আওয়ামী লীগ এর প্রতিষ্ঠা : মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাসের ধারাপাত

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রাক প্রস্তুতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ব্যতীত অন্য কোন নেতার চিন্তা ভাবনা ছিল এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। ১৯৪৭ এর রেড ক্লিপ রোয়েদাদ এর ভিত্তিকে পূর্ব বাংলা সীমানা নির্ধারণ এবং পরবর্তী ১৯৪৭ এর দেশ ভাগের পর বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক নেতা মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকার পূর্ব বাংলায় আসতে বাধা প্রদান করা থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তান এর অস্তিত্ব ও পূর্ব বাংলা জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণ সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। আরো আগে ভারত বিভক্তির মাধ্যমে পূর্ব বাংলাকে আলাদা ডমিনিয়ন এর মর্যাদা না দেওয়া, শেরে বাংলা ফজলুল হক ও শরৎ বোশ এর যুক্ত বাংলার পরিকল্পনা কংগ্রেস, মুসলীম লীগ ষড়যন্ত্রের ফলে ভেস্তে যাওয়ার ঘটনাগুলো বঙ্গবন্ধুর মনে রেখাপাত করেছিল। ১৯৪৭ এ ভারত থেকে পূর্ব বঙ্গে ফিরে আসে তৎকালীন মুসলীম লীগ এর প্রগতিশীল যুবকর্মী বাহিনীর সাথে বঙ্গবন্ধুর ছিল নিবিড় সম্পর্ক। এই কর্মীদের নিয়ে প্রথম ১৯৪৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির ভাইস চেয়ারম্যান খান বাহাদুর আবুল হাসনাত এর বেচারাম দেউরির বাসভবনে পাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে দুই একটি সভা করার পর তার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপরে একটি কার্যকর মুসলীম লীগ বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার পক্ষে প্রাক প্রস্তুতি স্বরূপ ১৯৪৮ সনের ৪ঠা জানুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফজলুল হক হলের এক ছাত্র সভায় বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলীম লীগ।
১৯৪৮ সনের ২৫ শে ফেব্রুয়ারী পাকিস্তান এর রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবী জানান। ১৯৪৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী ভোলার কৃতি সন্তান সামসুল আলমকে আহ্বায়ক করে রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে সচিবালয়ের সামনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্র জনতার মিছিলে পুলিশ এর বাধা ও সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ ৬৯ জন ছাত্র গ্রেফতার হন। পূর্ব বাংলার মুখমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল মোঃ আলী জিন্নার পূর্ব বাংলায় আগমন নিস্কন্টক করার জন্য ছাত্র নেতৃবৃন্দের সাথে এক আপোষ চুক্তি করেন। ১৯৪৮ সনের ১৬ই মার্চ শেখ মুজিব এর নেতৃত্বে ও সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় বটতলায় এক ছাত্র সভা অনুষ্ঠিত হয়। শেখ মুজিব তার বক্তৃতায় বলেন, খাজা নাজিমুদ্দিনকে চিনি, তিনি চুক্তির মর্যাদা রাখবেন না। অবশেষে ১৯ শে মার্চ রমনা রেসকোর্স ময়দানে গর্ভনর জেনারেল মোঃ আলী জিন্না তার বক্তৃতায় বলেন, উর্দূই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। অতঃপর সেই থেকে বাংলার রাজনীতির নতুন দিক পরিবর্তন এর শুরু।
