মেসির গোলে ব্রাজিলের পরাজয়

সর্বশেষ কোপা আমেরিকায় চির প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের কাছে হেরেই সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচের প্রতিশোধ নেয়ার মিশনে সৌদি আরবের কিং সৌদ ইউনিভারসিটি স্টেডিয়ামে ব্রাজিলের মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। আর শেষ পর্যন্ত যোগ্য জবাব দিয়েও দিয়েছে আর্জেন্টিনা।

আনদ্রাদা, মেসিরা (১-০) পরাজিত করেছেন তিতের শিষ্যদের।

ম্যাচের নয় মিনিটের মাথায় এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় ব্রাজিল। পেনাল্টি থেকে দলকে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব পান গ্যাব্রিয়েল জেসুস। কিন্তু গোল পোস্টের বাইরে শট করে বসেন তিনি। দারুণ সুযোগ হাত ছাড়ার যন্ত্রণায় পুড়তে হয় ব্রাজিল ভক্তদের।

তিন মিনিট পর আর্জেন্টিনার সামনেও আসে একই সুযোগ। জেসুসের মতো পেনাল্টি থেকে গোল করার দায়িত্ব পড়ে মেসির কাঁধে। মেসির নেয়া সেই শট ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন ব্রাজিল গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার। কিন্তু ফিরতি শটে দলকে এগিয়ে দেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।

এতে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধের বাকি সময় দুই দলের কেউই কারো জালে বল জড়াতে পারেনি।

বিরতির পর জোড়া বদল আনেন তিতে। পাকুয়েতার বদলি হিসেবে নামেন কুতিনহো আর আর্থার মেলোর বদলি হিসেবে নামেন ফ্যাবিনহো। ৫৫ মিনিটের মাথায় আর্জেন্টিনার ডি-বক্সের বাইরে ফ্রি-কিক পায় ব্রাজিল। কুতিনহোর জোড়ালো শট আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডে বাধা পেয়ে ফিরে আসে। ৫৯ মিনিটে লো সেলসোর বদলি হিসেবে আর্জেন্টিনার হয়ে মাঠে নামেন মার্কোস অ্যাকুনা। ৬৫ মিনিটের মাথায় ডি-বক্সের বাইরে মেসিকে আবারও ফেলে দেওয়া হলে ফ্রি-কিক পায় আর্জেন্টিনা। বার্সা তারকার বাঁ-পায়ের জোরালো আর বাঁকানো শট লাফিলে উঠে কর্নারের মাধ্যমে ক্লিয়ার করেন আলিসন।

৬৯ মিনিটের মাথায় জেসুসের জোরালো শট রুখে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক। ফিরতি আক্রমণে মেসি বল নিয়ে ব্রাজিলের ডি-বক্সে যাওয়ার আগ মুহূর্তে থিয়াগো সিলভা বাধা দেন। রেফারি ফ্রি-কিকের বাঁশি বাজান। মেসির নেওয়া এই শট আটকে দিতে আলিসনের কোনো বেগ পেতে হয়নি। ৭১ মিনিটে উইলিয়ানের বদলি হিসেবে মাঠে আসেন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে অভিষেকের ৯৩ সেকেন্ডে গোল করে আলোচনায় উঠে আসা ১৯ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড রদ্রিগো। জেসুসের বদলি হিসেবে মাঠে আসেন রিচার্লিসন। আর ওকাম্পোসের বদলি হিসেবে আর্জেন্টিনার জার্সিতে মাঠে নামেন নিকোলাস গঞ্জালেস। ৭৫ মিনিটের মাথায় পারেদেসের দূরপাল্লার বুলেট গতির শট দারুণভাবে রুখে দেন ব্রাজিল গোলরক্ষক।

ছোটো ছোটো পাসে এগিয়ে যাওয়া ব্রাজিল ফিনিশিংয়ের অভাবে স্কোর আদায় করে নিতে পারেনি। ৮০ মিনিটে প্রতি-আক্রমণে ব্রাজিলের রক্ষণদূর্গকে ভয় পাইয়ে দেন মেসি-মার্টিনেজ-গঞ্জালেসরা। আন-মার্কে থাকা অ্যাকুনার জোরালো শট ব্রাজিলের গোলবারের উপর দিয়ে চলে গেলে নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্ট হয় আর্জেন্টিনার। পরের মিনিটে মার্টিনেজের শট থিয়াগো সিলভার গায়ে লেগে দিক না বদলালে ব্যবধান দ্বিগুণ করতো আর্জেন্টিনা। ৮৪ মিনিটে পারেদেসের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন গুইদো রদ্রিগেজ। একই মিনিটে মেসির দুর্দান্ত ডিফেন্স চেঁড়া পাসে মাথা লাগাতে পারলেও আরেকটি গোলের দেখা পেতে পারতো আর্জেন্টিনা। ম্যাচের বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হলে মেসির একমাত্র গোলে (১-০) জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা।

সর্বশেষ ৬ ম্যাচের একটিতেও হারেনি আর্জেন্টিনা। জিতেছে ৪টিতে, ড্র করেছে বাকি দুটিতে। কোপার পর চিলির বিপক্ষে ০-০ গোলে ড্র করা দলটি মেসিকে ছাড়া মেক্সিকোকে ৪-০ গোলে হারিয়েছে। জার্মানির বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও ২-২ গোলে ড্র করেছে। আর ইকুয়েডরকে ৬-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে। মেসিকে ছাড়া খেলা ৪ ম্যাচে ১২ গোল করেছে আর্জেন্টিনা, হজম করেছে মাত্র তিনটি গোল। এবার মেসিকে নিয়ে নিজেদের গোলসংখ্যা বাড়িয়ে নিয়েছে স্কালোনির শিষ্যরা।

এদিকে, কোপা আমেরিকার শিরোপা জেতার পর থেকেই ব্রাজিলের দূর্গে কোনো জয় নেই। শেষ ৫ ম্যাচে জয়হীন তিতের শিষ্যরা। যেই পেরুকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল সেই পেরুর বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরেছে ব্রাজিল। তার আগে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র করে সেলেসাওরা। সেনেগাল আর নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ১-১ গোলের ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে তিতের শিষ্যরা।

আরও একটি করে প্রীতি ম্যাচ খেলবে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল। ১৯ নভেম্বর ইসরায়েলের ব্লুমফিল্ড স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ১টায় উরুগুয়ের বিপক্ষে মাঠে নামার কথা আর্জেন্টিনার। আর একই দিন আবুধাবির মোহাম্মদ বিন জায়েদ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হবে ব্রাজিল।

ব্রাজিল একাদশ: অ্যালিসন বেকার, দানিলো, এডের মিলিটাও, থিয়াগো সিলভা, অ্যালেক্স সান্দ্রো, আর্থুর মেলো, ক্যাসেমিরো, লুকাস পাকুইতা, গ্যাব্রিয়েল হেসুস, রবার্তো ফিরমিনো এবং উইলিয়ান।

আর্জেন্টিনা একাদশ: এস্তেবান আনদ্রাদা, হুয়ান ফয়েথ, গ্যাব্রিয়েল পিজেল্লা, নিকলাস ওটামেন্ডি, নিকলাস তালিয়াফিকো, রদ্রিগো ডি পল, লুকা ওকাম্পোস, লিওনেল পারেদেস, জিওভানি লো সেলসো, লুকা মার্টিনেস ও লিওনেল মেসি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।