জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-২২

ড. তাইবুন নাহার রশিদ (কবিরত্ন),

(গত সংখ্যার পর), অব্যক্ত বেদনা :

এ পথ দিয়ে কত লোক যায় তার কি আসিতে নাই,

এ পথে কি কেউ কাটা ফেলিয়াছে, সে আসিবে বলে তাই ?

কবি জসীম উদ্দিনের নকশীকাঁথার মাঠের দু’লাইন কবিতা কেন যেন আজ বার বার মনে পড়ে। স্মরণ করিয়ে দেয় আমার বুকে নিভৃতে নির্জনে মনের গুহায় এক করুন বেদনাময় আকুতির কথা। গুমরে গুমরে কত স্মৃতি, কত প্রীতি, কত কথার কাকলী ঝরে পড়ে, সেই একটি কোমল মসৃন পেলব-সুকোমল বালিকার জন্য। আজও আমি মনের অজান্তে কখন কখন আমার আঠারো নম্বর ধানমন্ডির বাড়ীটার লাল কাঁকর বিছানো পথের লাল গেটটার কাছে সেই গোধূলি লগ্নে শাড়ি পড়ে কত লোক যায়< ভাল-মন্দ, যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী, বালিকা অজানিত মানুষের মধ্যে যেন আমি আর আজ কুসুমকে দেখি না। দেখতে পাই না।

সেই সকালে দেখতাম কুসুম নূপুর পায়ে সাদা পোষাক গায়ে আজানু লম্বিত বেনী দুলিয়ে খুশি খুশি মুখে মেডিকেল কলেজের বাসে যাবার জন্য তৈরী হয়ে বাসস্ট্যান্ডে দাড়িয়ে থাকত। আবার গোধূলী লগ্নে সে ফিরে আসত। সযন্তে আচড়ানো চুলগুলি, এলোমেলো মুখখানি ক্লান্ত শ্রান্ত, চঞ্চল চপল অস্থির পায়ে গুটি গুটি করে হেটে যেত। আমি আমার বারান্দায় বসে ওর চলাল গতি অবলোকন করতাম।

আমার বাড়ীর সামনে দিয়ে অধিকাংশ লোকের চলার পথ ছিল। বারান্দায় চেয়ারে বসে বই পড়তাম, মাঝে মাঝে ক্লান্তি এসে গেলে দুরে অনেক দূরে সীমাহীন আকাশের পাানে চেয়ে উদাস মেঘের ঢেউ গুনতাম। কত মেঘ অসীশ আকাশে দল বেধে কবি কালিদাসের যক্ষ্মপুরিতে অলক্ষ্যে ভেসে ভেসে যায়। আমি তাদের দিকে অপলক নেত্রে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি আর ভাবি- এ পৃথিবীর কিছুই চিরঞ্জীব নয়। সব চলে যায়, কোন কবির যেন কবিতার দু’টি কথা মনে পড়ল-

এক আসে এক যায় কারো নাহি স্থিতি,

পাছে শুধু রেখে যায় মর্মভেদি স্মৃতি।

এই ধানমন্ডির ১৮ নম্বর এলাকায় আমার সকলের সাথে বেশ আলাপ পরিচয় ছিল। সকলে সকলের সুখ-দুঃখের সাথী। সকলেই সকলের বাড়ীর হাড়ির খোজ খবর রাখে। প্রত্যেকে প্রত্যেকের শুভাকাঙ্খি। একে অপরের বাড়ী আসা যাওয়া করে।

“কুসুম” এ পাড়ার ডাক্তার নাসিম খানের মেয়ে। “কুসুমরা” দুই বোন, দুই ভাই। কুসুমের ছোট বোন নিঝুম। ভাই অজয়, বিজয়। সুখী পরিবার তাদের। মিস্টার নাসিম খান খুবই ভদ্র অমায়িক বিনয়ী, নম্র স্বভাবের লোক। প্রতিষ্ঠিত নামকরা বিদেশী ডিগ্রীধারী ডাক্তার। তার স্ত্রী মিসেস নাসিম খান অতি বিনয়ী লাজুক, ধীর-স্থির, শান্ত সমাহিত আদর্শ সৃগৃহিনী।

 

(চলবে—————–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।