মানছেন না সরকারী নিষেধ, গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া

ভোলায় ঈদ সামনে রেখে নানান কৌশল অবলম্বন করে প্রবেশ করছে মানুষ

ট্রলারে পারাপার হচ্ছে মানুষ। ছবি ভোলার বাণী

দেশে ঈদের সময় এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াতের ওপর সরকারি বিধিনিষেধ থাকলেও অনেকেই তা উপেক্ষা করছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

বাস- লঞ্চ না চললেও, বিভিন্নভাবে যানবাহন জোগাড় করে অনেক মানুষই ঢাকা থেকে অন্য জেলায় যাচ্ছেন। আর দ্বীপ জেলা ভোলায় রাতের আঁধারে জেলে নৌকা ও ট্রলার দিয়ে জেলায় প্রবেশ করছে শতশত মানুষ।

পুলিশ বলছে তারা এরই মধ্যে অনেক গাড়ি এবং অনেক মানুষকে ফেরত পাঠাচ্ছে, কিন্তু তবুও প্রবণতা পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছেনা।
দেশে চলমান সাধারণ ছুটি বাড়ানের কথা জানিয়ে গত সপ্তাহে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যেই প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল, সেখানে বলা হয়েছিল যে ছুটির মধ্যে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় চলাচলের বিষয়টিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে।

প্রতি বছরের মত ঈদের আগে মানুষের বাড়ির দিকে ছুটে যাওয়াকে নিরুৎসাহিত করতেই নেয়া হয়েছিল ঐ সিদ্ধান্ত। কিন্তু প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও ঈদকে সামনে রেখে মানুষের ঘরমুখী যাত্রা কিন্তু থেমে নেই। এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যাওয়ার জন্য কোনো ধরণের গণপরিবহণ না থাকলেও কোনো না কোনো উপায়ে ঠিকই পরিবারের কাছে ফিরছে মানুষ। কেউ কেউ কয়েকগুণ বেশি টাকা খরচ করে ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি ভাড়া করছেন, কেউ আবার স্থানীয় নানা পরিবহণ ব্যবস্থার সাহায্য ফিরছেন পরিবারের কাছে।

রবিবার ঢাকা সাভার থেকে বরিশাল হয়ে ভোলার লালমোহনে যাওয়া মফিজুল ইসলাম জানান পুরো রাস্তায় সিএনজি, লেগুনাসহ কয়েক ধরণের পরিবহণ ব্যবহার করতে হয় তার। আর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ এড়াতে অবলম্বন করা হতো বিভিন্ন ধরণের পদ্ধতি।

“ছোট সিএনজি, লেগুনা করে ফেরিঘাট পর্যন্ত গিয়ে ফেরি পার হয়ে টেম্পু আর প্রাইভেট গাড়ি শেয়ারে ভাড়া করে ভোলা পর্যন্ত এসেছি। রাস্তায় পুলিশের চেকপোস্টের আগে যাত্রীদের নামিয়ে দিতো আর গাড়িটা খালি অবস্থায় চেকপোস্ট পার হতো বলে জানান তিনি।

প্রতিবছর ঈদের মৌসুমে যেই পরিমাণ মানুষ বাড়ির দিকে যাত্রা করে, এবার সেই তুলনায় মানুষের সংখ্যা অনেক কম হলেও সেই চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ।

চট্টগ্রামের অলঙ্কার থেকে ভোলার পশ্চিম ইলিশায় আসা রুবেল হোসেন জানান, তিনি বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের অলঙ্কার থেকে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে তারা ১৩ জন লক্ষ্মীপুর মজুচৌধুরির ঘাটে এসে পৌঁছান। তবে ঘাটে প্রশাসনের বাঁধা থাকায় শুক্রবার রাত সাড়ে দশটার দিকে মজুচৌধুরির ঘাট থেকে মোটরসাইকেল যোগে মতিরহাট পর্যন্ত আসে একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে। পরে রাত সাড়ে বারোটার দিকে দালাল চক্রের কয়েকজন সদস্য জেলেদের ছোট্ট ডিঙি নৌকায় তাদেরকে উঠিয়ে দিলে নৌকাটি রাত তিনটার দিকে ভোলার জোর খাল নামক জায়গায় তাদেরকে নামিয়ে দেয়। এবং জনপ্রতি নৌকা ভাড়া দিয়েছিলেন ১৫’শো টাকা করে।

সিলেট থেকে ভোলার উকিল পাড়ায় আসা রাব্বি নামে এক হকার জানান, ট্রাক সিএনজি ও লেগুনা করে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত আসে সে। পরে রাতে মতিরহাট সংলগ্ন থেকে একটি ট্রলারে করে রাব্বিসহ প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন ভোলায় এসে পৌঁছান।

সদর থানার ওসি এনায়েত হোসেন জানান প্রতিদিন তারা বহু গাড়ি আটক করছে এবং ফেরত পাঠাচ্ছে, কিন্তু তবুও মানুষকে ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা যাচ্ছে না। পুলিশসহ পুরো প্রশাসন ভোলায় প্রবেশের বিষয়ে খুবই তৎপর রয়েছে বলেও জানান তিনি।

ঈদের আগে বাড়ির দিকে যাওয়া এই মানুষগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশাসনের কাছে নির্দেশনা দেয়া আছে, যে কেউ এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় গেলে তারা যেন হোম কোয়ারেন্টিন করে, তা যেন নিশ্চিত করা হয়।

বিশেষ করে ঢাকা বা হটস্পটগুলো থেকে মানুষ অন্য এলাকায় গেলে পুলিশ সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছে বলে জানান প্রশাসন।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।