মধ্যরাত : পর্ব-২০৯

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : আমি উমাকে নিয়ে ড্রইং রুমে এসে বসলাম। এরই মধ্যে দোলা, কচ ওরাও এসে উপস্থিত। আমার ইউনিভার্সিটির প্রফেসার বিজন, অমিয়, দেবতোষ, রাহাত খান সকলে অনেক ফুল হাতে করে এসে উপস্থিত। আমি সকলকে নিয়ে রোগীদের ড্রইং রুমে এসে বসলাম। সকলের মুখে কোন কথা নেই। সবাই চুপ-চাপ এ ওর মুখের পানে চেয়ে নিরব প্রশ্ন রাখে। আমি বললাম, হঠাৎই অবস্থার পরিবর্তণ। সকালেও নাকি একটু সুস্থ্য বোধ করেছে। দুপুর থেকে বলছে উমাকে প্রশান্ত কোথায় ? আমি বাসায় যাব। আমি বললাম, উমা কাঁদেনা বোন; ধৈর্য্য ধর। উমা বলল, প্রশান্ত দা ও চলে গেলে আমি কোথায় থাকব। কার কাছে থাকব, আমার কি হবে। আমি অশ্রু সংবরণ করতে আর পারলাম না। আমার দুঃখে দুখী, সুখে সুখী হয়েছে। আজ আমাকে এই অসহায়ের মত রেখে ও কোথায় যাবে ? আমি দৌড়ে ডাক্তারের রুমে ঢুকে ডাক্তার কে ইংলিশে বললাম, ডাক্তার আমার ভাইকে বাঁচাও। ডাক্তাররা আমাকে তিরস্কার করল। বাইরে যান আমাদের চেষ্টা করতে দিন। আমাদের বাঁচানোর কোন হাত নেই।
তখন সন্ধ্যা হয়ে আসছিলো। সন্ধ্যার অন্ধকারে কেউ যেন না দেখে। উমা যেন না বুঝে, সুশান্ত পালিয়ে গেল। ডাক্তররা সব ওকে ঢেকে দিয়ে সরে গেল। আমি দৌড়ে কেঁদে উঠে ওর বুকের কাছে মাথা রেখে বললাম, সুশান্ত তুই রাগ করে চলে গেলি। আমার সাথে একটা কথাও বললি না। কেন ? উমাকেও কিছু বললিনা। ভার্সিটির প্রফেসাররা আমাকে সরিয়ে নিয়ে সুশান্তকে কি ভাবে হাসপাতাল থেকে আমার বাসায় এসেছিল আজ আমার মনে নেই। বা আমি উমা কিভাবে হাসপাতাল থেকে বাসায় এসেছি কিছুই ভাল মনে পড়ছে না। বা সে রাতটা আমার সুশান্তর মৃত দেহের পাশে কিভাবে কেটেছে আমার হুস ছিল না। পরদিন সকালে সুশান্তকে সাজিয়ে, অসংখ্য ফুল দিয়ে ফুলের সমারোহে সুশান্তর মুখও দেখা গেলনা। তখন মৃত দেহ নিয়ে যাবে, তখন সকলে উমাকে কাছে ডেকে, সুশান্তর পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে উমার সিঁথির সিঁদুর, কপালের টিপ মুছে দিয়ে গেল। সধবারা দু’হাতের সোনার চুড়িগুলি খুলে নিল। উমা কেঁদে কেঁদে মাটিতে পরে থাকল। মৃতদেহ নিয়ে ভার্সিটির প্রফেসাররা চলে গেল। আমাকে কে জানি টেনে গাড়ীতে তুলে চিতার কাছে নামিয়ে সুশান্তকে মুখাগ্নি করতে বলল। ভবিতব্য আমার কপালে কোনদিন জানি এই লিখে রেখেছিল। আমি মুখাগ্নি করে আগুন জ্বলে উঠা মাত্র আমাকে কে জানি সরিয়ে নিল।
আমি অপলক নেত্রে চিতার আগুনের লেলিহান শিখার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আমার সামনে আমার ভাই, পুড়ে ভস্ম হয়ে যেতে লাগল। আমি কিছু করতে পারলাম না। আমি সুশান্ত বলে এক চিৎকার দিয়ে চিতার দিকে ছুটে গেলাম। কে যেন আমাকে পিছন থেকে এসে ঝাপটে ধরল। তারপর সকলে আমাকে নিয়ে শশ্মান থেকে ফিরে এল। আমার বাসায়, উমা অচৈতন্য অবস্থায় তখন লুটিয়ে পড়েছিল। আমি ঘরে ঢুকে উমাকে এ অবস্থায় দেখে হাউ-মাউ করে কেঁদে ফেললাম। দোলা অনেক কষ্টে বুঝিয়ে উমাকে কিছুটা শান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু উমার দাত লেগে আছে, কোন জ্ঞান নেই। কে বা কারা উমাকে ধরে খাটের উপর তুলে মাথায় বরফ দিচ্ছে। এরই মধ্যে অমিয়, বিজ, দেবতোষের স্ত্রী ওরা সকলে এসে উমার সুস্থ্যতার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে উমার একটু জ্ঞান এল, সুশান্ত কই বলে আবার জ্ঞান হারাল। আমি নিজে দুঃখে-কষ্টে মাথা ঠিক রাখতে পারছি না। সারাদিন এই মৃত দেহের সৎকার করে কান্না কাটিতে হুলস্থুল এ আমাদের পেটে কিছু পরেনি। কচ-দোলা ওদেরও আমি কোন খোজ-খবর নেইনি।

(চলবে—–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।