সর্বশেষঃ

নির্বাচনী হালচাল

ভোলা-৩ : আওয়ামীলীগে অন্তঃকোন্দল, মাঠে নেই বিএনপি

এইচ এম নাহিদ ॥ লালমোহন-তজুমদ্দিন সংসদীয় আসনে আসছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটের হাওয়া বইছে। উপজেলা প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে এই আসনটিতে মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কোন কাজ চোখে পড়েনি। জাতীয় নির্বাচন আসলেই প্রার্থীদের সাধারন ভোটারদের কথা মনে পড়ে। নির্বাচন শেষ হলেই এই উপজেলার মানুষ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে নির্যাতন, বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরী করে এই অঞ্চলের মানুষকে শোসন আর শাসন করে নিজেদের সা¤্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই আসনটির অনেক বিচ্ছিন্ন এলাকা রয়েছে যেখানে সরকারে আদলে প্যারালাল সরকার গঠন করে মানুষের ভাগ্য নিয়ে তামাশা সৃষ্টি করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তেমনি একটি সংসদীয় এলাকা ভোলা-৩।
লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলা নিয়ে আসনটি ১৯৮৪ সালে গঠিত হয়। জাতীয় সংসদের ১১৭নং এ আসনটি ১টি পৌরসভা ও ১৪ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ভোটার সংখ্যা ২৯৩৫৪৭ জন। এখানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কে সামনে রেখে দেশের প্রধান বড় দুই রাজনৈতিক দলসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর একাধিক প্রার্থী’র নাম শোনা যাচ্ছে।
এই আসনটিতে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহার মাস্টার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বিএনপির প্রার্থী মোজাম্মেল হককে হারিয়ে নির্বাচিত হন। তৎকালীন জাতীয় পার্টির নেতা মেজর হাফিজ (অব.)’র (বর্তমান বিএনপি) কাছে হেরে ১৯৮৬ সালে আসনটি আওয়ামীলীগের হাতছাড়া হয়ে যায়। ১৯৮৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মেজর হাফিজ এই আসনটিতে একক ভাবে আধিপত্ব বিস্তার করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর এই আসনটিতে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। বাড়ীঘর, সহায় সম্পদ লুট করা হয়। তৎকালিন বিএনপির কতিপয় নেতার সৃষ্ট মৌমাছি বাহিনী দিয়ে এ তান্ডব চালানো হয়েছে। যাহা ঐ সময় দেশ বিদেশে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। এতে চরম ইমেজ সংকটে পড়েন বিএনপি নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। যার প্রভাব পড়ে ২০০৮ সালে। টানা পাঁচ বারের এমপি মেজর হাফিজ ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনটি আর ধরে রাখতে পারেননি।
২০০৮ সালে মেজর হাফিজকে হারিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেজর (অব.) জসিম উদ্দিন নির্বাচিত হন। আইনি জটিলতায় দের বছরের মাথায় আসনটি শূন্য হলে ২০১০ সালের উপ-নির্বাচনেও মেজর হাফিজ আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন’র কাছে ব্যাপক ভোটে হেরে যান। সেই থেকে অদ্যবদি এই আসনটি আওমীলীগের দখলে রয়েছে। নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আওয়ামীলীগকে পূর্ণগঠিত করার নামে তৎকালিন আওয়ামীলীগের নির্যাতিত ত্যাগী নেতাদের ডকসাইটে রেখে বিএনপির সৃষ্ট তৎকালিন সন্ত্রাসী সংগঠন মৌমাছি বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডারদের ডেকে এনে আওয়ামীলীগে পূর্ণবাসন করে পদ পদবী দেন।
স্থানীয় আওয়ামীলীগের একটি অংশ বলছেন, ২০০১ সালে মেজর হাফিজের সময় যে আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীরা কতিপয় মৌমাছি বাহিনী দ্বারা নির্যাতিত নিস্পেশিত হয়েছেন, ২০০৮ সালে ফের বর্তমান আওয়ামী সংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন মৌমাছি বাহীনিকে পূর্ণবাসন করে তাদের দ্বারাই আবার আওয়ামীলীগের নির্যাতিত ত্যাগী নেতা কর্মীদের হামলা মামলা করে সর্বশান্ত করেছেন। সর্বশান্ত করা হয়েছে স্থানীয় বিএনপির নেতা কর্মীদেরও। লক্ষ্য একটাই একক আধিপত্ব বিস্তার করা।
