সর্বশেষঃ

জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৫০

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন)

(গত সংখ্যার পর) : রেশমী যায় না, যেতে পারে না। পেটের ভাতের জন্য নয়, মান সম্মানের জন্য। সে জানে ভাত-কাপড়ের অভাব তার হবে না। কিন্তু ব্যক্তিত্ব ও সম্মান হারিয়ে গেলে আর পাওয়া যাবে না। সন্তানগুলোর প্রতি চেয়ে মনের মমতা জাগে। আফসোস হয় এদের অনাগত অভিষ্যতের পানে তাকিয়ে।
মিঠু এখন অনেক বড় হয়েছে। বাড়ীতে একটু একটু মার কাছে পড়ে। মাঝে মাঝে মাকে জিজ্ঞেস করে, বাবা তোমাকে মারে কেন ? তুমি মারতে পার না ? রেশমী বলে, ছি: বাবা অমন কথা বলে না, তুমি পড়। মিঠু বলে, আমি বড় হয়ে বাবাকে মারব, এক্কেবারে মেরে ফেলব। রেশমী বলে, এসব বলে না, পাপ হয়। তিনি তোমার বাবা। এমনি করে সংসারটা চলছে দুঃখে হোক আর সুখে হোক। রেজা প্রায়ই মফস্বল যায়। রেশমী চেয়ে থাকে উদার আকাশের দিকে। তার বুকে কত স্থান, তার বুকে কত তারা। অপার অসীম সে ছোট ছোট তারাগুলি। কত বড় চাঁদ, তা-ও কেমন এক কোনে সুন্দর করে হেসে থাকে। সে কত সহজ, সরল, সুন্দর, কত কমনীয়, কত নমনীয়। খন্ড খন্ড মেঘগুলি কেমন ভেসে আকাশের বুকে বেড়াচ্ছে। কই আকাশের আরশিতে একটুও রাগ দেখা যাচ্ছে না। তার মুখ হাসিতে, আনন্দে গৌরবে উজ্জ্বল।
তার স্বামীর বুকে একটু স্থান হলো না। ঐ ক্ষুদ্র বুকে এই এতটুকু একটি মেয়ের জায়গা হলো না। রবী ঠাকুরের একটা কবিতা তার মনে পড়ে গেল।
‘যে আমাকে দেখে অসীম ক্ষমতায়,
ভাল-মন্দ মিলায় সকলি।’
সে এ সংসারের জন্য কি না করেছে। স্বামীকে সুখী করার জন্য আর কোন কৌশল তার পেটে নেই। রেশমী এখন সমাজের অন্যান্য নারীদের সাথে পরিচিত হতে লাগল। বাগেরহাটের এসিস্ট্যান্ট সার্জন, নাম যে কি এত মনে নেই। সার্জনের স্ত্রী ভদ্র মহিলা একদিন বেড়াতে এসে রেশমীর টেবিলে রাখা বইয়ের মাঝে রেশমীর লেখা কবিতা আবিস্কার করলো।
রেশমী মাঝে মাঝে লিখত, কিন্তু কাউকে দেখাত না। স্বামীকে কিছু বলত না। সার্জনের স্ত্রী সকলের কাছে প্রকাশ করল রেশমী লেখে। সবাই জিজ্ঞেস করতে রেশমী লজ্জ্বায় নুয়ে পড়ল। রেশমীর ভিতরে একটা নতুন অনুভূতি প্রকাশ পেল। তখন বাগেরহাটে একটি মুসলিম মহিলা সমিতি নামে একটি মহিলা সংগঠন ছিল। রেশমীকে সকলে মিলে সেক্রেটারী বানাল, রেশমী অনেক আপত্তি তুলছিল, স্বামীও ছেলে-মেয়েদের নিয়ে। ভদ্র মহিলারা তার আপত্তি কেউ মানল না। রেশমীকে বাধ্য হয়ে দয়িত্ব নিতে হলো। ভয় ছিল রেজাকে নিয়ে, সে কিভাবে গ্রহণ করবে ? সংগঠনের সদস্যরা রেজাকে অনেক বুঝানোর পর রেজা শেষ পর্যন্ত আপত্তি করলো না।
এই সংগঠন কর্তৃক রেশমী বাগেরহাটে সমাজসেবামূলক অনেক কাজ করেছে। অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অনেক ড্রামা, নৈশ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাসহ অনেক কাজ করেছে। সেই সময় একটা প্রাইমারী স্কুলের সেক্রেটারীও ছিল। সকলেই তার সুনাম করল। কিন্তু তার স্বামীর কাছে কোন সুনাম তার ছিল না। সব সময় তার দোষ ত্রুটি বড় করে দেখত। পঁচিশে বৈশাখ রবী ঠাকুরের জন্মদিনে হিন্দুরা একটি জন্ম বার্ষিকী পালন করছে। রেশমীও ইচ্ছে করল ঐ অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করতে। স্বামীর অনুমতি চাইলসে, অনুমতি দিল না।
রেশমী কত অসহায় একটা সামান্য হুকুমের জন্য রেশমী প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হলো। কিন্তু কে যেন সাহস দিল, অভয় দিল, তুমি যাও, তুমি যাও। রেশমী চলে গেল। বিয়ের পর সে কোন পুরুষদের অনুষ্ঠানে যায়নি। অথচ মহিলা সমিতির সাথে জড়িত হওয়ার পর সকল অনুষ্ঠানে জড়িত হওয়ার চেষ্টা করে। সে সময় বাঘেরহাট কলেজের এক অনুষ্ঠানে সরাসরি প্রিন্সিপালের অনুমতি কবিতা পাঠ করেছিল। দেখল কতগুলি উৎসুক মুখ তার দৃষ্টিপানে তাকিয়ে আছে। লজ্জা সংকোচ ভয় তার থেকে কোথায় চলে গিয়াছে তা রেশমী বলতে পারে না। হাজার হাজার লোক হাত তালি দিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানাল।

(চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।