সর্বশেষঃ

চরের মানুষের জীবন : পর্ব-২

বিচ্ছিন্ন চর কচুয়ায় নেই কোনো সড়ক, বর্ষায় বাড়ে দুর্ভোগ

চরের মানুষের জীবন : পর্ব-২

জাহিদ দুলাল ॥ ভোলার লালমোহন উপজেলার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এলাকা চর কচুয়াখালী। প্রায় ৯০ বছর আগে চরটি জেঁগে উঠে তেঁতুলিয়া নদীর বুকে। প্রথম দিকে চরে টং বানিয়ে সেখানে থেকে মানুষজন কেবল চাষাবাদ করতেন। তবে ধীরে ধীরে কচুয়াখালীতে শুরু হয় বসতি। প্রায় ৫০ বছর ধরে তেঁতুলিয়া নদীর বুকের এই চরটিতে মানুষের বসতি। বর্তমানে চরটিতে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষের বসবাস। এসব মানুষ নানা দুর্ভোগ সঙ্গী করেই দিন পার করছেন।
যার মধ্যে রয়েছে চরটিতে চলাচলের সড়ক। প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল চর কচুয়াখালীতে সড়কের সংখ্যা। যার জন্য প্রয়োজনীয় কাজ সারতে চরবাসীকে হাঁটতে হয় চরের ক্ষেতের আইলে-আইলে। গ্রীষ্মের সময়ে কোনো রকমে চরে হাঁটা-চলা করতে পারলেও দুর্ভোগ বাড়ে বর্ষায়। কখনো কোমড়, কখনো হাঁটু পরিমাণ কাঁদা পানির মধ্য দিয়ে বছরের পর বছর চলতে হচ্ছে এই চরের বাসিন্দাদের। কাঁচা সড়কই যেখানে নেই, সেখানে পাকা সড়ক যেন চরবাসীর কাছে স্বপ্ন। জনপ্রতিনিধি বদলায়, তবে এই চরবাসীর ভাগ্য তেমন বদলায় না। তারা থাকেন তাদের দুর্ভোগকে সঙ্গী করে।


চর কচুয়াখালীর বাসিন্দা মো. তরিকুল ইসলাম, আবু তাহের ও শাহে আলম জানান, ৩০ বছর হলো আমরা এই চরে এসেছি। সরকার আসে, সরকার যায়; কিন্তু আমাদের চরের মানুষের তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না। তবে আরো বেশ কয়েক বছর আগে প্রায় ১ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক নির্মাণ করা হয়। যা চরের মানুষের চলাচলের ক্ষেত্রে তেমন কিছুই না। ওই এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের পর চরে আর কোনো সড়ক নির্মাণ হয়নি। আগে নির্মাণ করা ওই এক কিলোমিটার সড়কও আর সংস্কার করা হয়নি। এ জন্য তা এখন মিশে গেছে বিলের সঙ্গে। সড়ক থাকুক বা না থাকুক, মানুষের তো প্রয়োজন সারতে হয়। তাই চাষাবাদের ক্ষেতের ছোট ছোট আইল দিয়ে হেঁটে প্রয়োজন সারছেন এখানের বাসিন্দারা। তাই আমাদের দাবি; সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চরের মানুষের চলাচলের সুবির্ধাথে এখানে যেন আরো বেশ কয়েকটি সড়ক নির্মাণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাহলে চরবাসীর দুঃখ অনেকাংশে লাঘব হতো।
চরের চাষি মো. আকতার, মো. সুমন ও মো. হাচনাইন বলেন, চরে প্রতি বছরই বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিমাণ কৃষি চাষাবাদ হচ্ছে। সড়ক না থাকায় মাঠ থেকে ফলন তুলে ট্রলারে উঠাতে খুবই কষ্ট হয়। পাশাপাশি বাড়তি ব্যয় হচ্ছে শ্রমিক খরচ। এই সড়কের অভাবে সময় ও অর্থ দুটোই অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। সড়ক না থাকায় এখানে কোনো গাড়ি চলছে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই চরে কয়েকটি সড়ক নির্মাণ করলে এখানের কৃষক ও বাসিন্দাদের জন্য খুবই ভালো হবে।


এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, ওই চরটি লালমোহন উপজেলার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। আমি সরেজমিনে চরটি পরিদর্শন করেছি। সেখানের সড়ক ব্যবস্থা খুবই নাজুক। সড়কের অভাবে ওই চরের মানুষজন প্রতিনিয়ত ব্যাপক কষ্ট করে চলাচল করছেন। যার জন্য হাঁটা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই চরটিতে। চর কচুয়াখালীর বাসিন্দাদের এ দুর্ভোগ লাঘবের জন্য সেখানে কয়েকটি সড়ক স্থাপনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।