মধ্যরাত : পর্ব-১৮৯

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : এমন সময় ক্যামেলিয়া আর দেবপ্রিয় এসে বলল, আমাদের বড় দেরী হয়ে গেছে, আপনারা ভেবেছেন বুঝি আর আসবেনা। আমি বললাম, তা মানুষের একটু দেরী হয়। সকলেই সব সময় সব কাজে ঠিক টাইমে আসতে পারেনা। ইস কতদিন সমুদ্রের জালে ¯œান কারিনি বলে নেমে সাগরের জলের দিকে এগিয়ে চলল। আমি সুশান্ত, দেবপ্রিয়, আকাশ চৌধুরী গল্প করতে ছিলাম। উমা, ডোরা, কুসুম ওরা গা হাত-পা মুছছিলো কুসুম প্রকান্ড চুলগুলি নেড়ে চেরে শুকাচ্ছিল। প্রকান্ড একটা ঢেউ এসে তীরে আছড়ে, আর সেই ঢেউয়ের ¯্রােতে ক্যামেলিয়া ভেসে গেল। অনেক অনেক দুরে দেবপ্রিয় চীৎকার করে ক্যামেলি—–য়া—— সুশান্ত সাগরের জলে ঝাপিয়ে পরে, ¯্রােতের সাথে লড়াই করে এগিয়ে চলল। আমি দেবপ্রিয় আকাশ সাগরের জলে হাটু জলে দাঁড়িয়ে অপলক নেত্রে ক্যামেলিয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। উমা, ডোরা, কুসুম ওরাও সাগরের জলের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে ছিল। আমি ভগবানকে ডাকছিলাম। সুমান্ত ক্যামেলিয়াকে কিছুতেই আয়ত্বে আনতে পারছেনা। সাগর পাড়ের সব লোকজন ক্যামেয়িাকে উদ্ধার করার জন্য স্প্রিড বোর্ড নিয়ে এগিয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত সুশান্তও মরনাপন্ন হয়ে ক্যামেলিয়ার সাথে নিস্তেজ অবস্থায় সাগরে নেতিয়ে পরল।

স্প্রীড বোডের লোকেরা দু’জনকেই ধরাধরি করে বোটে তুলে সাগরের কুলে এনে শুইয়ে দিল। সুশান্তর কোন হুস নেই আর ক্যামেলিয়া ? সে মৃতই বলতে হয়। দেবপ্রিয় নিজেও একজন লব্ধ প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার। সে ক্যামেলিয়াকে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ওখানকার হাসপাতালের শরনাপন্ন হল। আমিও সুশান্তকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য আমরণ চেষ্টা চালায়ে হাসপাতালে উপস্থিত হলাম। শেষ পর্যন্ত এক হাসপাতালেই দু’জনের জ্ঞান ফিরিয়ে আনার জন্য ও পেট থেকে জলগুলি বের করার জন্য চেষ্টা চরিত্র চলতে লাগল। অনেক অনেকক্ষণ পর সুশান্তর আস্তে আস্তে চোখ একটু একটু নড়ছে, পাতাগুলি খোলার চেষ্টা, কিন্তু বাক শক্তি এখনও ফিরে আসার কোন লক্ষণ নেই।
ক্যামেলিয়া কোন চেতনা নেই। দেবপ্রিয় বার বার মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ডাকছে, ক্যামেলিয়া। ডাক্তাররা পেট থেকে জলগুলি বের করার জন্য প্রচুর চেষ্টা চরিত্র চালাচ্ছে। তবু যেন নিথর ঠান্ডা দেহটা নিরব হয়ে আছে। আমি একবার ক্যামেলিয়ার রুমে, আর একবার সুশান্তর রুমে এ ঘর, ও ঘর করছি। ঐ দিকে ডোরা, উমা, কুসুম ওদের সাগর পাড়ে রেখেই চলে এসেছি। দোলা-কচ তারাও যে সাগরের কুল ধরে কোথায় এগিয়ে গেছে তা আমি জানিনা। সুশান্তকে এই জীবন-মরণ সমস্যার হাত থেকে না সুস্থ দেখে আমি সাগর পাড়ে আর ফিরে যেতে পারছিনা। বিকেল গাড়িয়ে এল, সন্ধ্যা হয় হয়, আমি সুশান্তর মুখে পানে তাকিয়ে আছি। আমার পরম বন্ধু নিজের ভাইর চেয়েও বেশী। সুখে-দুঃখে অহরহ সে আমার পাশে পাশে থাকছে। আমার দু’চোখ এতক্ষণ পরে জলে ভরে উঠেছে। আমি ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ডাকলাম, সুশান্ত এই যে আমি, তোর কাছে আছি। তবু ও জবাব দিচ্ছেনা। ডাক্তারের সাথে আলাপ করলাম। ডাক্তার বলল, ওর আস্তে আস্তে জ্ঞান ফিরে আসবে। আপনি চিন্তা করবেন না। কিন্তু তবু চিন্তা হচ্ছে। এই মায়ামি সাগর পাড় কারো সাথে আমার ভালো আলাপ নেই। ভালো আলাপ কি কোন পরিচয় নেই। তবু ওরা মানুষত্ব্য ও মানবতার পরিচয় দিয়েছে। সাগর পাড়ে ওদের কাছে এখন কেউ নেই। ও হ্যাঁ আকাশ আছে-ত, হ্যাঁ এতক্ষণে মনে পরল। আমি একটু নিশ্চিত হলাম। কিন্তু কচ, দোলা ওরা কোথায় গেল, ওদের ত দেখে আসিনি। এমনি নানা চিন্তায় মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে থাকল। কিছুক্ষণ পরপর সুশান্তকে দেখছি।

(চলবে———)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।