সর্বশেষঃ

৭০ এর নির্বাচন : বঙ্গবন্ধু ও বাঙলার স্বাধীনতা

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালীর ইতিহাসের ¯স্রোতধারাকে এক মোহনায় নিয়ে এসে ৭০এর পাকিস্তানের সাধারন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ এর মাধ্যমে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। পাকিস্তানের সামরিক সরকার লিগাল ফ্রেম ওয়ার্ক ওয়াডার মাধ্যমে পাকিস্তান জাতীয় প্রাদেশিক পরিষদ এর নির্বাচনে কিছু শর্ত ও বিধি নিষেধ আরোপ করে নির্বাচন প্রজ্ঞাপনজারী করে নির্বাচনী তারিখ ঘোষণা করেন। নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর অংশ গ্রহণ কে দলের মধ্যে অনেকেই একমত ছিলেন না। ৭০এর নির্বাচনকে সামনে রেখে, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদ এর বর্ধিতসভা ঢাকাস্থ বলাকা বিলডিং এর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভাটি দুইদিন ব্যাপি চলে,সেই সভায় আমি ভোলা মহকুমা ছাত্রলীগ এর সাধারণ সম্পাদক হিসাবে অংশ গ্রহণ করি। সভায় ছাত্রলীগের একটি পক্ষ তাদের বক্তব্যে বলেন যে, “বঙ্গবন্ধু এল,এফ,ও অধীনে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা সঠিক সিদ্ধান্ত হয় নাই”। নির্বাচনে অংশ গ্রহণে কোন লাভ হবেনা। বঙ্গবন্ধু নির্বাচনে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে মেজরিটি আসন লাভ করলেও পাকিস্তানের ক্ষমতায় বসতে দেয়া হবেনা। অন্য অংশটির নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্য বলেন যে, “নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা সঠিক সিদ্ধান্ত হয়েছে, নির্বাচনের মাধ্যমেই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা যাবে” রেজুলেশন করতে না পারাতে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে একযোগে বঙ্গবন্ধুর বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু কি চান তা জানার জন্য, কেন তিনি এল,এফ,ও আইনের বাইন্ডিংস এর মধ্যে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলেন। আমরা সবাই ৩২নং ধানমন্ডির বাসায় মিছিল সহকারে গেলাম। বঙ্গবন্ধু তাঁর দোতলা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসতে ছিলেন আর গাইতে ছিলেন কবিগুরুর আমার সোনার বাংলা গানটি এবং ছাত্র নেতৃবৃন্দকেও তার সাথে গাইতে বলেন, এই বলে যে, এটাই স্বাধীন বাংলার জাতীয় সংগীত এর পরে বঙ্গবন্ধু অন্য কাউকে প্রশ্ন করতে না দিয়ে বল্লেন যে, Who I am. I am only the, শেখ মুজিবুর রহমান, If i Elect by the people of Bangladesh and If i got the majority. I will got the authority the people of Bangladesh then Any thing, I say this will be the declaration of authoratarion peoples leader.

এই কথাটি এবং কবিগুরুর গানটি গেয়ে বঙ্গবন্ধু প্রমান করে দিলেন যে, বঙ্গবন্ধুর চূড়ান্ত লক্ষই হলো বাংলার স্বাধীনতা। ৭০ এর নির্বাচনের আগে ৫ই ডিসেম্বর মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদির মৃত্যু বার্ষিকীতে মাজার প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে এক ভাষনে বঙ্গবন্ধু বলেন যে, “আজ থেকে এই দেশটি পূর্ব পাকিস্তান, ও পূর্ববাংলা ও নয় এ দেশটির নামকরন করা হলো বাংলাদেশ” পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাষণ আমলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জনগনের অধিকার রক্ষায় সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুকে ১৩ বছর জেল জীবন কাটাতে হয়েছে যদি প্রথম দিকে অতিবিপ্লবী ভূমিকা পালন করে প্রকাশ্যে বাংলার স্বাধীনতার ডাক দিতেন, তা হলে তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে জুলে মৃত্যুবরণ করতে হতো। তার পরও পাকিস্থানি শাষনের দাসত্বের শৃঙ্খল ভাংগার জন্য বাঙালির প্রথম মুক্তি প্রয়াশ ৬ দফার আড়ালে বাংলার স্বাধীনতার প্রস্তুতি পর্ব এর এক ঐতিহাসিক ধারনা আড়ালে যুগান্তকারী ঘটনা। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেপথ্যে প্রস্তুতিতে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার যতখানি গুরুত্ব পাওয়ার কথা ছিল তা পায়নি। আগরতলা মামলার মধ্যেই নিহিত রয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা
সংগ্রামের প্রস্তুতি পর্ব। আগরতলা ষড়যন্ত্র না হলে বাঙালি জাতিয়তাবাদের প্রকাশ্য উন্মেশ ঘটতো না বলেই আমার বিশ্বাস। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এর মধ্যেই স্বাধীনতা সংগ্রামের ট্রাইল রান এর প্রথম বিজয় হয়। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতিয়তাকে যেমন জাগ্রত করেছে। তেমনি ৬৮ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাও তেমনি সশ¯্র স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয় বপন করে, এই বিজয় থেকেই একাত্তর এর সশ¯্র মুক্তি যুদ্ধের জন্ম বঙ্গবন্ধুর এই কৌশলি সংগ্রামের ধারনা পাকিস্থানি শাসক মোটেই বুঝতে পারেনাই, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াশ ছিল। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠি জাতীয় নির্বাচন ঘোষণার আগে বঙ্গবন্ধুর প্রতি বাঙলার মানুষের ঐতিহাসিক ব্যাপক সমর্থন স্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠবে তা ধারনা করতে পারেনাই। এই নির্বাচনে বাঙলার মানুষের একত্র রায় বঙ্গবন্ধুকে সাহসী ও বাংলার মানুষের মুখপাত্র হিসাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসাবে বৈধতা প্রদান করে। যার কারণে বাঙালির একমাত্র বৈধ নেতা হয়ে উঠেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর বিকল্প একমাত্র বঙ্গবন্ধু নিজেই।

লেখক : ফজলুল কাদের মজনু
সভাপতি
ভোলা জেলা আওয়ামী লীগ।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।