১৯৪৯ সালে বাহিরে থাকতেই মুসলীম লীগ এর তরুন কর্মীদেরকে নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন কর্মী সম্মেলন করার জন্য। যথারীতি ২৩ শে জুন মাওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে কর্মী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আওয়ামী মুসলীম লীগ গঠন করা হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ গঠিত হয়। ১৯৫২ সনের ২১ শে ফেব্রুয়ারী হরতাল বিক্ষোভ ও সমাবেশের কর্মসূচী প্রদান করা হয়। শেখ মুজিবকে বন্দি অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ৮ই ফেব্রুয়ারী শেখ মুজিব আন্দোলনের প্রশ্নে আপোষ এর বিরুদ্ধে ছিলেন। শেখ মুজিব যে কোন মূল্যে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার পরামর্শ দেন। ১৯৫২ সনের ২১ ফেব্রুয়ারী ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্র জনতা মিছিলে নামে। মিছিলে পুলিশ এর গুলিতে শহীদ হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার প্রমূখ। মুহূর্তে রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে যায়। ১৯৫২ সালে পূর্ব বঙ্গ ব্যবস্থাপক সভা ভেঙ্গে দেয়া হয়। আন্দোলনের মুখে ১৯৫৪ সালে নির্বাচন ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হলো। আওয়ামী মুসলীম লীগ এর প্রনীত ২১ দফাই যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী ইস্তেহার পরিনত হয়। এর নেতা শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা ভাসানী, সংগঠক শেখ মুজিব। নির্বাচনের ফলাফল সর্বমোট ৩০৯টি আসনের মধ্যে সাধারণ আসনের ২৩৭টির মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসনে জয়লাভ করে। মুসলীম লীগ মাত্র ৯টি, স্বতন্ত্র ৫টি।
পূর্ব বাংলার শেরে বাংলা একে ফজলুল হক এর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। শেরে বাংলা কলকাতা সফরে গিয়ে পকিস্তান এর সার্বভৌমত্ব এর উপর আঘাত করে বক্তব্য দিয়েছেন বলে কেন্দ্রীয় সরকার অভিযোগ করেন। ইতোমধ্যে শেখ মুজিবসহ অনেকই পূর্ব বঙ্গ মন্ত্রিসভায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়। মন্ত্রিসভা গঠন এর পর পরই নারায়নগঞ্জের আদমজী জুট মিলের বাঙ্গালি বিহারী দাঙ্গা বাধানো হয়। শেরে বাংলার কলিকাতার বক্তব্যকে অজুহাত ও বাঙ্গালী বিহারী দাঙ্গাকে কেন্দ্র করে শপথ নেয়ার ১৫দিন এর মাথায় ৯২’ক ধারা মতে প্রাদেশিক সরকার ভেঙ্গে দিয়ে গর্ভনর এর শাসন জারি করে কেন্দ্রীয় সরকার শেরে বাংলাকে কে এম. দাস লেনের বাড়ীতে নজরবন্ধী করা হয়। যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় গিয়েই ২১ শে ফেব্রুয়ারী সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছিল। গর্ভনর ইস্কান্দার মীর্জা তাও বাতিল করে দেন। ১৯৫৪ সনে ৩১ শে মে প্রথমে শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। ১৯৫৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দৈনিক ইত্তেফাক জন নিরাপত্তা আইনে নিষিদ্ধ করা হয়। মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৫৪ সালের ১২ নভেম্বর জুরিখ চলে যান চিকিৎসার জন্য। ১৯৫৪ সালের ১৩ নভেম্বর শেখ মুজিবুর রহমান এর জামিন হলেও অন্য মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। একই সনের ১৮ই ডিসেম্বর শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রচেষ্টায় শেখ মুজিবুর রহমান জেল থেকে মুক্ত হন। ১৯৫৫ সনের ২১ সেপ্টেম্বর সদর ঘাট এর রূপমহল সিনেমা হলে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন বসে। আওয়ামী লীগ সাধারণ নির্বাচন এর দাবী তোলে। অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দলকে গড়ে তোলার মানসে মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রস্তাব তোলেন। কাউন্সিলে উপস্থিত সকলে ওই প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। এই অধিবেশনে সভাপতি নির্বাচিত হন মাওলানা ভাসানী। