সর্বশেষঃ

ভোলার রাজাপুরের অধিকাংশ ঘটনার কুশীলব হেলাল মেম্বার, মানববন্ধনে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার: ভোলার রাজাপুর ইউনিয়নে ঘটে যাওয়া অধিকাংশ মামলা, হামলা সহ সকল ধরনের হত্যার ঘটনার নেপথ্যেই রয়েছেন ইউনিয়নটির ৯নং ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি হেলাল মেম্বার। গেলো ২৭ মার্চ ওই ইউনিয়নে ঘটে যাওয়া আলোচিত তারেক মাহমুদ বাবু হত্যার ঘটনায় প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে রাজাপুর ইউনিয়নের ক্লোজার বাজারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে ভুক্তভোগীরা এমনটি অভিযোগ করেন।

এমনকি ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় একাধিক নিরীহ ব্যক্তিকে আসামি করে দিনের পর দিন তাদেরকে জেল খাটানো হয়েছে। সম্প্রতি এই মামলার প্রধান আসামী সিফাতকে গ্রেপ্তারের পর তার জবানবন্দিতে চাঞ্চল্যকর একাধিক তথ্য বেরিয়ে আসতেই মামলার মোড় অন্যদিকে ঘুরতে শুরু করেছে। তাতে করে এই মামলায় জড়ানো নিরীহ ব্যক্তিরা অব্যাহতি পাওয়ার পাশাপাশি দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান তারা।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় দেখা গেছে, তারেক মাহমুদ বাবু হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় যাদেরকে অভিযুক্ত করে আসামি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ আসামিই বাবু হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হেলাল মেম্বারের ইন্ধনেই তাদেরকে এ ঘটনায় ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি তাদের।

মানববন্ধনে অংশ নেয়া আসামি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা নিজেদেরকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, তারেক মাহমুদ বাবুকে চলতি বছরের ২৭ মার্চ রাতে কে বা কাহারা রাজাপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে নাকি রাস্তায় ফেলে রেখেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কয়েক ঘন্টা স্থানীয় হেলাল মেম্বারের বাড়িতে রাখা হয়। যদি তাৎক্ষণিক তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হতো, হয়তোবা আল্লাহর ইচ্ছায় সে বেঁচে যেতো। কিন্তু তা না করে তাকে হেলাল মেম্বারের বাড়িতে দীর্ঘ সময় রেখে দেয়া হয়েছে। অবশেষে লোকজনের জানাজানি হতেই ৩-৪ ঘন্টা পর হেলাল মেম্বারের বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করে বলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর অবস্থার অবনতি দেখে কর্তব্য তো চিকিৎসক তাকে বরিশাল রেফার করলে, ২৮ মার্চ ভোররাতে বরিশাল নেয়ার পথে বাবু মারা যায়।

বাবুর মৃত্যুর পর স্থানীয় ইউপি সদস্য হেলাল নিহতের বোন ও মামলার বাদী শিখা বেগমকে ফুসলিয়ে নির্দোষী বেশ কয়েকজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় পুলিশ ১১ জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। যাদের মধ্যে ১০ জন উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়েছে।

মানববন্ধনে মামলার ৩ নম্বর আসামি কালাম সিকদার, ৪ নম্বর আসামি কবির উদ্দিন আহমেদ, ৫ নম্বর আসামি নাজিম উদ্দীন ও ৮ নম্বর আসামি আনোয়ার গাজী উপস্থিত থেকে তারা বলেন, রাজাপুর ইউনিয়নে যত ধরনের সংঘাত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, এমনকি যে কয়টি খুন হয়েছে, প্রতিটি ঘটনার নেপথেই হেলাল মেম্বারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার বিষয় পুরো ইউনিয়নবাসি জানে।

