‘খালেদা জিয়ার শারীরিক পঙ্গুত্ব হতে পারে যেকোনো সময়’

বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ বলে জানিয়েছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নেতারা। খালেদা জিয়ার পছন্দমতো হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ না দিলে চিকিৎসক সমাজ চুপ থাকবে না বলেও হুঁশিয়ার করেন তারা।

আজ বুধবার দুপুরে ড্যাব ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা জানান চিকিৎসক নেতারা।

তারা জানান, বেগম খালেদা জিয়া এত অসুস্থ যে তিনি কারও সাহায্য ছাড়া চলাফেরা, খাওয়া দাওয়া এমনকি শরীরের তীব্র ব্যথার কারণে ভালোভাবে ঘুমাতে পারেন না। যেকোনো সময় তার শারীরিক পঙ্গুত্ব হয়ে যেতে পারে। তিনি সুচিকিৎসা পেলে এই অবস্থা হতো না।

ড্যাব ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম বলেন, ‘আমরা আশা করি মাননীয় আদালত তাকে তার প্রাপ্য জামিন দিয়ে মুক্ত পরিবেশে তার পছন্দমত হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দেবে। অন্যথায় আপামর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’

ডা. শামীম লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আগামীকাল ৫ ডিসেম্বর আদালত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষের কাছে বিএনপি চেয়ারপাসনের মেডিকেল রিপোর্ট তলব করেছে।’

তিনি বলেন, ‘১/১১ সরকার কর্তৃক দায়েরকৃত একটি ভিত্তিহীন মামলায় আদালতের রায়ে বর্তমানে তিনি কারাবন্দী আছেন। একইসময়ে একই রকম মামলা যা ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীদের নামেও ছিল তা প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং অন্যরাও অধিকাংশ জামিনে আছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে বেগম খালেদা জিয়া তার স্বাভাবিক আইনগত অধিকার থেকেও বঞ্চিত।’

এই চিকিৎসক নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে জানান, বেগম জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হাইলি অ্যাক্টিভ ডিফরমিং, রেমাটয়েড আরথ্রাইটিস, ডায়েবেটিস , হাইপারটেনসনসহ বেশ কয়েকটি রোগে ভুগছেন। তিনি জেলখানায় সঠিক চিকিৎসা এবং স্বাভাবিক পরিবেশ না পাওয়ায় রোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিয়েছে। জটিলতার কারণে তার হাত এবং পায়ের ছোট ছোট জয়েন্টগুলোসহ শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট ফুলে গেছে এবং তাতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। যার কারণে জয়েন্টগুলি শক্ত এবং বাঁকা হতে চলেছে যা কিনা অচিরেই স্থায়ী রুপ ধারণ করতে পারে।

ডা. শামীম বলেন, ‘গত সোমবার ডাক্তাররা বেগম খালেদা জিয়ার ওজন মাপতে বারবার চেষ্টা করেছে,ন কিন্তু তীব্র ব্যথায় তিনি বিছানা থেকে নামতে পারেননি। ভয়ংকর ব্যাপার হলো ওনার ডান পায়ে একটি গুটি উঠেছে যা স্পর্শ করা মাত্রই তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। যেটি পরবর্তীতে আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।’

ড্যাবের এই নেতা বলেন, ‘১৯৯৯ সাল থেকে বেগম জিয়া একটি ওষুধ রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিসের জন্য খাচ্ছেন যা কিনা লিভার, কিডনিসহ রক্তের সকল কোষ সমূহ কমিয়ে দিয়ে প্যানসিটোপেনিয়া নামক ভয়ংকর এক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া ম্যাডামের ডায়াবেটিস কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কারণ একটা ছোট বদ্ধ ঘরে এত দিন হাঁটাচলার সুযোগ পাননি। তার চোখ শুকিয়ে যায় তাই দিনে কিছুক্ষণ পরপর আর্টিফিসিয়াল টিয়ার দিতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নেমে নিজ পায়ে হেটে জেলখানায় প্রবেশ করেন, নিজে হেঁটে দোতলায় তার নির্ধারিত রুমে যান, এমনকি জেলখানা থেকে এর আগের বার যখন বিএসএমএমইউতে আসেন তখন গাড়ি থেকে নেমে নিজে লিফট পর্যন্ত হেঁটে যান। সময়ের পরিক্রমায় তিনি কীভাবে আজকের অবস্থায় উপনীত হলেন আপনাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে সঠিক চিকিৎসার অভাবে তিনি ধীরে ধীরে এই অবস্থায় উপনীত হয়েছেন। তিনি সুচিকিৎসা পেলে এই অবস্থা হতো না।’

ডা. শামীম আরও বলেন, ‘আমরা জানি যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর সংজ্ঞা অনুযায়ী স্বাস্থ্য মানে হলো- কোনো ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্নিক প্রশান্তি। কিন্তু উপরোক্ত তিনটি উপাদানের কোনো একটিও বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে প্রতিপালিত হচ্ছে না।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা তাইফুল ইসলাম টিপু, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, ড্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি ডা. মো. আবদুস সেলিম, ড্যাব ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ডা. মাসুম বিল্লাহ, ডা. গালিব প্রমুখ।
সূত্র আমাদের সময়

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।