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচতি হন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৬ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান গণ-পরিষদে সংবিধান গৃহিত হয়। পরিষদে সেদিন সংবিধান এর উপর আলোচনা করতে গিয়ে শেখ মুজিব বলেছিলেন, পূর্ব বঙ্গের নাম পূর্ব পাকিস্তান রাখার অধিকার এই পরিষদের নাই এবং সংবিধানে তার বৈধ নয়।
১৯৬৫ সালের ২৩ জুলাই পল্টন ময়দানে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ সায়ত্বশাসন দাবী করেন। ইতোপূর্বে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৬ সালের ৩১ মে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করে দলের সাধারণ সম্পাদক এর সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন এর সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৫৭ সালের ১৩ জুন শাবিস্থান হলে আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অধিবেশন হয়। ওয়ার্কিং কমিটি নতুন করে গঠন করা হয়। মওলানা ভাসানী পদত্যাগ করলেও তাকেই সভাপতি করা হয়। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শেখ মুজিব পুনঃ নির্বাচিত হন। মাওলানা ভাসানী পদত্যাগে অনর থাকাতে শেখ মুজিবর রহমানকেই দলের পরিপূর্ণ হাল ধরতে হলো। মাওলানা তর্ক বাগিশকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৫৮ সনের ১লা এপ্রিল পূর্ববঙ্গ আতাউর রহমানের নেতৃত্বে সরকার গঠন করা হলো। মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শেখ মুজিবকে কয়েকটি দেশে সফরে পাঠালেন এবং বলেন অবিষ্যতে নেতৃত্ব তাকেই দিতে হবে। সে কথাই পরবর্তীতে কালে সত্য পরিণত হলো। ১৯৫৮ সালের ২৪ শে অক্টোবর জেনারেল আইউব খান পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা দখল করে বসেন। ১৯৫৮ সালের ১২ অক্টোবর শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হলেন। মুক্তি পেলেন ১৯৫৯ সনের ১৭ ডিসেম্বর। ১৯৬২ সনের ৩০ জানুয়ারী হঠাৎ করেই মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গ্রেফতার হলেন। গ্রেফতার এর প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে বিক্ষোভ প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। আইউব খানের অগণতান্ত্রিক শাসন এর বিরুদ্ধে ৯ জন বিরোধী দলের নেতা ৬২ সালের ২৪ জুন এক যুক্ত বিবৃতি দান করেন। এই ৯ নেতার মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান অন্যতম।
১৯৬২ সালের ১৯ আগষ্ট হোসেন শহীদ সোহারাওয়ার্দীকে মুক্তি প্রদান করা হয়। ১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর ভৈরুত এর একটি হোটেলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভেঙ্গে পড়েন। ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু ৩২ নম্বর বাড়ীতে এক বিশেষ সম্মেলন ডাকেন। সম্মেলন জেলা মহকুমা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ১৯৬৪ সালের ১লা মার্চ সভার সিন্ধান্ত অনুসারে আওয়ামীলীগ জেলা, থানা, গ্রাম পর্যায় সংগঠিত হতে থাকে। জেনারেল আইউব এর স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেয় আওয়ামীলীগ। ১৯৬৫ সালে মৌলিক গণতন্ত্রের ভিত্তিতে বিরোধী দলের প্রার্থী হিসাবে ফাতেমা জিন্নাকে প্রার্থী করা হয়। নির্বাচনে শেখ মুজিব সারা দেশে সফর করে দলকে সংগঠিত করার সাথে সাথে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হন। মৌলিক গণতন্ত্রের ভিত্তিতে নির্বাচনে ফাতেমা জিন্না হেরে গেলেও দেশে আইউব বিরোধী একটা আবহ তৈরী হয়। ১৯৬৫ সনের পাক ভারত যুদ্ধে পর শেখ মুজিব এর উপর একের পর এক জেলা নির্যাতন চলতে থাকে।
