লালমোহনে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন

লালমোহন প্রতিনিধি ॥ ভোলার লালমোহন উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি ও লালমোহন বাজার আড়ৎ মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. মোখলেছ বকসীকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। শনিবার সকালে লালমোহন প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হামলার বিষয়টি তুলে ধরেন মো. মোখলেছ বকসী।
এসময় তিনি বলেন, আমি লালমোহন বাজারের একজন ব্যবসায়ী এবং লালমোহন বাজার আড়ৎ মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি। গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং আমার নিজ বাসা হইতে বের হয়ে বাসার পাশের মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যে পায়ে হেটে রওয়ানা করি। ওই দিন গুড়িগুড়ি বৃষ্টি ছিল। মসজিদ থেকে অনুমান ৫ মিনিটের পথ অতিক্রম করার পর একদল সন্ত্রাসী বাহিনী পিছন থেকে আমার মাথায় লোহা জাতীয় রড কিংবা পাইপ দিয়ে আঘাত করে এবং এলাপাথারি কিলঘুষি লাথি মারতে থাকে। এসময় আমি হামলাকারী কয়েকজনকে চিনতে পারি তবে আমার মাথায় আঘাতের কারণে এক দেড় মিনিটের মধ্যেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
পরদিন ২০ সেপ্টেম্বর ভোরে যখন আমার কিছুটা জ্ঞান ফিরে আসে তখন আমি বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছিলাম। এরপর আমাকে কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে ঢাকা রেফার্ড করা হয়। ঢাকাতে প্রায় ২ সপ্তাহের চিকিৎসা শেষে গত ২ অক্টোবর লালমোহনে আসি। আমি এখনও পুরোপুরি সুস্থতা অর্জন করতে পারিনাই। তবুও আমার আত্মীয়-স্বজন শুভাকাঙ্খীদের মূল ঘটনা জানানোর জন্য ও ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় সংবাদ সম্মেলন করছি। বাড়ীতে আসার পর যারা আমাকে উদ্ধার করেছে তাদের মারফত জানতে পারলাম ঘটনার দিন ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়কের শাহবাজপুর কলেজ সংলগ্ন আকতার চেয়ারম্যানের বাসার সামনের উত্তর দক্ষিণমুখী আঞ্চলিক মহাসড়কের মাঝখানে আমাকে পূর্বপশ্চিমমূখী শোয়ানো অবস্থায় পান মো. সেলিম বেপারী। সেলিম বেপারী আমাকে জানান, প্রথমে তিনি আমাকে চিনতে পারেননি। কারণ আমার মাথা আমারই ব্যবহৃত ছাতা দিয়ে ঢাকা ছিল। এরপর তিনি ছাতা সরালে আমাকে চিনতে পেরে স্থানীয় কয়েকজনের সহযোগিতায় উদ্ধার করে আমাকে লালমোহন সদর হাসপাতালে নিয়ে যান এবং আমার পরিবারকে খবর দিলে তারা আমাকে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের পরামর্শে পর্যায়ক্রমে ভোলা, বরিশাল ও ঢাকায় নিয়ে যান।
যেহেতু আমি একজন ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ব্যাক্তি, আমার মোটামুটি জমি জমাও আছে। তাই আমার সাথে অনেকের মতবিরোধও থাকতে পারে। তবে কোন সূত্র থেকে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী হামলা করা হয়েছে তা এখনও বুঝে উঠতে পারিনি। তবে স্থানীয় এক ব্যাক্তির ভাষ্যমতে, ঘটনার দিন হামলার আগমূহুর্তে বহিরাগত দুই ব্যাক্তিকে হামলার স্থানে দেখেছেন বলে জানান। এসময় ওই ব্যাক্তি বহিরাগতদের কাছে দাড়িয়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেছেন আমরা একজনের জন্য অপেক্ষা করছি।
ঘটনার দিন অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার বিষয়টিকে দূর্ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছে। কেউ কেউ হামলার বিষয়টিও উল্লেখ করেছে। পাশাপাশি সাংবাদিক ভাইয়েরা সংবাদও পরিবেশন করেছেন। ওই সংবাদে আমার ছেলের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছিল। যখন আমার কিছুটা জ্ঞান ফিরেছিলো তখন আমি ছেলের কাছে সন্ত্রাসী হামলার বিষয়টি বলেছিলাম। তবে টাকার বিষয়টি তাকে বলা হয়নি। কিন্তু ওই দিন নিজ বাসা থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নেয়ার কথা ছিল। আমার ছেলে ভেবেছিলো হামলার সময় ওই টাকা আমার সাথে ছিল। তাই সে বক্তব্যে ৩৫ লক্ষ টাকার কথা বলেছিল। প্রকৃতপক্ষে ওই দিন বৃষ্টির কারণে পাইকারগণ না আসায় বাসা থেকে আমি ওই টাকা নেইনি। হামলাকারীদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো আমাকে হত্যা করা। যদি ছিনতাই এর উদ্দেশ্য থাকতো তাহলে তারা আমার ব্যবহৃত টাচ মোবাইল ও সাথে থাকা টাকাপয়সা নিয়ে যেত।
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা আমার উপর যে সন্ত্রাসী হামলা করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ও হত্যার জন্যই এই হামলা করা হয়েছে। যার প্রমান হামলাকারীরা আমাকে মৃত ভেবে ঘটনাটিকে সড়ক দূর্ঘটনা হিসেবে সাজাতে ব্যস্ত সড়কের মাঝখানে শুইয়ে রেখেছিল। তবে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলআামিন তার অশেষ কৃপায় ও মানুষের দোয়ায় আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমার উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় মামলার প্রস্তুুতি চলছে। মামলার স্বার্থে হামলাকারীদের নাম প্রকাশ করলাম না। তবে আপনাদের সহযোগিতা ও প্রশাসনের মাধ্যমে আমার উপর সন্ত্রাসী হামলার ন্যায় বিচার পাবো বলে আমি আশাবাদী।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।