মধ্যরাত : পর্ব-১৮৭

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : আমরা সকলে দলে বলে অনেক তরাই-উৎরাই করে লঞ্চে চড়লাম। সেই আমাদের বাংলাদেশের মত চিকন-চিকন খাল। ঝোপ-ঝাঁপ এর মধ্যে দিয়ে লঞ্চগুলি একে-বেঁকে চলেছে। খালের দু’পাশ থেকে আরব্য উপন্যাসের গল্পের যতসব আজগুবী গল্পকারে, মুর্ত্তিগুলী সজীব হয়ে কথা বলছে, নাচছে, গান গাইছে। পরীরা রাজ কুমারীকে রাজ বাড়ী থেকে ঘাট সমেত চুরী করে নিয়ে যাচ্ছে। খালের মধ্যে হাতী ¯œান করে, শুড়দিয়ে জল তুলে চারদিকে ছড়াচ্ছে। আরও অনেক অনেক গল্প জীবন্ত হয়ে কথা কইছে। চোখের পাতাগুলি পর্যন্ত বুঝছে, খুলছে। ক্লিও পেট্রাকে গালিচায় পেঁচিয়ে এসে স¤্রাটকে উপহার দেওয়া হচ্ছে। এই রাতের অন্ধকারে খালের দু’পাশে বৈদ্যুতিক আলোর ঝলমল আলোয় স্ট্যচুগুলো শাড়ী গহনায়, সাজ সজ্জ্বায়, রং বাহারে মানুষের মনকে কোথায় এক অজানা রাজ্যে বিচরণ করায়। কোন খানে সেই পুরোন দিনের হার মোনিয়াম, গীটার, সেতার, এ¯্রাজ নিয়ে বড় বড় ওস্তাদরা বসেছেন গানের রেওয়াজ করতে। তারা যে হাতদিয়ে মিউজিকগুলির উপর আঙ্গুল চালাচ্ছেন, আঙ্গুলগুলি দ্রুত তালে চলছে। গলায় সুরের তান গুলি উঠা নামা করছে। আশ্চর্য্য, সবই পুঙ্খানু পুঙ্খ রূপে সজীব হয়ে আমার চোখের পর্দ্দাকে বিস্মিত মুগ্ধ করে তুলছে। বিজ্ঞান শুধু মৃত্যুকে জয় করতে পারেনি, আর সব পেরেছে।
দুই দলে যুদ্ধ করছে, রাজায় রাজায়, গোলাগুলি, কামান ট্যাঙ্ক নিয়ে ভীষণ যুদ্ধ চলছে। কত সৈন্য খালের পাশে মরে পরে আছে, ভালগুলি দ্রুত পালচ্ছে। কত গোলাগুলি সাজ সরঞ্জাম ফেলে পরাজিতরা সৈন্যরা পালিয়ে যাচ্ছে। এক ঘন্টার এই খালের বুকে লঞ্চে ভ্রমন তার মধ্যে অনেক কিছু দেখে ইলেকট্রিক তারের কারিগরি, বিজ্ঞানের বাহাদুরি, আমার মনে তার প্রতি একটা নতুন জগতের দ্বার উন্মোচন করল। অনেকক্ষণ পর লঞ্চ আবার এসে ঘাটে ভিড়ল। প্যাসেঞ্জাররা নেমে পরল। আমরাও তাদের পথ অনুসরণ করলাম। দোলা, ডোরা, উমা, কুসুম, ক্যামেলিয়া, দেবপ্রিয় ওরা খুব এই ম্যাজিক কিংডমের সুখ্যাতি করল। কেবলে চড়বার জন্য বললাম। ওরা সাবমেরিনে চড়ল। সেও এক আজগুবি ব্যাপার। ক্যামেলিয়া বলল সত্যি প্রশান্ত এখানে না এলে কেউ বললে হয়তঃ বিশ্বাস-ই করতামনা।
প্রকান্ড আর্টফেসিয়াল বড় বট গাছটা দেখতে ক্যামেলিয়া, দেবপ্রিয় সত্যি ভেবেছিল। বিরাট প্রকান্ড গাছটা ডাল-পালা ছড়িয়ে, নরম কচি কচি পাতা গজিয়ে, নিজের অস্তিত্ব বিভিন্নভাবে মানুষের মনে সত্য হয়ে আকাশ করেছে। কিন্তু সত্য না, গাছের কোটরে কোটরে ছোট ছোট ঘর, ছোট ছোট হেরিকেন জ্বালিয়ে বই পুস্তক রেখে টেবিল চেয়ার রেখে দিয়েছে, ছোট ছোট ঘরের মধ্যে ঝুনো নারকেল ঝুড়ি করে রেখে দিয়েছে। চৌকি পেতে বিছানা করা আছে। তার মধ্যে মাথার বালিশ সযতেœ দেওয়া আছে, সত্যি বিস্ময় লাগে মানুষের বুদ্ধিকে, আর কৃষ্টি কালচারকে, আর বিজ্ঞান। বার বার মনে হয় মানুষ কি না করতে পারে, শুধু পারেনা জীবনটা দিতে। আরও অনেক অনেক কিছু দেখার ছিল। ক্যামেলিয়া কিছু কিছু জিনিষ ক্রয় করল, দেবপ্রিয় খুব ভাল। বড় অমায়িক, ভদ্র, বিনয়ী। খালি বড় বংশ বাব ড় লোকেরাই ভাল হয়না, শিক্ষায় পরিবেশে মানুষ অনেক সুন্দর মনের পরিচয় দেয়।

(চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।