১৯৬৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী নেজামে ইসলাম পার্টির প্রধান লাহোরের চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর বাস বভনে পাকিস্তানের সকল বিরোধী দলের সভাবসে। বিরোধী দলের এই বৈঠক শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবী পেশ করেন। বৈঠকে অন্যান্য বিরোধী দল স্বায়ত্বশাসন কথা না তোলার জন্য আহ্বান জানান। তিনি লাহোরের সাংবাদিক সম্মেলন ৬ দফা ঘোষণা করেন। ১৯৬৬ সালের ৭ মার্চ ঢাকায় ফিরে এসে বিমান বন্দরে সাংবাদিক সম্মেলনে ৬ দফার ব্যাখা প্রদান করেন। তিনি ৬ দফাকে বাঙালির বাচার দাবী বলে উল্লেখ করেন। ১৯৬৬ সালের ১২ মার্চ আইউব খান ঢাকায় এসে এক বক্তব্যে স্পষ্ট করে বললেন, আওয়ামীলীগের ৬ দফা পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের হুমকি স্বরূপ। ১৯৬৬ সালের ১৩ মার্চ আওয়ামীলীগ এর ওয়ার্কিং কমিটি ও ৬ দফা অনুমোদন এর জন্য পেশ করা হয়। দলের সভাপতি মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশ কাউন্সিল বিরোধীতা করে বৈঠক ত্যাগ করেন। পরে সৈয়দ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে কাউন্সিল অধিবেশন অনুমোদন নেয়ার মাধ্যমে ওয়ার্কিং কমিটি ৬ দফা অনুমোদন দেয়া হয়। ১৯ মার্চ দলের কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে দলের সভাপতি, তাজউদ্দিন আহম্মেদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এই সম্মেলন এর মধ্যে দিয়েই বঙ্গবন্ধু দলে তার লড়াকু টিম তৈরী করে ফেলতে সক্ষম হয়।
১৯৬৬ সালের ২০ শে মার্চ ৬ দফার পক্ষে ঢাকার পল্টন ময়ধানে প্রথম জনসভাটি অনুষ্ঠিত হয়। ধীরে ধীরে ৬ দফা ভিত্তিক গণ আন্দোলন রূপ নেয় সারা পূর্ব পাকিস্তানে। বঙ্গবন্ধু সারা পূর্ব বাংলা সফরে বিভিন্ন পর্যায় জেল জুলমকে উপেক্ষা করে জনসভা করে। ৬ দফা বাংলার ঘরে ঘরে পৌছে দেন। বঙ্গবন্ধু প্রতিটি জনসভায় বলতেন। ওরা বেশি সময় দিবে না। পাশাপাশি ৬ দফা প্রচারে ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। ২০ শে মার্চ এর পর শেখ মুজিব সময় পেয়ে ছিলেন মাত্র পাচ সপ্তাহ। ৩৫ দিনের তিনি ৩২টি মুল জনসভায় বক্তব্য রাখেন। বিভিন্ন জেলা মহকুমা সফর এর শেষ পর্যায় ১৯৬৬ সালের ৭ মে ওয়ার্কিং কমিটির সভায় তিনি ও ৬ দফা আন্দোলনে কর্মসূচি নুতন করে তৈরী করছেন। ৮ই মে তিনি নারায়গঞ্জে বিশাল জনসভা করলেন। মুলত এটাই ছল ৬ দফা দাবীতে তার শেষ জনসভা। তিনি জানতেন এর পরে আর সময় পাবেন না। ঐ দিনই গভীর রাতে ৩২ নং বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে সরাসরি জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে দেশ রক্ষা আইনে বিচ্ছিন্নতার অভিযোগ দার করানো হয়। অন্যান্য আওয়ামীলীগ এর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গবন্ধু এমন ভাবে সংগঠনকে ঢেলে সাজিয়েছেন যে, যাতে করে তৃণমূল এর নেতারাই আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে নিতে পারেন। বঙ্গবন্ধুর ৬ দফাকে আওয়ামীলীগ ছাড়া কোন রাজনৈতিক দলই সমর্থন করে নাই। প্রত্যেকই এর বিরোধীতা করেছে।