মামলার ৩ নম্বর আসামি কালাম সিকদারের বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য হেলালের সঙ্গে পূর্ব থেকে তাদের জমি সংক্রান্ত বিষয়ে বিরোধ রয়েছে। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে তাদেরকে ঘায়েল করতে বাবুর বোনকে ফুসলিয়ে তাদেরকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে তাদের মিথ্যে মামলা করা হয়েছে।

একই কথা উল্লেখ করে মামলার ৪ নম্বর আসামি কবির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বহু বছর যাবতই ইউপি সদস্য হেলাল শ্যামপুর গ্রামে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে আসছে। এলাকায় তিনি বেশ আলোচিত একজন মেম্বার। নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের নেতা দাবি করে এমনকি পুলিশ প্রশাসনের সাথে তার সখ্যতা আছে এমনটি গ্রামের সহজ সরল মানুষকে বুঝিয়ে পুরো ইউনিয়নটিতেই তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন তার রাম রাজত্ব। তিনি আরো বলেন, এই মামলায় তাদেরকে আসামি করে জেল হাজতে রেখে হেলাল মেম্বার তাদের জায়গা জমি জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে।

এ মামলায় উল্লেখিত ১২ আসামির মধ্যে পুলিশ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে। উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়েছে ১০ জন। মামলার দুই নম্বর আসামি সিফাতকে ১৭ নভেম্বর তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এরপর আসামি সিফাতের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বেশ কয়েকজনের নাম চলে আসছে বলে জানান মানববন্ধনে থাকা অসংখ্য ভুক্তভোগীরা। যদিও ওর সকল ব্যক্তিদের নাম নিহতের বোনের দায়ের করা মামলার এজাহারের কোথাও উল্লেখ নেই।

যদিও ৩০ নভেম্বর সিফাতের জবানবন্দির ভিত্তিতে আকবর শিয়ালী নামে একজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। এছাড়া এই ঘটনার মূল হোতা হেলাল মেম্বারকে গ্রেফতার করা হলে এই মামলার মূল রহস্য উদঘাটনের পাশাপাশি পুরো রাজাপুর ইউনিয়নের শান্তি ফিরে আসবে বলেও জানান ভুক্তভোগীরা।

বিষয়টি নিয়ে ওই ইউপি সদস্য হেলাল মেম্বার এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি চটে গিয়ে উল্টো এই প্রতিবেদককে দেখে নেয়ার হুমকি ধামকি দিয়ে ফোনটি কেটে দেন।

তারেক মাহমুদ বাবু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভোলা সদর মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জসিম উদ্দিন জানান, বাবু হত্যার সঙ্গে প্রকৃতপক্ষে কে কে জড়িত তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আমি এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করেছি। তাদের মধ্যে ১০ জন উচ্চ আদালতের মাধ্যমে কারাগার থেকে বের হয়েছে। ১৭ নভেম্বর মামলার দুই নম্বর আসামি সিফাতকে বরিশাল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আকবর শিয়ালী নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি ঘটনাটির সুষ্ঠ তদন্ত করছি। পুরো তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ ঘটনার প্রকৃত তথ্য নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে ভোলা সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহীন ফকির জানান, এই ঘটনাটি আমাদের পুলিশ সুপার মাহিদুজ্জামান স্যার ও ডি আই জি স্যারের কঠোর নির্দেশনা তারেক মাহমুদ বাবু হত্যার তদন্ত এখনো চলছে। এই ঘটনায় জড়িত মূল আসামিকে গ্রেফতার করার পর তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এই ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত নতুন নতুন বেশ কিছু নাম চলে আসছে। যদিও মামলাটি তদন্তাধীন থাকার কারণে ও সকল ব্যক্তির নাম এখনো প্রকাশ করা যাবে না। তবে খুব শীঘ্রই তাদেরকে গ্রেফতারের মাধ্যমে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়া করানোর পাশাপাশি এই মামলায় যার এই নির্দোষ প্রমাণ হবে তাদেরকেও আদালতের মাধ্যমে এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।