ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিএনপি, এবার তৃণমূল থেকে কর্মসূচি

নানা ঘাত-প্রতিঘাতে অনেকটাই বিপর্যস্ত বিএনপি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। সরকারের মেয়াদের মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে নিজেদের গুছিয়ে রাজপথের আন্দোলনর প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। ইতোমধ্যে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। জানা গেছে, এবারের আন্দোলন ও কর্মসূচি একটু ভিন্নধর্মী হবে। দল কিংবা দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের মুক্তি কিংবা দেশে ফেরানোর দাবি প্রাধান্য না দিয়ে জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজপথের এই বিরোধী দল। দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা, বেঁচে থাকার সংগ্রাম, বৈষম্য, অর্থনৈতিক দুর্দশা, বঞ্চনার বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে। দ্রব্যমূল্য সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে যাওয়া, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে মাঠে নামবে বিএনপি। পাশাপাশি কর্মসূচিতে থাকবে গণতন্ত্র ‘পূণরুদ্ধার’ ও দলীয় নেত্রীর স্থায়ী মুক্তির দাবি।
এবারের কর্মসূচির বাস্তবায়নও হবে ভিন্নভাবে। আগে কেন্দ্র থেকে কর্মসূচি দিলে তৃণমূল বাস্তবায়ন করত। এবার তৃণমূল তথা জেলা-মহানগর কমিটি কর্মসূচি দিয়ে রাজপথ থাকবে। কেন্দ্র সেগুলো মনিটরিং করবে। বিএনপির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। বিএনপি নেতারা মনে করছেন করোনাকাল এই সরকারের জন্য আশির্বাদ হয়ে এসেছে। এই জুঁজুঁ দেখিয়ে সরকার সব ধরণের ঘরোয়া কর্মসূচিও বন্ধ রেখেছিল দীর্ঘদিন। আবারও বিধি নিষেধ দিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে কর্মসূচি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিএনপি করোনার কারণে নামসর্বস্ব কর্মসূচি পালন করে আসছে। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের উপলব্ধি এভাবে চললে কোনোদিনই ক্ষমতায় আসা সম্ভব হবে না। ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র পথ রাজপথ। সেই পথ-ই বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত তাদের। এখনই বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি দেওয়ার আগে তৃণমূলকে প্রস্তুত করতে চায় দলটি। তাই এবার জাতীয় ও স্থানীয় নানা সমস্যা নিয়ে মাঠে নামতে সব সাংগঠনিক জেলাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ-পানির দাম বাড়ানো, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, সিটি করপোরেশনের ট্যাক্স বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য খাতে ব্যর্থতা, স্থানীয় রাস্তা-ব্রিজ নির্মাণে অনিয়মসহ জনসম্পৃক্ত নানা ইস্যুতে কর্মসূচি পালন করতে হবে। ইতোমধ্যে অনেক জেলা শাখা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপিসহ নানা কর্মসূচি শুরুও করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কর্মসূচি পালনের কথা বলা হয়েছে। স্থায়ী কমিটি মনে করে করোনা পরিস্থিতিকে এখন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে সরকার। দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি করোনার অজুহাতে বছরের পর বছর কর্মসূচি গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। সরকারের নানা অনিয়ম, অত্যাচার, দুর্নীতিসহ সব অন্যায়ের প্রতিবাদে বিএনপির কাছেই কর্মসূচি প্রত্যাশা করে জনগণ। তাদের প্রত্যাশা পূরণে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে বিভিন্ন পরিকল্পনা করছেন, স্থানীয়ভাবে কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ এরই অংশ।
বিএনপি নেতারা বলেন, এবারের কর্মসূচি হবে জনসম্পৃক্তমূলক। বিভিন্ন সমস্যা ও দাবি-দাওয়া নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়াবে নেতাকর্মীরা। তাতেও বাধা দিলে স্থানীয় পর্যায়ে আরও ক্ষোভের সৃষ্টি হবে। সরকারের ওপরও চাপ সৃষ্টি করা যাবে।
গত রোববার রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল জেলা এবং খুলনা মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জন বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এতে দাবি করা হয় জেলাগুলোতে সরকারের ব্যর্থতায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। সংক্রমণ রোধে এবং সংক্রমিত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে দ্রুত সবাইকে টিকা প্রদান, বিনা মূল্যে অধিক হারে করোনা পরীক্ষা, পৃথক করোনা হাসপাতাল স্থাপন ও শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার, আইসিইউ বেড, ভেন্টিলেটর, পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, বিনা মূল্যে পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। অধিক হারে সংক্রমিত জেলায় প্রয়োজনীয় সুচিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ এবং অন্য রোগীদের চিকিৎসা স্বাভাবিক রাখতে পৃথক ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, স্থানীয়ভাবে যে দাবি-দাওয়া আছে তা বের করার জন্য সংশ্লিষ্ট কমিটিকে বলা হয়েছে। তারা এগুলো নিয়ে কর্মসূচি গ্রহণ করবে। পানি-বিদ্যুতের দাম বাড়ছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, করোনার টিকা আনা যাচ্ছে না-এসব ইস্যুতে কর্মসূচি থাকবে।

সুত্র : যুগান্তর।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।