ভূয়া টেকনোলজিস্ট দিয়ে চলছে রজনীগন্ধা ডায়াগনস্টিক ল্যাবের কাজ ॥ হুমকির মুখে মানব জীবন

অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে ভূয়া টেকনোলজিস্ট ও লাইসেন্স বিহীন এক্স রে। অদক্ষ ফিজিও থেরাপিস্ট দ্বারা বিভিন্ন পরিক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে রজনীগন্ধা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে, এমনটাই অভিযোগ সাধারন রোগীদের। মানুষ বাচার জন্য হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বা ডাক্তারের সরনাপন্ন হয়। অথচ সেখানে গিয়ে যদি মানুষ প্রতারিত হয় বা মৃত্যুর দরজায় গিয়ে দাঁড়ায় তাহলে কোথায় গিয়ে সু-চিকিৎসা পাবে ? এমটাই প্রশ্ন ভুক্তভোগীদের।
সূত্রে জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার উপশহর বাংলাবাজারের রজনীগন্ধা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অদক্ষ ও ভূয়া টেকনোলজিস্ট, লাইসেন্স বিহীন এক্স রে, ফিজিও থেরাপিস্ট দ্বারা দিনের পর দিন অনিয়মের মধ্য দিয়ে গ্রামের সহজ লোকজনদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন রজনীগন্ধা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক পক্ষগন। এইভাবে দিনের পর দিন অদক্ষ ভূয়া ল্যাব টেকনোলজিস্ট দ্বারা কাজ করিয়ে প্রশাসনের নাকে আঙ্গুল দিয়ে জনগনকে ভূয়া রিপোর্ট দ্বারা আসল চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করে অসংখ্য জনগনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আজ অপকর্মের চরম পর্যায়ে পৌছেছে এই ডায়াগনস্টিক সেন্টার পক্ষগন।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ০৯/০৭/২০ ইং তারিখ দুপুরে সরেজমিনে বাংলাবাজার রজনীগন্ধা মেডিকেল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য ভূয়া টেকনোলজিস্ট যাদের নেই কোন বৈধ কাগজ পত্র। ভূয়া ল্যাব টেকনোলজিস্ট হাসান মাহমুদ এর সার্টিফিকেট দেখতে চাইলে তিনি বলেন, আমি পড়াশুনা করতেছি। এখনও শেষ হয়নি। ভূয়া স্বাক্ষরের কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার কোন দোস নেই ভাই। আগে যে ছিল তার বেতন ছিল ২৫ হাজার টাকা। তাকে বাদ দিয়ে আমাকে ১১ হাজার টাকা বেতন দিয়ে ল্যাবের কাজ, এক্সরের কাজ ও ফিজিও থেরাপির কাজ করায়।
এছাড়া চেয়ারম্যান মাহবুব এর সাথে রজনীগন্ধার পরিচালক নুর সোলায়মান যোগাযোগ করিয়ে দেবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন হাসান মাহমুদ। ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে ১ ঘন্টা অপেক্ষা করার পরও দেখা যায়নি মালিক পক্ষের কাউকে।
রজনীগন্ধা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা নিতে আসা ফাতেমা বেগম ও কল্পনা বেগম জানান, আমরা গত কয়েকদিন আগে ডাক্তার দেখাইতে যাই। সেখানে গেলে ডাক্তার অনেকগুলো টেষ্ট দেয়, কিন্তু বেশি টাকা দরকার ছিল তাই করাইতে পারি নাই। তারপর দিন রিপোর্ট করাইলাম ৬ হাজার দিয়ে। কিন্তু আমার ছেলের নাকি টাইফয়েড হইছে। কিন্তু ঔষধ খাওয়ানোর পরে দেখি আমার ছেলের অবস্থা আরো খারাপ। তারপর আমি ভোলায় ডাক্তার দেখাই। তারা বলে এটি একটি ভাইরাসজনিত জ্বর। পরে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবনের পর আমার ছেলে ইনশাআল্লাহ এখন সুস্থ্য। তবে আমি ঐ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পালিক পক্ষ সহ ল্যাব টেকনোলজিস্ট হাসানের বিচার চাই; এইভাবে যেন আর কোন মানুষ ভোগান্তির স্বীকার না হয়ে মৃত্যুবরন না করেন।
মালিক পক্ষের নুর সোলাইমান স্বীকার করে বলেন, অদক্ষ ও সার্টিফিকেট বিহীন ল্যাব টেকনোলজিস্ট দ্বারা আমরা কাজ করাইছি। আপাতত কাউকে পাই নাই। তবে আমাদের বিষয়ে নিউজ করবেন না। আমরা সব মালিক বিভিন্ন সরকারি অফিসে কাজ করি বিধায় আমরা সময় দিতে পারেনি। তাই এমনটা হয়েছে।
সরকারি চাকরি করা এসব লোক কিভাবে এমন অমানবিক ও দূর্নীতিমূলক কাজ করে সেটাই জনমনের প্রশ্ন। ভূয়া টেকনোলজিস্ট ও ডাক্তার দারা ভোলায় অসংখ্য মানুষের প্রানহানীর ও বেশ ঘটনা রয়েছে। তাই অনতিবিলম্বে রজনীগন্ধা সহ সকল ভূয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন অসহায় রোগীরা।
এ ব্যাপারে ভোলা সিভিল সার্জন ড. রতন কুমার ঢালী মুঠোফোনে জানান, শুধু রজনীগন্ধা ডায়াগনস্টিক নয়, ভোলার সকল ভূয়া টেকনোলজিস্ট ও ডায়াগনস্টিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে সার্টিফিকেট বিহীন ল্যাব টেকনোলজিস্ট ও মালিকগনকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় বাংলাবাজের সচেতন মহল। অভিলম্বে বাংলাবাজার থেকে ডায়াগনস্টিকটি অপসারন ও সিলগালা করার অনুরোধ জানিয়েছেন হাজার হাজার ভুক্তভোগি পরিবার সহ সচেতন মহল।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।