সরেজমিনে অভিযোগের সত্যতা খুজে পাওয়া যায়। দেখা যায়, যেই লক্ষ্যে মেজর হাফিজ মৌমাছি বাহিনীর দ্বারা লালমোহন তজুমদ্দিনে একক রাজত্ব কায়েম করেছেন সেই লক্ষ্যে বর্তমান সংসদও অনেকটাই সফল হয়েছেন। ক্ষমতার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগে একক আধিপত্ব বিস্তারে সফল হয়েছেন। দলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে হরন করে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করেছেন। আওয়ামীলীগে প্রকাশ্য বিভাজন থাকলেও লালমোহন তজুমদ্দিনে শাওনের বলয়েই আওয়ামীলীগের সকল সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। এখানে আওয়ামীলীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও তারা সাংগঠনিক ভাবে অকার্যকর। এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে শাওন আসছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়নের লড়াইয়ে সবার থেকে এগিয়ে। লালমোহন তজুমুদ্দিনে বর্তমান সংসদ শাওনের বিকল্প আর কারো অস্থিত্ব চোখে পড়েনি।
অভিযোগ আছে, আওয়ামীলীগ সরকারের এত উন্নয়নের মাঝেও এখানে সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে এমপি শাওন তেমন একটা ছোঁয়া লাগাতে পারেননি। আওয়ামীলীগের একটি অংশ বলছেন, বর্তমান এমপি শাওনের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তার পরেও শুধু মাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনার সু-দৃষ্টি থাকলেই বর্তমান সংসদ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনীত হতে পারেন শাওন, নেত্রীর বাহিরে কারো কোন চিন্তা করার সুযোগ নেই।
এদিকে সংসদ নুরন্নবী চৌধুরী শাওন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগে ভাগেই ভোট যুদ্ধে নেমে পড়েছেন। চষে বেড়াচ্ছেন এলাকা থেকে এলাকা। ভোট চাইছেন ভোটারদের কাছে। এছাড়া আওয়ামীলীগের আর কোন সম্ভাব্য প্রার্থীকে মাঠে দেখা যায়নি। তারা ভোট যুদ্ধে মাঠে না থাকলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব সরব। জনশ্রুতি আছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসার জন্য মিডিয়া উইং তৈরী করে নিজের জনমত জানান দিচ্ছেন। যার জন্য খরচা করছেন ব্যাপক অর্থ। এই ধরনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন বিবিএস গ্রুপ ও নাহী গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হাওলাদার, মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ মেজর (অবঃ) জসীম উদ্দিন আহমেদ। ইঞ্জিনিয়ার মোবাশ্বের আলী স্বপন ও মনোনয়ন চাইবেন বলে জনশ্রুতি আছে।
আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতা কর্মীরা বলছেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা লালমোহন-তজুমদ্দিনের এই আসনে যাকে যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দিবেন তাকেই আমরা আসছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট যুদ্ধে ব্যাপক ভোটে নির্বাচিত করবো। আওয়ামীলীগের অন্য অংশ বলছেন, গত ১ দশকের উপরে আওয়ামীলীগের দখলে থাকায় আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমোহন-তজুমুদ্দিনে নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের বিকল্প নেই। এবারও তিনি মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন ক্ষমতা থেকে দুরে থাকা বিএনপি’র অবস্থা আরো নাজুক। অতীতে তাদের কর্মকান্ড এখনো লালমোহন তজুমদ্দিনের মানুষ ভূলতে পারেনাই। এই কারনে এই আসনটিতে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা নিস্তেজ হয়ে আছে। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থী দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি একক প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে থাকলেও সংস্কার পন্থী ইস্যুতে তার বিপরীতে আরো একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চাইতে পারেন। তাদের মধ্যে আছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ও সুপ্রিমকোর্ট শাখার যুগ্ম সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোঃ কামাল হোসেন, মার্শাল হিমু, এ্যাডভোকেট ছিদ্দিকুল্লাহ মিয়া ও আক্তারুজ্জামান টিটবের নামে জনশ্রুতি আছে।
এ আসনে বিএনপি সাংগঠনিক ভাবে ঝিমিয়ে থাকলেও জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশকে সাথে নিয়ে তাদের সমর্থক ও ভোটারদের মধ্যে রয়েছে বিশাল ঐক্য। ভোটের সুযোগ পেলে সেটির প্রতিফলন ঘটাবে এমনটাই দাবী স্থানীয়দের। এছাড়া জাতীয় পার্টি (জাপা) সম্ভাাব্য প্রার্থী হিসাবে ভোলা জেলার সাধারণ সম্পাদক নরুন্নবী সুমন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মোঃ মেসলেম উদ্দিনের নাম শোনা যাচ্ছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।