ভোলার সড়কে অবৈধ যানবাহনে অদক্ষ ড্রাইভার ॥ ঘটছে দূর্ঘটনা

ভোলা সদর উপজেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নতুন বাজার, ভোলা-লক্ষ্মীপুর সড়ক। ভোলা থেকে ফেরি যোগে ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ দেশের উত্তর পশ্চিম অঞ্চলের ১৫টি জেলাতে বাস, ট্রাক যাতায়াতের একমাত্র রুট হওয়ায় এই সড়কে সব সময় যান চলাচলের ব্যস্ততা লেগেই থাকে। এছাড়া প্রতিদিন কয়েক শত লাইসেন্স বিহিন বোরাক, অটো রিক্সা, আলফা, ট্রলি, নসিমন চলাচল করে এই সড়কে আর এই লাইসেন্স বিহিন ড্রাইভাররা রয়েছেন অদক্ষ এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা। এই ব্যস্ততার পালে নতুন করে হাওয়া দিয়েছে ভোলা-ঢাকা দিবা কালীন জাহাজ সার্ভিস গ্রীন লাইন ও এ্যাডভেঞ্চার।
সড়কের ব্যস্ততা বাড়ার সাথে সাথে নানা অব্যবস্থাপনার কারনে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু। এই সড়কে চলাচল করা বেশিরভাগ বোরাক, অটো রিক্সা, আলফা চালকদের নেই কোন প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় দক্ষতা। এক সময়ের মুদি দোকানি, রিক্সা চালক, দিনমজুর একটু বেশি আয়ের আশায় কোন প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই চালাচ্ছেন এ সকল যান। বেশিরভাগ মাহেন্দ্র, আলফার নেই সড়কে চলাচলের প্রয়োজনীয় ফিটনেস। ঘসা মাজা ইঞ্জিল ও পুরাতন বডিতে নতুন রং এর প্রলেপ দিয়ে দেদারসে চলাচল করছে সড়কে। এই সকল যাত্রীবাহী গাড়িগুলো প্রথমে দুই এক জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা আরম্ভ করে। পথিমধ্যে তারা অন্য গাড়ির সাথে অঘোষিত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। কারন যাত্রা পথে যে গাড়ি এগিয়ে থাকবে, যাত্রী পাওয়ার সম্ভাবনা তার বেশি। চলার পথে কোন যাত্রী ইশারা দিলে এই গাড়িগুলো কড়া ব্রেক দিয়ে দাড়িয়ে পরে। পিছনে যে কোন হাই স্পীড বাস ট্রাক থাকতে পারে-সে সম্পর্কে চালকদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। এতে প্রায়ই ঘটে মারাত্মক দুর্ঘটনা আর এ সকল বিষয় জেনেও ভোলার প্রশাসন এই লাইসেন্স বিহিন যানবাহন এবং অদক্ষ ড্রাইভারদের বিরুদ্ধে নিচ্ছেন না কোন ব্যবস্থা।
ইলিশা সুদের হাট থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত এই দুই কিলোমিটার সড়কের অব্যবস্থাপনা আরো প্রকট। এক পাশে ফেরি পারাপারের জন্য অপেক্ষমাণ বাস, ট্রাক, কার্গের দীর্ঘ লাইন, আরেক পাশ দিয়ে চরম ঝুকি নিয়ে চলাচল করছে বোরাক, অটো রিক্সা, মাহেন্দ্র। বিপরীত দিক থেকে ফেরি পার হয়ে আসা কোন বাস বা ট্রাক আসলে সৃষ্টি হয় তীব্র যানযট। একটা গাড়ি আরেকটা গাড়িকে সাইড দিতে গিয়ে প্রায়ই শিকার হচ্ছে দুর্ঘটনার।
গত ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ইং তারিখে মৌলভীর হাট হোসাইনিয়া ডিগ্রি মডেল মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণীর ছাত্র মোঃ হাবিব জংশন বাজার সংলগ্ন সড়কে বোরাকের সাথে মারাত্মকভাবে আহত হয়। পরে তাকে প্রথমে ভোলা সদর হাসপাতালে পরবর্তীতে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। একই মাসে ইলিশা ব্যারিস্টার কাচারী নামক জায়গায় বোরাকের সাথে ধাক্কা খেয়ে ঘটনাস্থলেই ৮ বছরের শিশু কন্যার মৃত্যু হয়।
এর কয়েক দিন পরেই ইলিশা ফেরি অফিসের সামনে বোরাকের সাথে ধাক্কা খেয়ে রাস্তার পাশে পড়ে গিয়ে পা ভেঙ্গে যায় ইলিশা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার্দী মাষ্টার এখনো তিনি চিকিৎসাধীন। গত ১১ মার্চ, ২০২০ ইং তারিখে বেলা ১২ ঘটিকার সময়ে ইলিশা বাজার সংলগ্ন শিকদার বাড়ির মসজিদের সামনে ট্রলির সাথে মটর সাইকেলের মারাতœক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই সোহাগ নামের এক যুবকের মৃত্যু হয় একই জায়গায় গত বছর টমটমের ধাক্কায় কাশেম নামে এক যুবক আহত হলে প্রথমে ভোলা পরে বরিশাল এর পর ঢাকা নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
সাবেক বানিজ্য মন্ত্রী ভোলা সদর আসনের সাংসদ তোফায়েল আহমেদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সম্প্রতি একনেকের সভায় ভোলার ইলিশা থেকে চরফ্যাশন পর্যন্ত সড়ককে চার লেনে উন্নীত করার জন্য প্রায় ১০০০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পাস হওয়ায় এই এলাকার লোকজনের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। সড়ক প্রশস্থ হলে দুর্ঘটনাও কমবে বলে তাদের প্রত্যাশা। এখন তাদের দাবি প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন।
ভোলার সাথে বাইরের জেলা থেকে যোগাযোগের অন্যতম প্রবেশদ্বার এই নতুন বাজার ভোলা লক্ষ্মীপুর সড়ক। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবে বেড়ে চলা এই দুর্ঘটনা ও মৃত্যুকে কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না। বোরাক, অটো রিক্সা, আলফা চালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ; ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন অপসারণ; ফেরি পারাপারের জন্য অপেক্ষমাণ ট্রাকের জন্য ট্রাক স্ট্যান্ড নির্মাণ; গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে প্রয়োজনীয় ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন; বাজার, স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজের সামনে প্রয়োজনীয় আইল্যান্ড ও জেব্রা ক্রসিং নির্মাণসহ প্রশাসনের সদিচ্ছার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই সড়কের দুর্ঘটনা অনেকংশে হ্রাস করা সম্ভব বলে মনে করেন ভোলার সচেতন মানুষ।
এই বিষয়ে ভোলার সচেতন নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম বলেন, ভোলার সড়কে এই অবৈধ যানবাহনের কারনে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা ঘটছে, অনেকে পঙ্গু হয়েছে কেউ আবার মৃত্যুবরণ করেছে ভোলার প্রশাসন দ্রুত এই অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সড়কে এই অবৈধ যানবাহন আরো বাড়বে।
ভোলার ট্রাফিক পুলিশের টিআই কে এম রহমান বলেন, অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।