সর্বশেষঃ

বায়তুল মোকাররমে আ’লীগ, নয়াপল্টনে বিএনপি ॥ অনুমতি পায়নি জামায়াত

আজ দেশের বড় তিন দলের সমাবেশ ॥ কি হবে দেশে ?

ডেস্ক রিপোর্ট ॥ রাজধানীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে তাদের পছন্দের জায়গায় সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আজ শনিবার (২৮ অক্টোবর) আওয়ামী লীগ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে এবং বিএনপি নয়াপল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে। রাজধানীর শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। তবে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) রাতে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান আ’লীগ-বিএনপি’র সমাবেশের অনুমতি দেয়া এবং জামায়াত কে অনুমতি না দেয়ার বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে জানান। অন্যদিকে জামায়াত বলেছে, যেকোনো মূল্যে তারা শাপলা চত্বরে সমাবেশ করবে।
তিনি জানান, বিএনপিকে কয়েকটি শর্তসাপেক্ষে নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগকেও তাদের পছন্দের জায়গা বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া শনিবার রাজধানীর শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। তবে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) ডিএমপির সভা শেষে সাংবাদিকদের জানানো হয়, জামায়াতকে মহাসমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। এর আগে মহাসমাবেশের অনুমতি চেয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে ডিএমপি কমিশনারকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তবে আগেই ডিএমপি জানিয়েছিল জামায়াতকে অনুমতি দেওয়া হবে না।
শাপলা চত্বরেই মহাসমাবেশ করবে জামায়াত : ২৮ অক্টোবর মতিঝিল শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সমাবেশ সফল করতে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে দলটি। মহাসমাবেশ ঘোষণার পরেই ডিএমপিতে সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেয় জামায়াত। তার একদিন পরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রাজনৈতিক দল হিসেবে বৈধ নিবন্ধন না থাকায় তাদের অনুমতি দেওয়া হবে না। একই কথা বলেন ডিএমপির কর্তারাও। ২৮ তারিখ জামায়াত ছাড়াও নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। একই দিন বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে শান্তি সামবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
ডিএমপির তথ্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগ বিএনপিকে অনুমতি দিলেও জামায়াতকে কোনোভাবে অনুমতি দেবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। এরা নির্বাচন কমিশন থেকেই নিবন্ধনহীন। তাই তাদের অনুমতি নেই। অনুমতি ছাড়া সমাবেশ করলে ব্যবস্থা নেবে ডিএমপি। বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) মহাসমাবেশ সফল করতে সংবাদ সম্মেলন করেছে জামায়াত। যেখানে লিখিত বক্তব্য পড়েন দলের ভারপ্রাপ্ত আমির সাবেক ও সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী তার সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী আগামী ২৮ অক্টোবর শনিবার রাজধানী ঢাকা মহানগরীর শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ বাস্তবায়নে সহায়তা চেয়ে পুলিশ কমিশনারের নিকট লিখিতভাবে অবহিত করেছে। পক্ষপাতদুষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছে, ‘জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না।’ পুলিশের দায়িত্ব হলো শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা, বাধা দেওয়া নয়। তার এই বক্তব্য অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক, এখতিয়ারবহির্ভূত ও বেআইনি। আমরা পক্ষপাতদুষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
দলটির কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, আগামী ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচি সফল করতে রাজধানীর সকল শাখার সঙ্গে বৈঠক শেষ করেছে জামায়াত। মহাসমাবেশ সফল করতে গঠন করা হয়েছে মূল কমিটি ও উপকমিটি। মহাসমাবেশের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গঠন করা হয়েছে আলাদা উপকমিটি।
জামায়াতের সমাবেশে বাধা দিলে সংঘাত তৈরি হবে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করতে চাই। ১০ জুন আমরা ঢাকা সমাবেশ করেছিলাম সকলেই দেখেছে কতটা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল। ইতোমধ্যে এই মতিঝিলেই চলতি মাসে আমরা ২০ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী নিয়ে মিছিল করেছি। সেখানে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়নি। আমরা আগেও বলেছি সরকার বা প্রশাসন বিশৃঙ্খলা না করলে কখনই রাজনৈতিক সমাবেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় না। আমরা এখনো বলছি অতীতের ন্যায় আমরা আবারও প্রমাণ করতে চাই আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করতে চাই। প্রশাসন বা সরকারি দলের কেউ যদি বিশৃঙ্খলা তৈরি করে তাহলে দায়ভার সরকার এবং প্রশাসনকেই গ্রহণ করতে হবে।
