মধ্যরাত : পর্ব-২৯

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : গানটি- ভুল সবি ভুল এ জীবনের পাতায় পাতায়, যা লেখা আছে সবই ভুল। প্রশ্ন করি নিজের কাছে, কোথায় ছিলাম কোথায় যাব এই আমি—। গান না শেষে হতেই ডোরা উঠে চলে গেল। উমা, সুশান্ত আমি বসে থাকলাম। গানটা যেন বুক ভাঙ্গা আর্তনাদের মত আমার সুশান্ত ঘরের ভিতর ঘুরে ঘুরে বেড়াতে লাগল। ভুল সবি ভুল এ জীবনের পাতায় পাতায়——-।
উমা বলল ডোরা দি কোথায় গেল ? দেখি ডোরা গিয়ে বিছানায় ঘুমের ভান করে পাশ ফিরে শুয়ে আছে। উমা এসে বলল ওনি ঘুমুচ্ছেন। রাতে বেশি কথা বার্তা হলো না। দুপুরে যা ছিল ও দিয়ে খাওয়া শেষ করা হল। পরদিন চা, কোক, কফি, স্যান্ড উইচ নিয়ে আমরা সকলেই একটু বাইরে বেড়াতে গেলাম। ডোরা সেদিন একটা আকাশ নীল শাড়ী পড়েছিল। কানে আকাশ নীল পাথরের ফুল, বাম হাতে ঘড়ি পড়েছিল। লম্বা করে একটা বেনী গেঁথে ছেড়ে দিয়েছিল। কপালে আকাশ নীল টিপ পড়েছিল, দেখতে যা সুন্দর লাগছিল।
উমা খুব সেজেছিলল রক্ত কবরীর মত গাড় লাল সিক্লের শাড়ী। লাল কোয়াটার হাতা ব্লাউজ, দু’হাত ভরতি লাল কাচের চুরী। কানে লাল পাথরের মটর দুল। বাম হাতের আঙ্গুলে দামী লাল রুবীর রিং, কপালে লাল সিদুর ফোঁটা। দেখতে যন লক্ষ্মী সরস্বতীর মত। টানা টানা দু’টো বড় বড় চোখ। যেন সমস্ত পৃথিবীকে চোখের মামায় জয় করতে চায়। অনেকক্ষণ সেন্ট ক্যাথরিণ, কোর্দ্দেনিশ, সেন্ট মার্টিন, অনেক রাস্তায় ঘোরা হলো। অনেক তৈল পোরান হল। তবু যেন বেড়ানোর আকাঙ্খা মিটছেনা।
ঝুড়ি ঝুড়ি বরফের ঝুড়ি ভগবানের আর্শিবাদের মত ঝরে পড়ছে। মনে হয় যেন তুষার কণ্যা দেশে এসে পড়েছি। সবগাছ গুলু ন্যাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একমাসে কি দেড় মাস আগে ডোরা উমা মন্ট্রিলের রং বেরংয়ের গাছের বাহার দেখলে বিষ্ময় বোধ করত। কোন গাছের পাতা লাল, নীল, হলুদ, গোলাপী, রক্ত লাল, গাড় হলুদ, কাঁচা হলুদ, আকাশ নীল, গাঢ়নীল, টিয়া রং, ম্যাজেন্টা রং, জাফরানী রং, এসব রংয়ের বাহার দেখলে আমার মনে সাধারণ মানুষও কবি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। রবি ঠাকুর এদেশে এসেছিল কি না জানি না। তবে তিনি যদি দেখতেন বাংলার মানুষের জন্য অমর সাহিত্য সৃষ্টি করে যেতে পারতেন। আর মানুষের মনের রংয়ের কাছে এ রং উপহার দিতেন।
সুশান্ত বলল, কিরে আর কত ঘুরবি। আমি বললাম, লড়েন শিয়ানটা একটু ভাল করে দেখ। এখন বরফ পড়ছে, কিআর দেখবি আসতি। অক্টোবর কি নভেম্বরে, দেখতি মন্ট্রিলের সৌন্দর্য্য। মন্ট্রিল যেন প্রেমের নেশায় হাসছে। দিগ দিগন্ত জুড়ে আনন্দের ফুলঝুড়ি খেলছে। যেতাম সেন্ট ক্যাথরিন সি-বিচে ¯œান করতি। পিকনিক করতি। দেখতি শরীর কেমন ঝর ঝরে লাগছে। এই নরেন শিয়ামের বিশ্রামাগার দেখছিস ? এখানে গভীর বনের ভিতর ঝরনা আছে। কুল কুল করে বয়ে যাচ্ছে আমরা বতী নদী।

 (চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।