এমনকি বঙ্গবন্ধুর নিজ দলের অনেক নেতাও দল থেকে বের হয়ে গিয়ে বিরোধীতা করেছিল। তারপরও ৬ দফা যে ঢেউ বঙ্গবন্ধু তৈরী করেছিলেন তা গ্রাম পর্যন্ত আছরে পরেছিল। বঙ্গবন্ধু জেলে, সিনিয়র নেতৃবৃন্দ জেলে, তাদেরকে রেখে ১৩ মে পল্টনে জনসভা হয় আওয়ামীলীগ এর ডাকে। উপস্থিত জনতার উপস্থিতিতে প্রমাণ হয় ৬ দফার কোন বিকল্প নাই। ঐ জনসভাতেই ৭ জুন সারা দেশে হরতাল এর ডাক দেয়া হয়। ৭ই জুন এর হরতালে তেজগাও শ্রমিক মুনুমিয়া পুলিশ এর গুলিতে নিহত হন। এতে বিক্ষোভ এর প্রবনতা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। সারাদেশে ঐ দিনই নারায়নগঞ্জে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ৬ জন শ্রমিক। ঢাকা-নারায়নগঞ্জ সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সরকার সন্ধ্যায় ঢাকা নারায়নগঞ্জে কার্ফু জারী করেন। গ্রেফতার করেন অসংখ্য নেতা-কর্মীকে। ১৯৬৬ সালের ১৬ জুন আওয়ামীলীগ এর তৃতীয় সারির নেতৃবৃন্দ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়ে যান। ১৫ তারিখ ইত্তেফাক সম্পাদক মানিক মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। মাওলানা ভাসানীসহ পিভিন পন্থী নেতৃবৃন্দ ৬ দফাকে সি.আই এর উস্কানী বলে বিবৃতি প্রদান করা সত্ত্বেও আন্দোলন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে থাকে। গর্ভনর মোনায়েম খান চেষ্টা করেও ৬ দফা আন্দোলণ স্থিমিত করতে সক্ষম হতে পারলেন না। ১৯৬৭ সালের ৩ জুন মোনায়েম খা ঢাকায় এক সম্মেলন ইংগিত করলেন যে কিছু সরকারী আমলা ও সেনাবাহিনীর সদস্য এই ৬ দফার সাথে জড়িত। তারা ধংসাত্মক পথে পা দিয়েছেন। বস্তুত তার এই বক্তব্য আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ইংগিত স্বরূপ। ১৯৬৭ সালে করাচিতে আইউব খান একই ইংগিত করলেন। ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারী সরকারী প্রেসনোটে উল্লেখ করা হলো ভারতীয় হাই কমিশনের ফাস্ট সেক্রেটারী মিস্টার ওঝার সঙ্গে যোগাযোগে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করা যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল সরকার তার বিরুদ্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বিভাগ থেকে ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদেরকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অন্তর্ভূক্ত করা হলো। মামলার শিরোনাম হলো রাষ্ট্র (পাকিস্তান) বনাম শেখ মুজিবুর রহমান। ১৭ জানুরয়ারী শেখ মুজিবকে মুক্তির কথা জানিয়ে দিয়ে জেল গেইটে বের করে এসে গভীর রাত্রে পুনরায় গ্রেফতার করে ঢাকা সেনা নিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৯৬৮ সনে আওয়ামীলীগের ডাকে শেখ মুজিবসহ সকল বন্দির মুক্তি দাবী করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শেখ মুজিবসহ আগরতলা মামলায় আসামীদের বিচার করার জন্য সেনা নিবাসে বিশেষ আদালত গঠন করা হয়। ইতিমধ্যে ৬ দফা সংবলিত ১১ দফার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এর নেতৃত্বে ছাত্র জনতার আন্দোলন ২৪ জানুয়ারী গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এর নেতৃত্ব ৬ ফেব্রুয়ারী চুড়ান্ত ঘোষণা দেয়া হয়। আগরতলা মামলা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে। ১৭ জানুয়ারী সেনা নিবাসে আগরতলা মামলার আসামীদের উপর সেনা বাহিনী গুলি চালায়, এতে সার্জেন্ট জহুর গুলিতে নিহত হন। সার্জেন্ট ফজলুল হক আহত হন। খবরটি ঢাকায় ছড়িয়ে পরলে প্রচন্ড গণবিস্ফোরণ ঘটে। ঢাকাসহ সারাদেশে প্রজ্জলিত হয়ে উঠে, সারাদেশ থেকে মৃত্যুর খবর আসতে থাকে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচারক এর বাসায় ছাত্র জনতা হামলা চালায়, প্রদেশে এর ১০ জন মন্ত্রির বাসায় আগুন দেয়া হয়। ১৮ তারিখে কারফিউ বলবৎ করা হয়। ছাত্র জনতা কারফিউ ভেঙ্গে রাস্তায় নেমে আসে।
