে বোটানী, জিওলজি ও ভূগোল বিভাগ খোলা হয়। ঐ সময়ে ভোলা কলেজে একটা যুগান্তকারী সময়। প্রিন্সিপাল জাকির হোসেন স্যরের ভোলা কলেজে যোগদানের পর কলেজের আমূল পরিবর্তন ঘটে এবং কলেজের নাম ডাক ছড়িয়ে পরে। তারই ফলস্বরূপ পটুয়াখালী থেকে একঝাক তরুন ভোলা কলেজে ভর্তি হলো, আলাল, দুলাল, জাহাঙ্গীর সিকদার, বারেক সিকদার ভাতৃদ্বয়, বরিষাল, নোয়াখালী, মেহেন্দিগঞ্জ এমনকি নারায়নগঞ্জের মাসুদও ভোলা কলেজে এসে ভর্তি হলো। তরুন শিক্ষকদের সমোরোহ তখন ভোলা কলেজে, ফলশ্রুতিতে ইনডোর, আউটডোর স্পোর্টস, নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, তর্ক প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞান সেমিনার, পিকনিক ইত্যাদিতে সারা বছরই ব্যাপৃত থাকতো ভোলা কলেজ। আন্ত:ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট, শিক্ষা সফর ঐ সময়েই হয়েছে এবং এগুলি আমাদের প্রিয় মিজানুর রহমান স্যারের অবদান। শিক্ষক-ছাদ্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে সুন্দরতম এক সময় অতিবাহিত করেছি আমরা। তৎকালীন সময়ে ভোলা কলেজে স্পোর্টসে প্রয়াত আনোয়ার হোসেন ভূইয়া আউটডোর স্পোর্টস এ পর পর ৩ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন।
বন্ধুবর মরহুম জাহাঙ্গীর, সদ্য প্রয়াত, ওর মৃত্যুতে কিছু পুরান স্মৃতি মনে ভেসে উঠল। ১৯৬৭-১৯৬৮ সাল। ভোলা কলেজ তখন বরিশাল জেলার মধ্যে নামি-দামি হয়ে উঠেছে। আমরা কিছু বন্ধু খুবই কাছের, মরহুম আলাউদ্দিন এডভোকেট (পিপি) মরহুম জাহাঙ্গীর (জাহাঙ্গীর প্লাজা) মরহুম গিয়াস উদ্দিন সেন্টু, আলাউদ্দিন মুরাদ, মনোয়ার, আনোয়ার, বাসুদেব সরকার (যুদ্ধকালে নিহত) শাহজাহান মানিক, শামসুল আলম, আরো অনেক।
আমরা কেউ ছাত্র ইউনিয়ন করতাম, কেউ ছাএলীগ করতাম, তবে বন্ধুতের মাঝে দল কখনো দেয়াল হয়ে উঠেনি। আমাদের একটা আকর্ষণীয় জায়গা ছিলো মতলবের চায়ের দোকান। সে সময়ে রোববার দুপুরে কলকাতা থেকে রেডিওতে একটা অনুরোধের আসর হতো, সেটা শোনার জন্য আমরা ভিড় করতাম মতলবের দোকানে। একটা প্রতিযোগিতা হতো, গানের শুরুতেই কে গানটির কথাগুলি আগে বলতে পারে। একবার শীতের সময় প্রগাম করা হলো রসের নাস্তা খেতে হবে। আলাউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর মূখ্য ভূমিকা রাখলো। ওদের বাড়ী থেকে কলশ নিয়ে আসলো রাত্র ১১ টায়। আমরা ৭/৮ জন। আমাদের নুতন বাড়ি থেকে শুরু হলো যাত্রা, ল্যাংগা স্কুল হয়ে ওদের বাড়ি পর্যন্ত যত খেজুর গাছ পাওয়া গেল সব গুলি থেকে রস পাড়া হলো। বাড়ী পৌছার অনেক আগেই কলশ রসে ভর্তি হয়ে গেল। জাহাঙ্গীরদের বাড়ি পৌঁছে গেলাম রাত ৩টায়। আলাউদ্দিনের ঘর থেকে নারিকেল আনা হলো। নাস্তা পাক শেষ হলো ভোর ৪টার দিকে। নাস্তা খেয়ে দিলাম ঘুম, সবাই দুপুরে উঠলাম। এরকম অনেক স্মৃতির মধ্যে আছে নিজ গাছ, অন্যদের গাছ থেকে ডাব পেড়ে খাওয়া।     (চলবে————-)

 

 

মাহফুজুর রহমান বাচ্চু

সাবেক শিক্ষার্থী

 ভোলা সরকারী কলেজ, ভোলা।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।