মধ্যরাত : পর্ব-১৮৮

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : ক্যামেলিয়াকে পেয়ে আমি সুশান্ত ওর স্বামীর প্রতি সব সময় এই ম্যাজিক কিংডম এ সতর্ক দৃষ্টি রেখেছি। আমাদের দু’বন্ধুর ভার্সিটি জীবনের খুব একান্ত প্রিয় বন্ধবী। তা ছাড়া সুশান্তর এক কালের ভালবাসার পাত্রি ছিল। আমরা তা ভুলিনি। ডোরা, উমা, কুসুম, দোলা ওরা সব আড় নয়নে ওকে দেখছিল। কচ আকাশ অত সব ভাবেনা, মেয়েরা মেয়েরা তার প্রতি হিংসা পোষণ করে। এটা মেয়েদের চিরকালের স্বভাব।
ক্যামেলিয়াকে জিজ্ঞাসা করলাম ওরা কিসমিতে উঠেছে, মায়ামি যাবে ? আমি বললাম, আমরাও যাব। দেবপ্রিয় বলল, চলুননা; আমরা একদিনে একাসাথে যাই। এসব সাদার দেশে দু’চার জন বাঙ্গালী পেলে খুশী লাগে। আমি বললাম, দেখি সুশান্তর সাথে আলাপ করে। দেবপ্রিয় বলল, আপনারা কোন মোটেলে উঠেছেন ? আমি বললাম, অরোল্যান্ড ডেজিন এ আছি। দেবপ্রিয় বলল, ওমাই গড, ও-ত আমাদের একেবারে কাছে। আমি সুশান্তর সাথে আলাপ করে এসে আমি দেবপ্রিয়কে জানালাম, ঠিক হল আগামীকাল ভোরেই আমরা এক সাথে মায়ামির পথে রওয়ানা হব। রাত তখন ১২টা বেজে ৫ মিনিট হয়েছে। ক্যামেলিয়া বিদায় নিতে চাইল। আমিও সুশান্তকে বললাম, মোটেলে ফিরা যাক। তখনও ডোরা, উমা, দোলা, কুসুম বড় বড় দোকানে ঘুরে ঘুরে কেনা-কাটা করছিল। আমি অনেক দোকান ঘুরে ঘুরে খুঁজে পেতে বার করেছি। বললাম, একি মোটেলে ফিরবে না ? না এখানেই পরে থেকে দোকানে দোকানে ঘুরবে। উমা বলল, প্রশান্ত দা আপনাদের বান্ধবীর সাথে গল্প করা শেষ হল। ভাবলাম, আমরা আমাদের কেনা-কাটা শেষ করি।
দেবপ্রিয় আমাদের অনেক আগেই চলে গেল। আমরা আমাদের দলবল নিয়ে রওয়ানা দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা মোটেলে এসে খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পরলাম। ভোরে উঠে আমরা ম্যাক ডোনালে ব্রেকফাষ্ট সেরে মায়ামির পথে পাড়ি জমালাম। দীর্ঘ ১৫০ মাইল পথ অতিক্রম করে মায়ামির কোলে গিয়ে দাঁড়ালাম। আটলান্ট্রিক মহাসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালা তখন উত্তাল তরঙ্গ তুলে, ফুলে ফুলে জলগুলো আমার পায়ে এসে যেন বলছে, কেন এত দেরী করে এলে। আমি-ত ভুলিনি তোমাকে, যৌবনের উচ্ছলতা নিয়ে এসে আদর করিতে চায় আমাকে। অগনিত সাদা চামড়ার লোক বা লোকেরা তখন কেউ বোটে করে সমুদ্রের পাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কেউ ¯œান সেরে গা শুকুচ্ছে, কেউ ক্যাম চেয়ারে শুয়ে বই পড়ছে, কেউ ছোট বাচ্চাদের সমুদ্রের জলে গা ধোয়াচ্ছে, কোন উচ্ছল যৌবনা তরুণ-তরুণী হাতে হাত মিলিয়ে দুরে বহুদুরে মানুষের চোখের অন্তরালে আলিঙ্গনা বদ্ধ হয়ে সমুদ্রের শোভা অবলোকন করছেন। আমরা সকলে তখন গাড়ী থেকে নেমে পরে দোলা, উমা, ডোরা, কুসুম ওরা আনন্দে সমুদ্রের জলে ঝাপিয়ে পরতে উদ্যত্ত হল। আমি বললাম, সাবধানে করো যা করো, দেখো আবার সমুদ্রের জলে ভেসে যেওনা। ডোরা বলল, ভেসে গেলে আমার জন্য আফসোস করা কেউ নেই। উমা বলল, কেন প্রশান্ত দা অন্তত ভাববে। ডোরা বলল, কত ভাববে, দেখা গেছে। উমা বলল, চলুন ডোরা সমুদ্রের জলে ¯œান করি। ডোরা বলল, যা বালি গা কিচকিচ। দোলা-কচ ওরা দু’জনে আমাদের থেকে অনেক অনেক দুরে গল্প করতে করতে চলে গেল। সমুদ্রের পাড় দিয়ে অণাদি অনন্ত সীমাহীন একটা রাস্তা কতদুর পর্যন্ত চলে গিয়েছে। বহুদুর বিস্তৃত মনে হয়ে রাস্তাটা। বহুগাড়ী একে-বেকে চলে যাচ্ছে, বহু লোক সেই পথে ঘোরাঘুরি করছে, কচকে আর দোলাকে অনেকক্ষণ পর্যন্ত দেখিনা। এখানে সমুদ্রের জলে ডোরা, উমা, কুসুম খুব দাপাদাপি-জল ছিটাছিটি করছে। কেউ বা চাদও বিছিয়ে চোখ বুজে পড়ে। আমি আর সুশান্ত সুখ-দুঃখের অনেক কথা বলছিলাম।

(চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।