মধ্যরাত : পর্ব-২১৪

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন)

(গত পর্বের পর) : প্রাসাদের ঘুমন্ত মুখ খানা দেখে আমার বড় মায়া লাগে। কি এক আত্মবিশ্বাস নিয়ে এরা আমার এখানে এসে উঠেছে। আমি বিয়ে-সাদী করিনি, সংসার করিনি। কিন্তু এক বিরাট দায়িত্ব ভগবান আমার কাঁধে তুলে দিয়েছেন। একে আমি ফেলে দিতে পারবনা। তখন ভোর হয়ে আসছিলো। ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় আমার যেন মনটনা স্নিগ্ধ সুশীতল হয়ে আসছে। আমার নিজের শরীর ওত ভাল না। প্রেসারটা বেড়েছে কিনা এখনও চেক করে দেখিনি। উমা খুব ভোরে উঠে স্নান সেরে সাদা একখানা থান পরে রাশিকৃত চুলগুলি খুলে দিয়ে ঘরে ঢুকে কি যেন করল। তারপর ডাইনিং রুমে ঢুকে সকলের নাশতা তৈরী করল।
টেবিলে খাবার দিয়ে দোলা আমাকে, প্রাসাদকে ডেকে তুলল। প্রাসাদ বলল, জান দিদি রাত্রে আমার একটুও ঘুম হয়নি। উমা বড় বড় চোখ তুলে প্রাসাদের দিকে চেয়ে থাকল, প্রাসাদ হাত মুখ ধুয়ে এসে চা খেতে বসল। খেতে খেতে বলল দিদি, কলকাতা যাবে না ? উমা ওর দিকে চেয়ে থাকল। তারপর মুখ নামিয়ে বলল না। প্রাসাদ বলল, বড়-দা তোমাকে কলকাতায় বড়-দার বাসায় যেতে বলেছে। বড়-দা খুব কাজে ব্যস্ত থাকায় ছুটি পায়নি, আমাকে পাঠিয়েছে। তুমি চল দিদি। এখানে কোথায় থাকবে, কার কাছে থাকবে ? কেন প্রশান্ত-দার কাছে থাকব। তোর জামাই বাবু বলেছে প্রশান্ত আমার ভাই। একথা শুনে আমার দু’চোখ জলে ভরে উঠেছিল। প্রাসাদ বড় বড় চোখ তুলে আমার কাছে জানতে চাইল আমার কি মত। আমি বললাম, উমা আমার ছোট বোন। ও যদি আমার কাছে থাকতে চায়, যতদিন আমি বেঁচে আছি, আমার আমার কর্তব্য পালন করে যাব। প্রাসাদ আর কিছু বলল না।
উমা কাঁদছিল, বার বার কলছিল; আমি সুশান্তর মুখে ভাইর নাম শুনিনি। বোনের নাম শুনিনি। খেতে বসতে, শুতে খালি বলত প্রশান্ত প্রশান্ত। সে যখন প্রশান্ত দা’কে ¯েœহ করেছে, এত ভালবেসেছে, তখন তার আশ্রয়েই আমার এই বৈধব্য জীবনের বাকি শেষ কটা দিন কাটিয়ে দেব। আমি আর সেখানে বেশিক্ষণ থাকলাম না। তাদের ভাই-বোনের অনেক কথা থাকতে পারে। দোলা তখনও বিছানা ছেড়ে উঠে আসেনি। আমি ড্রইং রুমে বসে নিউজ পেপারটা দেখছিলাম। দোলা এসে বলল দেখ দাদু রাত্রে না আমার খুব জ্বও এসেছিল। কিচ্ছু কেথে পারি না। আমি মাথায় হাত দিয়ে দেখলাম বেশ জ্বর। বললাম, উমা দেখত দোলার কি হল, ও যে প্রেগন্যান্ট। সেটা আমি জানি। তবু এসব মেয়েদের ব্যাপার, ওরা এসব ভাল বুঝে। উমার নিজের যদিও কোন সন্তান-সন্ততি হয়নি, তবুও মেয়ে মানুষত। উমা দোলার কাছে এসে বলল বেশ জ্বর-ত, দোলাকে বলল; এস। কিছু খাও, দোলা খাওয়ার কথা বললেই মুখ বেঁকে বসে।
তবু উমা দোলাকে জোর করে বসিয়ে কিছু খেতে দিল। দোলা নাক-মুখ কাচু-মাচু করে কিছু খেল। আমি এখন আগের চেয়ে অনেক গম্ভীর হয়ে গেছি। বিশেষতঃ উমার দায়িত্ব ভার গ্রহণ করে। আগে যেটুকু বন্ধু পত্নী হিসেবে আলাপ-সালাপ করেছি, এখন সেটুকুও বন্ধ করে দিয়েছি। ভার্সিটির পর বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দেয়া। না হয়ত রাহাত খান এর ওখানে যেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাজনীতি নিয়ে সময় কাটান।

(চলবে——–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।