সর্বশেষঃ

দৌলতখানে তুচ্ছ ঘটনায় যুবককে মধ্যযুগীয়ভাবে মারধর

এম রহমান রুবেল ॥ ভোলার দৌলতখানে পূর্ব শত্রুতার জেরধরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট ঘটনা ঘটেছে। হামলায় নারীসহ ৩ জনকে এলোপাথাড়ী পিটিয়ে রক্তাক্ত আহত হয়েছে। হামলায় গুরুতর আহত নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টায় দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের লেজপাতা গ্রামের কালু রাঢ়ির বাড়ীতে এই ঘটনা ঘটে। হামলার পর থেকে সন্ত্রাসীদের হুমকি-ধামকির ভয়ে চরম আতঙ্কে রয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারটি।
হামলার শিকার ভুক্তভোগী পরিবার সুত্রে জানা গেছে, দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের লেজপাতা গ্রামের কালু রাঢ়ির বাড়ীর নুর ইসলাম রাঢ়ির সাথে প্রতিবেশী দুলাল বেপারী গংদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জমি-জমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। কয়েক মাস আগে ওই বিরোধকে কেন্দ্র করে দুলাল বেপারী, আলাউদ্দিন গংরা বাড়ী থেকে উচ্ছেদ করার জন্য নুর ইসলাম রাঢ়ি ও তার পরিবারকে মারধর করে। এই ঘটনায় নুর ইসলাম রাঢ়ি দুলাল বেপারী গংদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরে স্থানীয় গণ্যমান্যদের সমঝোতায় শালিস বৈঠকের মাধ্যমে নুর ইসলাম রাঢ়িকে পিলার সীমানা করে তার জমি বুজিয়ে দেওয়া হয়। শালিস মিমাংসার কিছুদিন পর দুলাল বেপারীর ও তার লোকজন নুর ইসলাম রাঢ়ি ও তার পরিবারকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি-ধামকি এবং গালিগালাজ করে আসছিলো। দুলাল গংদের লোকজন বেশি হওয়ায় ভয়ে নুর ইসলাম ও তার পরিবার আতঙ্কে থাকতো। এরই ধারাবাহিতায় শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকালে নুর ইসলামের ছেলে রিপন বাসার কাছে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। এসময় আলাউদ্দিনের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রিপনের হাতাহাতি হয়। পরে রিপন ও আলাউদ্দিন যার যার বাসায় চলে যায়। কিছুক্ষণ পর দুলাল বেপারীর নেতৃত্বে মহসিন, বশার, আলাউদ্দিন, মোসলেহউদ্দিন, মনির সর্দার, হাসনাইন সর্দার, মালেক সর্দার, জাহাঙ্গীর, ইয়াসমিন, কহিনুর বেগম, মার্জিয়া বেগম, আরজু বেগম দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে নুর ইসলাম রাঢ়ির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে প্রবেশঘরে ভাংচুর ও তান্ডব লিলা চালায়। এসময় নুর ইসলাম, তার ছেলে রিপন ও স্ত্রী রহিমা বেগম হামলাকারীদের বাঁধা দিলে তাদেরকে দুলাল বেপারী বাহিনী এলোপাথাড়ী পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এসময় হামলাকারী দুলাল বেপারী বাহিনী রহিমা বেগমের সাথে থাকা স্বর্ণের চেইন, কানের দুল, বাড়ী-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করে ঘরে থাকা নগদ টাকা এবং দোকানে থাকা নগদ টাকা ও দামী মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। পরে রিপনকে হাতপা বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে চৌধুরী বাজারে নিয়ে এসে পুলিশকে খবর দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয় দুলাল ও আলাউদ্দিন গংরা। স্থানীয় লোকজন রহিমা বেগমের অবস্থা গুরুতর দেখে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ব্যাপারে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে নুর ইসলাম জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী নুর ইসলাম বলেন, দুলাল বেপারী, আলাউদ্দিন গংরা আমাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য বিভিন্ন সময় হামলা, ভাংচুর ও মারধর করে। এর আগেও আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনকে মারধর করেছে। আমি ওই ঘটনা মামলা দিলে স্থানীয় লোকজন শালিস মিমাংসা করে দেয়। এখন আবার পুনরায় আমার ছেলে, স্ত্রী ও আমাকে মারধর করেছে। তাদের উদ্দেশ্যে হলো আমাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা। আমি যাতে বাড়ি শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারি সে জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
অভিযুক্ত হাসনাইন বলেন, নুর ইসলাম রাঢ়ির সাথে জায়গা জমি নিয়ে আগে বিরোধ ছিলো। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বসে সেটি সমাধান করে দিয়েছে। এখন তাদের সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই। নুর ইসলাম রাঢ়ির ছেলে রিপন রাস্তায় একা পেয়ে আলাউদ্দিনকে কিলঘুষি মেরে রক্তাক্ত আহত করে। পরে আমরা তাদের বাসায় জিজ্ঞেস করতে গেলে রিপন দা দিয়ে দুলাল বেপারীকে কোপ দিয়ে আহত করে। তারা দুজনই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আমরা উত্তেজনার সময় নুর ইসলামের ঘরের জানালা ভেঙ্গেছি। আর কিছুই করি নাই। আমাকেও নুর ইসলাম মারধর করেছে। রিপনকে ধরে পুলিশের হাতে দিয়েছে। তারা যেসব অভিযোগ করেছে সেটি ঠিক নয়।
আলাউদ্দিনের স্ত্রী বলেন, রিপন আমার স্বামীকে মারধর করেছে। আমরা জিজ্ঞেস করতে গেলে রিপন ধাড়ালো দা দিয়ে আমার মামাতো দুলালকে কোপ দিয়ে রক্তাক্ত আহত করে। এসময় নুর ইসলাম আমাকে ঘুষি দিয়ে আহত করে।
চরপাতা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আঃ হাই বলেন, এই ঘটনার একদিন পরে শুনেছি, প্রকাশ্য যুবককে পিটানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাই। এমন ঘটনায় আমাকে ব্যতিত করছে। এ ব্যাপারে দৌলতখান থানার ওসি বলেন, রিপন দুইজন লোককে ধাড়ালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। রিপনকে স্থানীয় লোকজন আটকিয়ে রেখে আমাদেরকে খবর দিলে পুলিশের একটি টীম রিপনকে আটক করে নিয়ে আসে। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাকে কোর্টে চালান দেওয়া হয়েছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।