ফলোআপঃ ভোলায় চাঞ্চল্যকর শিশু হত্যা ও ধর্ষণ

বোরাক বিক্রির ৪০ হাজার টাকা নিতেই ঘরে চুরি, দস্যুতা! অতঃপর ধর্ষণ ও হত্যা

প্রতিকী ছবি:

ভোলা সদরের পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের পাঙ্গাশিয়া গ্রামে এক রিকশাচালকের বোরাক বিক্রির ৪০ হাজার টাকা নেয়ার জন্যই তার ঘরে চুরি, দস্যুতা, স্ত্রীকে ধর্ষণ ও শিশুকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারকৃত ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী লাল মিয়া অপরাধের দায় স্বীকার করে এসব তথ্য দিয়েছেন।

ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারকৃত লাল মিয়াকে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হিসাবে আখ্যায়িত করে মঙ্গলবার সকালে জানান, সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের পাঙ্গাশিয়া গ্রামের জনৈক রিকশাচালকের স্ত্রীকে ধর্ষণ ও ৩ মাসের শিশু কন্যাকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত আসামী লাল মিয়া ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ফৌঃকাঃবি আইনের ১৬৪ ধারা মোতাবেক আসামীর স্বেচ্ছাপ্রণোদিত অপরাধের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী পর্যালোচনায় ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনসহ অন্যান্য সহযোগী আসামীদের সনাক্ত করা হয়েছে। আসামীদের মধ্যে ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের পৃথক পৃথক সনাক্তপূর্বক গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এসপি বলেন, বোরাক বিক্রির ৪০ হাজার টাকা চুরি করার উদ্দেশ্যেই জনৈক রিকশাচালকের ঘরে ঢুকে ধর্ষণ ও শিশুকে হত্যা করা হয়।
আর ডাকাতি করতে গেলে কমপক্ষে ৫ জন ব্যক্তির প্রয়োজন। কিন্তু রিকশাচালকের ঘরে ঢুকেছে ৪ জন।

ভোলা সদর মডেল থানার ওসি মোঃ এনায়েত হোসেন জানান, ঘটনার দিন রিকশাচলকের স্ত্রীকে দুর্বৃত্তরা ধর্ষণ করেছে। তাই, ধর্ষিতাকে ২২ ধারায় জবানবন্দির জন্য গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ভোলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে নেওয়া হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষাও সম্পন্ন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় ভোলা সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রিকশাচালক নিজেই বাদি হয়ে অজ্ঞাত ৪ জনকে আসামী করে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করেন।

চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ইলিশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের অফিসার ইনচার্জ আনিছুর রহমান মঙ্গলবার সকালে জানান, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় আসামী লাল মিয়াকে গত ৯ জুলাই শুক্রবার বিকেলে ভিকটিমের বাড়ির পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন রাজাপুরের শ্যামপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লাল মিয়া ওই এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আসামীরা চুরির উদ্দেশ্যেই দরিদ্র রিকশাচালকের ঘরে ঢুকেছিল। এবং পরে তারা ধর্ষণ ও শিশু হত্যা করেছে।

এদিকে নিহত শিশুর বাবা মামলার বাদি রিকশাচালক মঙ্গলবার সকালে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, যারা আমার নিস্পাপ শিশুকে ডোবার পানিতে ফেলে হত্যা করেছে আমি তার বিচার চাই।

তিনি আরও বলেন, আমি গত এক মাস আগে ৩৮ হাজার টাকায় একটি বোরাক ও ২ হাজার টাকায় একটি বোরাকের ব্যাটারি বিক্রি করি। এর মধ্যে ৩১০০ টাকা দিয়ে ঘরের বাথরুমের একটি দরজা কিনেছি। বাকি টাকা পাওনাদারদের দিয়ে দিয়েছি।

উল্লেখ্য, গত ৬ জুলাই মঙ্গলবার ভোর রাতে ৪ সদস্য দুর্বৃত্ত মুখে কালো মুখোশ পড়ে ধারালো অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের পাংগাশিয়া গ্রামে রিকশাচালকের ঘরে ঢুকে। এ সময় দুর্বৃত্তরা রিকশাচালকের ঘুমন্ত স্ত্রীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে ঘরে থাকা টাকাপয়সা ও স্বর্নালঙ্কার নিয়ে যায়। তখন তাদের ৩ মাসের কন্যা শিশু কান্না করায় তাকে ঘরের পিছনের একটি ডোবার পানিতে ফেলে হত্যা করে। পরে তাদের শিশু সন্তানকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ শিশুটিকে ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করার ব্যবস্থা করে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।