মধ্যরাত : পর্ব-২০৮

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : রাত ভোর হয়ে আসতে লাগল। পাখির কিচির-মিচির শব্দে আমি কল্পনার রাজ্যে ছেড়ে এই নশ্বর পৃথিবীতে ফিরে এলাম। বিছানায় এসে কিছুক্ষণ গড়িয়ে নিলাম। তারপর হাত মুখ ধুয়ে খেয়ে দেয়ে ভার্সিটিতে যাবার উদ্যোগ করছিলাম। সুশান্তর অসুখের জন্য আমার অনেক কাজ কর্মের অনেক গাফিলতি হচ্ছে। তাড়াতাড়ি কাপড়-চোপড় পড়ে ইউনিভার্সিটিতে যাবার জন্য বাসের লাইনে দাঁড়ালাম। বাস এসে গেল, উঠে পরলাম; যেতে যেতে যেটুকু সময় লাগল। পৌছে গেলাম। অনেক দিন পর আবার কচি কচি সবুজ শ্যামল মুখগুলো দেখে হৃদয় ভরে গেল। ক্লাশ নিলাম। তারপর লাঞ্চ টাইমে কমন রুমে বসে আছি। প্রফেসার যারা পরিচিত ছেকে ধরল, আপনার বন্ধু কেমন আছে ? বললাম, ভালনা। সকলেই উদ্দিগ্ন প্রকাশ করল সেকি ? বললাম, বড় দুর্বল হয়ে পরেছে, কিছু খেতে চায় না। কাছে কে আছে ? বললাম, ওর স্ত্রী-ই সব সময় থাকে। আমি বিকেলে সব সময় যাই, সকালেও কাজ না থাকলে যাই। ও আমাকে না দেখলে বড় ভেঙ্গে পরে। তারপর আজ দোলা আসছে, এই বলে গাড়ীতে গিয়ে বসে বললাম গুড বাই। তাড়াতাড়ি গাড়ী ছেড়ে আসতে যতটুকু সময় লাগে। এসে বাসায় পৌছে দেখি ওরা এখনও এসে পৌছেনি। আমি নিজেও খুব অসহায় হয়ে পরেছি। ঘরে ঢুকে ওভেনে ভাত চাপালাম। ডাল চড়িয়ে তাতে আলু দিলাম। ডিম ভেঙ্গে কাটা চামুচ দিয়ে ফেটে রাখলাম। ওরা আসলেই ভেজে দেব। তারপর ঘরে ঢুকে কাপড়-চোপড় বদলালাম।
মনটা যেন অস্থির। বড় অধীর কি এক অমঙ্গল আশঙ্কায় বার বার বুকটা কেঁপে উঠল। তবুও মনে জোর করে সাহস সঞ্চয় করে এ ঘর, ও ঘর করলাম। ভাত হয়ে গেল, ডাল ঘুটে বাঘার দিলাম। ডিমটাও ভেজে ফেললাম। তারপর অনেকক্ষণ জানালার কাঁচের কাছে দাঁড়িয়ে কচ ও দোলার আসার পথের দিকে চেয়ে থাকলাম। ওরা এখনও আসছেনা কেন ? কোন ফোনও ওদের পাইনি। আমিও ফোন করিনি। হঠাৎ দরজার কলিং বেল বেজে উঠল, তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিলাম। দেখি হাসি হাসি মুখে দোলা-কচ দাঁড়িয়ে। বললাম, এত দেরী কেন ? কখন রওয়ানা দিয়েছ ? বলল, সকালে খুব ভোরে। পথে গাড়ি বিগড়ে গেল। তা হাত-মুখ ধোও। খেতে এস, আমি এতক্ষণ তোমাদের জন্য দেরী করেছি, খাইওনি। আবার হাসপাতালে যেতে হবে, সুশান্ত আমার পথ চেয়ে আছে। উমা বড় ভেঙ্গে পড়েছে। দোলা বলল, দাদু সুশান্ত দাদু এখন কেমন ? বললাম, ভাল না। তোমরা তাড়াতাড়ি খেয়ে চল ওর কাছে। হয়-ত তোমাদের দেখলে ওর ভালো লাগবে।
দোলা শাড়ী বদলালো। কচ পেন্ট-শার্ট বদলে হাত-মুখ ধয়ে খেতে এল। খেতে খেতে কোন কথা ওরাও বললনা। আমিও বলার মত মন মানসিকতা খুঁজে পেলাম না, চুপচাপ খেয়ে গেলাম। তখন ৩টা বাজে। একটু ক্যাম চেয়ারে হেলান দিয়ে নিউজ পেপারটার প্রতি চোখ বুলিয়ে দেলাম। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল, ফোন ধরলাম, হ্যালো উমা বলছি কি ? সুশান্ত কেমন ? ভাল না, প্রশান্তদা তাড়াতাড়ি আসুন। আমি উদভ্রান্তের মত গায়ে শার্টটা জড়িয়ে নীচে নেমে দেলাম। গাড়ীতে উঠে গাড়ী ষ্টার্ট দিলাম। কচ দৌড়ে এল দাদু কি ? বললাম, সুশান্তর খবর বিশেষ ভাল না। তাড়াতাড়ি গাড়ী চালিয়ে চলছি, কিন্তু পথ যেন আর শেষ হয় না। তবু ধৈর্য্য হারালাম না। পথে আসতে সিগন্যাল আছে, গাড়ী আছে, সব কিছু দেখে ডিসিপ্লিন বজায় রেখে চলতে হয়। হাসপাতালের কাছে এসে বুক ধুক ধুক করছিল। তবু তাড়াতাড়ি ঢুকে লিফটে উঠলাম। সুশান্তর রুমে ঢুকে দেখি ডাক্তাররা অক্সিজেন দিয়েছে। উমা এক কোনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। আমাকে দেখে দৌড়ে এসে দাদা বলে বুকে মাথা রেখে কাঁদতে লাগল। আমি হতভম্বের মত সুশান্তর মুখের দিকে নির্নিমেষ নয়নে চেয়ে থাকলাম। ডাক্তাররা আমাদের রুম থেকে যেতে বলল, রোগীর ডিস্টার্ব হয়। এমন কাজ এখানে করা নিষেধ।

(চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।