মধ্যরাত : পর্ব-২১৩

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : প্রাসাদকে নিয়ে আমি ঘরে ঢুকে বসতে বললাম। প্রাসাদ বড় বড় চোখ দুটো দিয়ে সমস্ত ঘর খানা একবার দেখে নিল। উমা এতক্ষণ কোথায় ছিল বলতে পারবে না। হঠাৎ কোন খান থেকে দৌড়ে এসে প্রাসাদকে জড়িয়ে ধরল। প্রাদাদ চমকে উঠল, প্রাসাদও দিদি বলে বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে লাগল। আমি বললাম, প্রাসাদ; ছেলে মানুষি কর না। যে চলে গেছে তাকে কেঁদে আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। দোলাকে ডাকলাম, দোলা এসে উমাকে শান্ত করল। প্রাসাদ, চুপ করে বসে থেকে ফুলে ফুলে কাঁদতে লাগল। আমি বললাম, প্রাসাদ হাত-মুখ ধোও, চা খাও; কলকাতার সব ভাল-ত ? প্রাসাদ মাথা নাড়াল।

দোলা ডাইনিং টেবিলে প্রাসাদের জন্য চা-নাশতা-বিস্কুট দিল। প্রাসাদ শুধু চা-ই খেল। আর কোন জিনিস হাত দিয়ে ছুয়েও দেখল না। উমা চুপ করে প্রাসাদের কাছে অনেকক্ষণ বসে থাকল। সুশান্তর একখানা ছবি বার বার ঘুড়িয়ে-ফিরিয়ে দেখছিল। এ ছবি খানা বোধ হয় বছর খানেক আগের ওদের বিবাহ বার্ষিকীর তোলা ছবি। অনেক রাত হতে চলল। আমি প্রাসাদকে বললাম শোবে না ? আমার রুমে পাশের খাটে ওর জন্য বিছানা পেতে দিলাম। ও এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিল।
সারারাত আমার ঘুম হয় নাই। ঘুমত আমার চিরকালই আমার সাথে আঁড়ি দেয়। তবু আমি শুই। বিছানায় পিঠ রাখি। আমার ড্রইং রুমের ঘড়িতে ১২টা বাজার ঢং ঢং করে পরল। একটু যেন তন্দ্রা লেগে এল, আমি যেন দেখতে পেলাম সুশান্ত আমাকে ডাকছে, এই প্রশান্ত উঠ টরেন্টো যাবিনে। আমার ইউনিভার্সিটির ছুটি প্রায় ফুরিয়ে এল। তোর এখানে আর কতদিন থাকব। উমা-উমা আমার সব কাপড়-চোপড় গুছিয়ে নাও। আমার ঘাম দিয়ে ঘুম ভেঙ্গে গেল। ওঃ কি দুঃস্বপ্ন। প্রায় ১২-১৪দিন পরলোক গম করেছে। আর আজ যেন বাস্তব হয়ে আমায় স্বপ্নে দেখা দিল। উমাকে এ স্বপ্নের কথা বলা যাবে না। তাহলে কান্না-কাটি করে বাড়ী শুদ্ধ সকলকে অস্থির করে তুলবে।
প্রাসাদ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কি সুন্দর মুখখানা, কি কচি কোমল। যেন শরতের এক ফালি চাঁদ। আমি যেন বিছানায় যেতে ভয় পাচ্ছি। আবার যদি স্বপ্ন দেখি। মধ্যরাতের রাত জাগা পাখি তার প্রহর ঘোষণা করে চলেছে। নিশুতি রাত। সেদিন বোধ হয় অমাবশ্যা ছিল, বাইরে ঘুরঘুটি অন্ধকার। শুধু বিজলী বাতির আলোগুলি চকচক করছে। আমি ড্রইং রুবে বসে ভাবছিলাম। মানুষের জীবনটা ক্ষনিকের। বিচিত্র এই পৃথিবী। বিচিত্র মানুষের মন। আর বৈচিত্র এই মানুষের জীবনের কার্য প্রণালী। আমি কোনদিন হাসপাতালে থাকিনি বা সামনে থেকে কারও মৃত্যুও দেখিনি, আজ সুশান্ত চলে গিয়ে আমার কাঁধে একটা বিরাট দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে গেছে। উমার এই সারা জীবনের বৈধব্য আমি কি করে সহ্য করব। উমা যদি আমার কাছে থাকতে চায়, তবে না করবার মত সাহত আমার কোনদিন হবে না। সুশান্তর প্রতি ভালবাসার এক গোপন দুর্বলতা আমার মত অহরহ কাঁদছে। ও আমাকে ভালবেসে টরেন্টো থেকে অসুস্থ্য অবস্থায় আমার এখানে এসে আমার কাছে, আমার সামনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করল। কি অগাধ বিশ্বাস ছিল আমার উপর। বন্ধ বল, ভাই বল, কি এক ভালবাসার নিবিড় বন্ধন ছিল আমার সাথে তার। উমাকে সে আমার কাছে ফেলে চলে গেল।

(চলবে——-)।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।