১৯৬৯ এর ২১ ফেব্রুয়ারী আইউব খান বেতার ভাষণে বলেন, তিনি আর প্রেসিডেন্ট পদে দাড়াবেন না। আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করা হলো। ২২ শে ফেব্রুয়ারী বন্ধি শেখ মুজিবসহ সকলকে মুক্তি দেয়া হয়। ২৩ শে ফেব্রুয়ারী মুক্ত মুজিবকে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এর পক্ষ থেকে মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৬৯ সালের ২৬ শে ফেব্রুয়ারী রাওয়ালপিন্ডিতে গোল টেবিল বৈঠক বসে। গোল টেবিল বৈঠকে ৬ দফা আলোচ্য বিষয়। বঙ্গবন্ধুকে ৬ দফার একটি দফা প্রত্যাহার এর জন্য বলা হয়। বঙ্গবন্ধু তা না করে দেন। ফলে আলোচনা ভেঙ্গে যায়। ২৫ শে মার্চ আইউব খানের পতন ঘটে। জেনারেল ইয়াহিয়া ক্ষমতা দখল করেন। ২৮ শে মার্চ ইয়াহিয়া পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট বাতিল করেন।
১৯৭১ এর ৫ অক্টোবর জাতীয় পরিষদ ২২ শে অক্টোবর প্রাদেশিক পরিষদ এর নির্বাচন ঘোষণা করেন। ১লা জানুয়ারী থেকে প্রকাশ্য রাজনীতির অনুমতি দেন। ১৯৭০ এর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। ১৯৭০ এর ৫ ডিসেম্বর মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মৃত্যু বার্ষিকীতে মাজার সংলগ্ন আলোচনা সভায় দাড়িয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, আজ থেকে এই দেশের নাম পূর্ব পাকিস্তান নয়, পূর্ব বাংলাও নয়, এই দেশের নাম বাংলাদেশ। স্বাধীনতার লক্ষ্যে পৌছার জন্য দেশের নাম করণ ও সম্পন্ন করলেন বঙ্গবন্ধু। জাতীয় পরিষদ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু অংশ গ্রহণ করা নিয়ে ইতিমধ্যেই ছাত্রলীগ এর মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়। ইয়াহিয়ার এল.এফ.ও অধিনে নির্বাচনে কি সুফল আসবে তা নিয়ে মতভেদ তৈরী হয়। বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনের অংশগ্রহণ এর বিষয় নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের এক বর্ধিত সভা ১৯৭০ এর জুন মাসে বলাকা বিল্ডিং ছাত্রলীগ এর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
আমি সেই সভায় ভোলা মহকুমা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যোগদান করি। সভায় এক অংশ এল.এফ.ও অধিনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাকে সঠিক হয় নাই বলে বক্তব্য দেই। আর এক পক্ষ সঠিক হয়েছে বলে বক্তব্য প্রদান করেন। সর্বশেষ কোন সিদ্ধান্ত না হওয়াতে সিদ্ধান্ত হয় বঙ্গবন্ধুকেই জিজ্ঞাসা করা হউক কেন তিনি এল. এফ ও অধিনে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেন। এক যোগে সকল ছাত্র নেতারা বঙ্গবন্ধুর ৩২ নং ধানমন্ডির বাসায় মিছিল করে যান। বঙ্গবন্ধু বাসায় পৌছার পর তার দোতলা সিড়ি দিয়ে নেমে আসছিলেন আর গাইতে ছিলেন আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি, কবি গুরুর এই গানটি। এক পর্যায় ছাত্রলীগ ও তৎকালীন প্রচার সম্পাদক শহীদ স্বপন কুমার চৌধুরী বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলেন এই গান কেন গাইলেন। বঙ্গবন্ধু বললেন, তোমরাও আমার সাথে এই গান গাও। এটাই হলো স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। বঙ্গবন্ধুর এই একটি বাক্য সেদিন ছাত্রলীগের নেতাদের জিজ্ঞাসার সকল সমাধান হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু বললেন, নির্বাচনে অংশগ্রহন করছি একটি অথরিটি অর্জন করার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। জনগণের মেন্ডেট নেয়ার জন্য। বঙ্গবন্ধুর সেদিন এর সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে সঠিক হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। জাতীয় পরিষদ এর ১৬৯টি আসন এর মধ্যে আওয়ামীলীগ ১৬৭টি আসন জয়লাভ করে ইতিহাস সৃষ্টি করে। প্রাদেশিক পরিষদ এর সর্বমোট ৩১০টি আসন এর মধ্যে আওয়ামীলীগ ২৮৭টি আসন লাভ করে।
