সর্বশেষঃ

ওবায়দুল হক বাবুল হত্যার কারণ ও কিছু প্রশ্ন ?

ওবায়দুল হক বাবুল এর মৃত্যুর আগামী ১১ই অক্টোবর ২৫বছর পূর্ণ হবে। ২৫ বছর আগে তাকে ঘাতকের রক্তাক্ত বুলেট ঝাঁঝরা করে দেয়, মিরপুরের পল্লবীতে। তারসাথে অনেক স্মৃতির বন্ধনে আবদ্ধ আমি।কোনটা রেখে কোনটা বলি, বলতেপারি তার অপার স্নেহের কথা, মানবিক মূল্যবোধের কথা, মানুষকে ভালবাসার বন্ধনে আকর্ষনের এক দুর্লভ গুনাবলীর কথা, আমাদের একান্যবর্তি পরিবারের শৈশব, কৈশোর, যৌবনের মধুর দিনগুলির কথা। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার সাহসীক ভুমিকার কথা ! আমাদের বৃহৎ যৌথপরিবার বাস্তব কারনেই, আলাদা হয়ে যায় যখন, তখন ডাকায় আমাদের একমাত্র ঠিকানা ছিল তার বাসা, তিনি ছিলেন আমাদের প্রজন্মের অভিভাবক।
ওবায়দুল হক বাবুল মোল্লা এমন বিরাট কোন মানুষ তো ছিলেন না, তবে-তার জীবন অকালে ঝরে না গেলে, হয়তো তিনি একজন বড় মাপের কিছু হতে পারতেন ? তার মধ্যে সে যোগ্যতা ছিল, সে প্রজ্ঞা ছিল, ব্যক্তিত্ব ছিল, আর ছিল সৎ সাহস, সে জন্যই ছিল বড় কিছু হওয়ার সম্ভাবনাও। আমার ভাবতে বিস্ময় জাগে কেন তাকে অকালে, এভাবে নির্মম হত্যা করা হলো ? কারা তাকে হত্যা করল ? হত্যার উদ্দেশ্যে কি ছিল ? তার মত এমন একজন জনপ্রিয় তরুণ, আদর্শবান, উদ্দমি নিষ্কলুষ সদাহাস্যময় মানুষকে কেন এভাবে জীবন দিতে হবে ?
৩০ লক্ষ্য শহীদের রক্তে কেনা এইদেশে আজ প্রতিদিন হত্যা হচ্ছে, হচ্ছে নারী নির্যাতন। চিত্ত কোথাও গীয়ে রক্তহীন বিশ্রাম পায়না। দুর্নীতি স্বজনপ্রিতি আজ রাজনিতিকে কলুষিত করে ফেলেছে, আদর্ষহীন, এক বল্গাহীন রাজনিতি চলছে এখন! এ সময় বাবুলের মতো আদর্ষ চরিত্রের মানুষদের রাজনীতিতে বড় বেশী প্রয়োজন ছিল ! বাবুলের শততাই কি, তার অকাল মৃত্যুর প্রধান কারন ? তিনি বেঁচে থাকলে আজ ভোলার আওয়ামী রাজনিতির চালচিত্র হয়তো, অন্যরকম হলেও হতে পারতো ?
আমার মনেতাই প্রশ্নজাগে, বাবুলের মৃত্যু কাকে লাভবান করল, তার মৃত্যুরপর ভোলা সংসদীয় আসনটি পাঁচ বছর শুন্য রইল কেন ? এটা সাধারণত তিন মাসের ভেতর হওয়ার নিয়ম ! বাংলাদেশের সংসদীয় ইতিহাসে এটা একটা কলঙ্ক হয়ে, আগামী প্রজন্মের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে ?
আমদের দেশে এরকম অনেক উদাহরন আছে, কারো মৃত্যুজনিত কারনে যদি কোন আসন শুন্যহয়, তাহলে উপনির্বাচনে, তার পরিবারের কাউকে মনোনয়ন দেওয়াহয়, আর বাবুলের পরিবারে একাধিক যোগ্য লোক ছিল, তার স্ত্রী ছিল, ছিল তার আপন দুই ভাইও। তাহলে ভোলায় ব্যাতিক্রম হলো কেন ? প্রশ্নটা মনকে পোড়ায়, উত্তর খুঁজে পায়না ! নিদ্রার মুহুর্তে তাই প্রার্থনা আমার। যে- তুলেছে ছুরি-যেন সেই কঠিন হাতখানি, লোহা তামা, পিতল কি শীষার বদলে, মাংস ও শুনিতে গড়া হয় ! দু:খের সাথে লিখতে হয়, যাদের বিজয়ের জন্য অশক্ত শরীরে ১৯৭৫-৯৬ একুশটা বছর প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে লড়ে, বাবুলরা রক্ত ঘাম শ্রম মেধা বিসর্জন করলো ? তাদেরই অরন্যের অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হলো ?
এ লজ্জাকি একা শুধু বাবুলদের, এর দায় সরকারেরও উপর বর্তায়! মানস প্রতিমাদের মৃত্যু নেই, গোলাপের স্নিগ্ধ সৌরভের ন্যায় আজও সৌরভ ছড়াচ্ছেন ওবায়দুল হক বাবুল। তাকে মুছেফেলা তাই কঠিন। আজ তাই সকলের প্রতি আবেদন, তিনি যে দলই করেন না, কেন: আসুন আমরা আমাদের রাজনিতির সৎ আদর্ষবান উদ্যমী, ত্যাগি নেতৃত্বকে এগিয়ে দেই, জাতীর নেতৃত্ব দেবার পথে। তাদের পেছনে ঐক্যবদ্ধ হই। কালোটাকার অধিকারী অসৎ অযোগ্য লুটেরাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে, বাবুল হত্যার প্রতিশোধ নেই। বাবুল একজন মুক্তিযাদ্ধা নেতা ছিলেন, দেশের মুক্তি, সমৃদ্ধি ছিল তার স্বপ্ন। তার স্বপ্ন পূরনের জন্য আমরা দেশকে ভালবাসার অঙ্গীকার করি। আমাদের দেশ ও জাতিকে বিভেদের অন্ধকার ভবিষ্যতের হাতথেকে মুক্তি দিতে এক ঐক্যবদ্ধ সমৃদ্ধ ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকার করি। খুনের মতো ঘৃন্য বিষয়কে দলীয় সঙ্কীর্ণতায় পৃষ্ঠপোষকতা না দিয়ে, তার যথাযথ বিচার করি, আগামী প্রজন্মের জন্য এক সুন্দর বাংলাদেশ গঠনে সচেষ্ট হই। এই পৈশাচিক হত্যার খুনিরা ক্ষমার যোগ্যনয়, তাদের জন্য শুধু ঘৃনা। তার বিদেহী আত্বার শান্তিহোক! বিধাতার কাছে এই প্রার্থনা।

 

মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক

মাহাবুবুল আলম নিরব মোল্লা।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।