এদিকে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ঘিরে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্রশিবির। ঢাকায় বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত দুই লাখ নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থী জড়ো করতে চায় ছাত্রশিবির। সমাবেশকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে প্রস্তুতিমূলক সভা শেষ করেছে সংগঠনটি। ঢাকাসহ সারা দেশে মিছিল করে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছে তারা। চলতি মাসেই মতিঝিলে প্রায় ৬ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে মিছিল করে তারা।
আজ দেশে কি হবে ? ঃ ২৮ অক্টোবর ২০০৬ সালের এই দিনে রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণ গিয়েছিল অনেকের। সেই সময় বিএনপির ক্ষমতা ছাড়ার দিনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি এবং জামায়াতের সহিংসতা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল পল্টন, বায়তুল মোকাররম এবং বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকা। আজও সেই সহিংসতা দগদগে স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ। আজ ২৮ অক্টোবর। আবার রাজনীতিতে টানটান উত্তেজনা ফিরে এসেছে। বিএনপি ঢাকার নয়াপল্টনে তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ ডেকেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে মহাসমাবেশ করবে।
তবে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরেও শাপলা চত্বরে সমাবেশ ডেকেছে জামায়াত। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। তারা বলেছে, কোনো অবস্থাতেই জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। কারণ জামায়াত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নই। অন্যদিকে জামায়াত বলেছে, যেকোনো মূল্যে তারা শাপলা চত্বরে সমাবেশ করবে।
দেশের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীতে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। আজ দেশে কি হতে যাচ্ছে তা নিয়ে নানা রকম উৎকণ্ঠা, অস্বস্তি এবং আলোচনা চলছে। তবে বিএনপি বলছে শুধু মাত্র একটি সমাবেশ হবে এবং এই সমাবেশ থেকে সরকারকে চূড়ান্ত আল্টিমেটাম দেওয়া হবে। এই সময়ের মধ্যে যদি সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মেনে নেয় তাহলে তারা সর্বাত্মক আন্দোলনে যাবে। এরকম বক্তব্য অবশ্য বিএনপি এখন প্রতিনিয়তই দিচ্ছে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফোরামে এই বক্তব্য বিএনপি দিচ্ছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে বিএনপি যে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে, নাশকতা করছে তা প্রতিহত করার জন্যই আওয়ামী লীগ সজাগ থাকবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে দলের সাধারণ সম্পাদক অতন্ত্র প্রহরীর মতো জেগে থাকতে বলেছেন। আর অন্যদিকে জামায়াতের পরিকল্পনা ভিন্ন। তারা একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়, তাদের কথাবার্তা এবং পরিকল্পনা থেকে সেটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এখন প্রশ্ন হল কালকে কি রাজনৈতিক সহিংসতা বড় আকারে দেখা দেবে? নাকি রাজনীতির অশনি যাত্রার সূচনা হবে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে আগামীকাল পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতেই হবে।
তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি বুদ্ধিদীপ্ততার পরিচয় দেয়, তাহলে তারা সহিংসতা এড়িয়ে একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে নিয়ে যত না উদ্বিগ্ন তার চেয়ে বেশি আতঙ্কিত জামায়াতের সাম্প্রতিক ভূমিকা নিয়ে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি এবং জামায়াতের সমাবেশের মধ্য দিয়ে যারা রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির উত্থান চায়, যারা বাংলাদেশে একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা আনতে চায় তারা সুযোগ খুঁজবে। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করবে। আর এই কারণেই কালকে ঢাকার তিনটি জনসভায় শান্তিপূর্ণ হওয়া না হওয়ার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে।
বিএনপির বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, তারা মনে করছেন যে যদি সহিংসতা সৃষ্টি হয় তাহলে তাদেরই ক্ষতি হবে। বিএনপির নেতারা তখন নতুন করে আন্দোলন শুরু করার জন্য আর সুযোগ পাবেন না। অন্যদিকে এই সহিংসতায় আওয়ামী লীগেরও ক্ষতি হবে। কারণ আওয়ামী লীগ যেভাবে চাইছে যে একটি সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখা, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সংবিধানের আওতায় সম্পন্ন করা সেটি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আর এ কারণেই সকলের আশঙ্কা এবং উৎকণ্ঠা। আওয়ামী লীগ-বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে কোনো অশুভ শক্তির কালো ছায়া নেমে আসবে কি না? এবং রাজনীতিতে একটি সহিংসতার সূচনা হবে কিনা তা নিয়ে আছে নানামুখী আলাপ আলোচনা, জল্পনা কল্পনা। তবে গণতন্ত্রের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো যদি সহনশীলতার পরিচয় দেয়, শুধুমাত্র সমাবেশের মাধ্যমেই তাদের কর্মসূচি সীমিত রাখে তাহলে হয়তো দেশ একটি অনিশ্চয়তার হাত থেকে রক্ষা পাবে। সুত্র : কালবেলা ও বাংলা ইনসিডার।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।