নির্বাচনে ফলাফল পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠির টনক নড়ে ওঠে। ২৬ শে জানুয়ারী ভুট্টো ঢাকায় আসলেন। ২৭ জানুয়ারী হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে মুজিব-ভুট্টো বৈঠকে বসলেন। ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ করলেন ৬ দফার ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার জন্য। বঙ্গবন্ধু বলেন, ছাড় দেয়ার প্রশ্নই আসেনা, কারণ জনগণ ৬ দফার উপর মেন্ডেট দিয়েছে। একটি দফাও প্রত্যাহার করার অধিকার জনগণ কাহাকে দেওয় নাই। ১লা মার্চ ইয়াহিয়া পূর্ব ঘোষিত ৩রা মার্চ জাতীয় সংসদ এর অধিবেশন স্থগিত করেন। এই ঘোষণার পর ঢাকা সহ সারাদেশে ছাত্র জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিক শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। অচল হয়ে পড়ে সারাদেশ। বঙ্গবন্ধু আওয়ামীলীগের নির্দেশে পরিচালিত হয় সারা বাংলাদেশ। কার্যত তখন থেকেই বাংলাদেশের প্রকৃত শাসন ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুর হাতে চলে আসে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জন সভায় চুড়ান্ত সংগ্রামের ঘোষণা দেন। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এই ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতিকে তৈরী করলেন। মহা মুক্তির সংগ্রামে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাত্রিতে বর্বর পাক হানাদার বাহিনী ঝাপিয়ে পড়ে বাঙালি জাতির উপর। তাৎক্ষণিক বঙ্গবন্ধু ওয়ারলেস যোগে ও টেলিগ্রাম এর মাধ্যমে স্বাধীনার ঘোষণা পৌছে দিলেন। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন, একটি পাক হানাদার বাহিনী জীবিত থাকতে ও প্রতিরোধ চালিয়ে হানাদারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সমস্ত জাতিকে আহ্বান জানান।
সেই থেকে ৯ মাসের প্রতিরোধ যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ মুক্ত স্বাধীন জাতি হিসেবে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে। আমাদের জাতির হাজার বছরের আকাঙ্খার প্রতিফল গঠলো। স্বাধীনতা ঘোষণার পর ১০ এপ্রিল নির্বাচিত জন প্রতিনিধিগণ এক সভায় মিলিত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার ঘোষণাকে সমর্থন ও অভিনন্দন জানিয়ে গ্রহণ করেন আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র। এই গণ পরিষদেই বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক নির্বাচিত করা হয়। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দিন আহাম্মেদকে প্রধানমন্ত্রী করে পরিষদ গঠন করা হয়। ১৭ই এপ্রিল শপথ গ্রহণ করে মুজিব নগর সরকার ১০ই জানুয়ারী পাকিস্তানের কারাগার থেকৈ মুক্ত হয়ে স্বাধীন স্বদেশে ফিরে এলেন বাঙালি জাতির মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। যুদ্ধ বিধস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার মানসে পুনঃঠগন কাজ সমাপ্ত করে বঙ্গবন্ধু যখন দৃঢ় পায়ে অগ্রগতির পথে জাতিকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক সেই মূহুর্তে বাংলার স্বাধীনতার শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। সৌভাগ্যক্রমে সেদিন দেশের বাইরে অবস্থান করার কারণে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রেী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর উচ্চাবিলাসী সামরিক চক্র বাংলার স্বাধীনতা ও স্বকিয়তাকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে। ঠিক সেই এক কঠিন সময়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তণ এর মধ্য দিয়ে দরের নেতা-কর্মী বাহিনীর সকল ভয়ভীতি যেন এক নিমেশেই উড়ে গেল। জেগে উঠলো দলের নেতা-কর্মীরা।
জিয়ার পতন, এরশাদের স্বৈরশাসন, বিরোধী আন্দোলন, ৯০ এর গণ আন্দোলন, এরশাদের পতনের মধ্য দিয়ে নতুন বিজয় সুচিত হলো। এই বিজয় হোচট খেলো খুনি জিয়া, বিএনপির চক্রান্তের কাছে। পরবর্তীতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবীতে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারী-মার্চের গণ আন্দোলন, অসহযোগ, জনতার মঞ্চকে ঘিরে গণঅভূত্থান এবং খালেদা জিয়ার পদত্যাগ জাতির ইতিহাসের মোড় ঘুড়িয়ে দেয়।
অবশেষে ১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে বিজয় লাভ করে ঐক্যমতের সরকার গঠন করে। জননেত্রী শেখ হাসিনার ৫ বছর আমলে এক সম্ভাবনার দেশ হিসাবে বাংলাদেশ অর্জন করেছিল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। দেশের সামনে উল্লেখিত হলো অপার সম্ভাবনার এক স্বর্নদুয়ার, অনেক বাঁধা বিগ্রহ অতিক্রম করতে হয় রাষ্ট্র পরিচালনা করতে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। মাঝ পথে পুরানো ষড়যন্ত্র চক্রান্ত এর কারণে ২০০১ এ বিপত্তি ঘটে আওয়ামীলীগের। ২০০১ এর পর দেশ যখন দুর্বৃত্ত কবলিত হয় এবং বিএনপি-জামায়াত জোটের ৫ বছরের দুঃশাসন এর ফলে জাতির সম্ভাবনার অপমৃত্যু ঘটে, তখন আবার জাতির বোধদয় হয়, পুনরায় দ্বিতীয় বারের মত জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে ২০০৮ এর ২৯ শে ডিসেম্বর একটি অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠ নির্বাচনে এর মাধ্যমে মহাজোট সরকার ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করে।
পুনরায় মেয়াদ শেষে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির-জামায়াত জোট সরকার ব্যার্থ চেষ্টা চালায় নির্বাচন বানচাল করার জন্য। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণের ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন এর মাধ্যমে পুনরায় সরকার গঠন করে। ২০১৯ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর তৃতীয় মেয়াদ এর জন্য নির্বাচনে জয়লাভ করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকার এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়ন এর মহিসোফানের দিকে। ২০২০ সালে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী পালন এর মধ্য দিয়ে জাতী এগিয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০২০-২১ মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার মাধ্যমে। ইতিমধ্যে অনেক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে। এর মধ্যে দিয়েই আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠার ৭১ বছর পালন করছে।

লেখক : ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা
সভাপতি
ভোলা জেলা আওয়ামীলীগ।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।