সর্বশেষঃ

বকনা বাছুরে লালমোহনের ২শ’ ২৬ জেলের ভাগ্য বদল

জাহিদ দুলাল, লালমোহন ॥ মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞার সময় কর্মহীন জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বিনামূল্যে দেওয়া বকনা বাছুর পেয়ে ভোলার লালমোহনের ২২৬টি জেলে পরিবার ভাগ্য বদলেছে। বাছুরগুলো দুই বছরে পরিপূর্ণ গাভীতে রূপ নিয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনোটি ইতোমধ্যে নতুন বাছুরেরও জন্ম দিয়েছে। ওই সব গাভীর দুধ আবার জেলেদের বাড়তি আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, বকনা বাছুর পাওয়া এসব জেলেরা নদী ও সাগরে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতো। প্রতিবছর মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেরা কর্মহীন হয়ে পড়েন। এ সময় জেলেদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। অধিকাংশ জেলেদের নৌকা ও জাল থাকে না। আড়তদারের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে জাল, নৌকা কেনে নদীতে নামেন তারা। মাছ পেলে আড়তদারদের দিয়ে টাকা পরিশোধ করে। নিষেধাজ্ঞার সময়ে মাছ ধরতে না পারলেও ঋণের টাকা দেওয়া লাগে জেলেদের। এ সময় সবচেয়ে বেশি অসহায় হয়ে পড়েন তারা। অসহায় এসব জেলেদের এ সময়ে উপার্জনের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে মৎস্য বিভাগ জেলেদের মাঝে বকনা বাছুর বিতরণের উদ্যোগ নেয়। ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত লালমোহনে ২২৬টি বকনা বাছুর বিতরণ করা হয়েছে।
বকনা বাছুর পেয়েছেন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের পাঙাশিয়া গ্রামের জেলে মো. ছালাউদ্দিন মাঝি। তার স্ত্রী পিয়ারা বেগম বলেন, মৎস্য অফিস থেকে দুই বছর আগে আমাদের একটি গরুর বাছুর দেওয়া হয়। বাছুরটি লালন-পালন করে বড় করার পর এখন ওই বাছুরটি আরেকটি বাছুরের জন্ম দিয়েছে। ওই গরু থেকে এখন দুধ বিক্রি করছি। এ দুধ বিক্রির টাকায় একটি ছাগলও কিনেছি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের পরিবারে ৫ সদস্য। মৎস্য অফিস থেকে বাছুর পেয়ে এখন আমরা স্বাবলম্বী। নদীতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এখন আর আমাদের তেমন কষ্ট করতে হয় না। কারণ আমরা এই গরুর আয়ে সংসার চালাতে পারছি।
উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কামাল উদ্দিন মাঝিও পেয়েছেন মৎস্য অফিসের বিনামূল্যের বকনা বাছুর। তিনি জানান, ঋণ নিয়ে নদীতে যেতাম। নিষেধাজ্ঞার সময়ে মাছ ধরতে না পারলে ঋণের টাকা পরিশোধ এবং সংসার চালাতে কষ্ট হতো। মৎস্য অফিস থেকে দুই বছর আগে আমাকে একটি বকনা বাছুর দেওয়া হয়। ওই বাছুরটি বড় হয়ে এখন আরেকটি বাছুরের জন্ম দিয়েছে। বর্তমানে ওই গরুটি দৈনিক ৩ কেজি করে দুধ দিচ্ছে। যা বিক্রি বাজারে বিক্রি করি। এতে করে সংসার চালাতে আর বেগ পেতে হয় না।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেন মিনার বলেন, ইলিশসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের মাধ্যমে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য উপকরণ হিসেবে বকনা বাছুর দেওয়া হয়েছে। আমরা সব সময় বাছুরগুলোর খোঁজ-খবর নিয়েছি। যার ফলে এখন বেশির ভাগ বকনা বাছুর গাভীতে পরিণত হয়েছে। এতে করে উপজেলার বেশ কিছু জেলে স্বাবলম্বী হয়েছেন। ভবিষ্যতেও আমরা জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য এই ধারা অব্যাহত রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।