মধ্যরাত : পর্ব-২১৫

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : দোলা অনুযোগ করে দাদু, তুমি কি বাড়ী-ঘর ছেড়ে দিলে ? আজ উমাদির একাদশী, সারাদিন কিছু খায়নি। রাতে ফল-দুধ-মাধ খেল। মাংস খাওয়া সব ছেড়ে দিয়েছে। আমি বললাম, দেখ দোলা এসব একটা কুসংস্কার। যে চলে যাবার সে যাবেই, তার জন্য না হয় মানুষের মায়া লাগে। কষ্ট হয়, চোখের জল ফেলে। তারপর এই সত্যকে মেনে না নেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। কিন্তু খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করা এটা কোন ক্রমেই উচিত নয়। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করলে, শরীরের কাঠামো ভেঙ্গে পড়বে। এখন বই পুস্তকে কাব্য-সাহিত্য বলে এগুলো একটা কুসংস্কার। দোলা কতক্ষণ আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকল, প্রাসাদ কলকাতায় ফিরে যেতে চাইছে। আমি বললাম, আরও কয়দিন থেকে যাও। উমা বলল, আর ক’দিন থাক। প্রাসাদ বলল, তাহলে বড়-দা কে কলকাতায় ফোন করে দিতে হবে। আমি বললাম, প্রাসাদ ফোন করে জানিয়ে দাও, মাস খানেক বাদে আসব। উমা তুমি থাকলে একটু ভাল বোধ করবে। তোমার দিদিকে কাছে থেকে একটু শান্তনা দাও, অভয় দাও। প্রাসাদ বলল, আমি থাকি হাওড়ায়, আমার স্ত্রী ও দু’ছেলেকে বড়-দার কাছে রেখে এসেছি। আমার স্ত্রী ইন্দ্রানীও আসতে চেয়েছিল। আমি বললাম, নিয়ে আসলেই পারতে। প্রাসাদ বলল, এখন কি কুটুম বাড়ী বেড়ানোর সময় ?
দোলা বলল, দাদু কচ সেইযে লসএঞ্জেল গেল আর কোন খবরই দিচ্ছে না। আমি বললাম, ওর বোধ হয় চাকুরী হয়ে গেছে। আসছে না, খবরও দিচ্ছে না। আমি বললাম, দেখ খুব বোধ হয় ব্যস্ত আছে। না হলে ও-ত সেরকমের ছেলে না। ভবতোষ বাবু ফোন করেছিল, সুশান্তর মৃত্যুর পর, মাধুরীও ডায়াবেটিস হয়েছে। সে আবার খাওয়া-দাওয়া কন্ট্রোল করে না। রোগও বোধ হয় বেড়ে যাচ্ছে। এসব নানাবিধ সসম্যা রোগ শোক, জ্বরা, ব্যাধি এর হাত থেকে মানুষের কোন ক্রমেই মুক্তি নেই। সেদিন সন্ধ্যা বেলা কচের ফোন এল। ওর লসএঞ্জের ফোন একটা কোম্পানীতে চাকুরী হয়ে গেছে। চাকুরীতে জয়েন্ট করেছে। মান খানেক পর ছুটি নিয়ে দোলাকে নিতে আসবে। দোলা বলল, দাদু তোমাকে ছেড়ে আমি যেতে পারবো না। ছিঃ দোলা অমনি করে বলতে হয় না। তোমার স্বামী তোমাকে নিতে এলে তোমাকে যেতে হবে। পরে আবার আসবে। দোলা বলল, দাদু সুশান্ত দাদু বলে গেল; উমাদি একা, তোমাদের রেখে আমি কোথায় যাব। আমি বললাম, লসএঞ্জেল যেয়ে তোর কাছে থেকে আসব।
উমা তখন উমার ঘরে বসে প্রাসাদের সাথে তার বাল্য জীবনের নানা কথা নিয়ে আলোচনা করছিল। প্রাসাদের বাড়ী ফিরে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিল। উমা বলল, প্রাসাদ আবার কবে আসবি ভাই। আমি মাঝে মধ্যে আসব দিদি। হঠাৎ তার পেলাম লন্ডনে উমার বড় ভাশুরের ছেলে অলক আসছে। উমার দেবরেরও চিঠি পেলাম। তিনি লিখেছেন- উমাকে বাংলাদেশে পাবনায় পাঠিয়ে দিতে। আমি উমাকে এসব কথা বলিনি বা চিঠিও দেখায়নি। ওর যা মনের অবস্থা এসময় ও খুব আঘাত পাবে। সেদিন ভার্সিটি থেকে ফিরে এসে দেখলাম, সুন্দর ছিম-ছাম একটি ছেলে বসে আছে। বসে বসে ড্রইং রুমে নিউজ পেপারটা নাড়া চাড়া করছে। আমি তাকে বললাম, তুমি কি অলক ? বলল হ্যাঁ। ছেলেটি উঠে দাঁড়াল। আমি বললাম, বস বস। বলল কাকিমার সাথে দেখা করতে এসেছি। আমি বললাম, উমাকে কিচু বলনি ? বলল না। কাকিমার এখনও দেখা পাইনি। বাবা পাবনা থেকে চিঠি দিলেন তোমার কাকিমার খোঁজ নাও। আমি দোলাকে ডেকে বললাম, উমাকে ডেকে বলার জন্য। আমি বললাম, কখন এসেছ ? অলক বলল, প্রায় ঘণ্টা খানেক আগে। এর মধ্যে উমা এসে উপস্থিত। উমাকে দেখে ছেলেটি উঠে দাঁড়াল। উমাত ওকে কোনদিন চোখে দেখেনি। ছেলেটি নিজেই উমাকে পরিচয় দিল, আমি সুশান্ত কাকার ভাই সুকান্তর ছেলে। আমি লন্ডন থেকে আসছি। আমি দেখালাম উমা কিছুটা চিনল। বলল কেমন আছ ? কখন এসেছ, ছেলেটি বলল ঘণ্টা দু’য়েক আগে। উমা বলল, জানিনা-ত। দোলা বলল, উমাদি আমি তোমাকে বলিনি, ভাবছিলাম দাদু আসুক।

(চলবে———)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।