সর্বশেষঃ

চড়ুই পাখির কিচির-মিচির শব্দে মুখর মসজিদ আঙিনা

জাহিদ দুলাল, লালমোহন ॥ চড়ুই পাখি। পাখিটি আগে গ্রামের প্রায় সব বাড়ীতে দেখা যেত। তখন গ্রামে ছন/নাড়ার টিনের ঘর ছিল। সেই ঘরের কোনায় বাসা বাধত চড়ুই পাখি। কালের বিবর্তনে পাখিটি এখন বিলুপ্তির পথে। হারিয়ে যেতে বসেছে এই ছোট্র পাখিটি।
ভোলার লালমোহন পৌরশহরের সদর রোডে মোল্লা জামে মসজিদ। মসজিদের দক্ষিণ পাশে বাউন্ডিরা করা কবরখানার ভিতরে রয়েছে একটি কাঠাল গাছ। এই কাঁঠাল গাছকে নিরাপদ আশ্রয়স্থান বানিয়েছে শত শত চড়ুই পাখি। গত দেড় মাস ধরে গাছটিতে প্রতিদিন আসরের নামাজের পর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মিলিত হচ্ছে চড়ুইয়ের দল। কোথা থেকে এত চড়ুই পাখি আসছে কেউ তা বলতে পারে না। গাছের পাতা আর পাখি মনে সমানে সমান। চমৎকার কিচির মিচির শব্দ। মাঝে মধ্যে পাতার আড়ালেই উড়ে এক ডাল থেকে আরেক ডালে যাচ্ছে। বাহির থেকে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। শুধু শব্দ শোনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে তারা আনন্দ করছে আবার মনে হচ্ছে তাদের মিটিং চলছে। প্রতিদিন আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত চলে এই কিচির মিচির শব্দ। মাগরিব থেকে শব্দ বন্ধ। ফজরের পর চলে যায় পাখিগুলো। সারাদিন আর আসে না। আসরের পর আবার গাছে চলে আসে পাখিগুলো।
মোল্লা জামে মসজিদের খাদেম মো. হানিফ বলেন, গত দেড়মাস হলো চড়–ই পাখিগুলো আসরের পর ঝাঁকে ঝাঁকে এখানে আসছে। পাখিগুলোর কিচির মিচির শব্দ শুনতে ভালোই লাগে। মসজিদের দোতালায় বসে পাখির শব্দগুলো স্পষ্ট শুনা যায়। ভালোই লাগে শব্দগুলো। চড়ুই পাখি এখন তেমন একটা দেখা যায় না। কোথা থেকে এতগুলো পাখি প্রতিদিন এখানে আসছে তা আমি বলতে পারছি না।
গাছের পাশেই আল মদিনা পাঞ্জাবী টেইলার্স দোকানের মো. মিরাজ বলেন, চড়ুই পাখির কিচির মিচির শব্দে এই এলাকায় মুখরিত হচ্ছে প্রতিদিন। অনেক মানুষ এই শব্দ শুনতে গাছের নিচে আসছে। কিন্তু পাখিগুলো কেউ দেখতে পায় না শুধু শব্দ শুনতে পায়। বাজারের মধ্যে চারিদিকে মানুষের আনাগোনা এবং রাতে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত থাকে এই এলাকা। তবুও পাখিগুলো কোথাও না গিয়ে এখানেই রাতে থাকছে। দোকানে বসে পাখির কিচির মিচির শব্দ শুনতে খুব ভালো লাগে।
পাশে টেইলারিং এর কাজ করছে মো. ইউসুফ। তিনি জানান প্রতিদিন আসরের পর চড়ুই পাখিগুলো এই দুটি গাছে একত্রে আসে। এসেই কিচির মিচির শব্দ শুরু করে। এত ছোট পাখি গাছে দেখা যায় না। তবে চমৎকার শব্দে এই এলাকাকে মুখরিত করে তোলে। তাদের কিচির মিচির শব্দ আর লাফালাফি পাতার শব্দ বাড়তি আনন্দ পায় এই এলাকার সবাই।


এ ব্যাপারে পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন নেচার কনজারভেশন কমিটি (এনসিসি) ভোলার সমন্বয়কারী মো. জসিম জনি বলেন, বর্তমান সময়ে পাখিদের অভয়ারণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। পাখিরা এখন কোথায়ও নিরাপদ আবাসন গড়তে পারছে না। বৃক্ষ নিধন ও বসতবাড়ি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাখিরা এখন নতুন আশ্রয় খুঁজছে। চড়ুই এমন এক পাখি যারা সব সময় মানুষের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে। কারণ মানুষের উচ্ছিষ্ট খায় চড়–ই। তাই মানুষের বন্ধু চড়ুই পাখির প্রতি সকলের যতœশীল হওয়া উচিত।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।