মধ্যরাত : পর্ব-১৮৫

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : হঠাৎ দুর থেকে একটি মেয়েকে সুশান্ত আমাকে দেখিয়ে বলল, প্রশান্ত মেয়েটি ক্যামেলিয়ার মত না ? আমি বললাম, ক্যামেলিয়ার মত কিরে ? ও ত ক্যামেলিয়া। আমি উঠে এগিয়ে গিয়ে দেখি সত্যি ক্যামেলিয়া। ও আমার দিগে নির্নিমেষ নয়নে চেয়ে থাকল। আমি বললাম, আপনি ক্যামেলিয়া না ? মেয়েটি হেসে ফেলল। কেন, বলুনত ? মেয়েটি বলল আমি ক্যামেলিয়া। আপনি প্রশান্ত বাবু না ? আমি বললাম হ্যা। ক্যামেলিয়া বলল আপনি এখানে কোথায় ? আপনি যেমন বেড়াতে এসেছেন, আমিও তেমনি। আমি বললাম, সুশান্তও এসেছে। মেয়েটি চমকে উঠল, কোথায় ? আমি বললাম, ঐ পার্কের পাশে বসে আছে। মেয়েটি বলল আমার স্বামী দেবপ্রিয় সাথে আছে। ও সাবমেরিনে চড়েছে, আমি চড়িনি, আমার ভালো লাগেনি। আমি বললাম, আসুন না সুশান্তর সাথে আলাপ করবেন। ক্যামেলিয়া বলল দেবপ্রিয় আসুক। তখন দু’জনে মিলে আলাপ করব। আমি সুশান্তকে এসে বললাম ক্যামেলিয়ার কথা। সুশান্ত সে রকম আগ্রহ প্রকাশ করলনা। অথচ একদিন সুশান্ত ক্যামেলিয়া ক্যামেলিয়া করে উদভ্রান্ত হবার জোগার হবার উপক্রম হয়েছিল।
আর আজ সুশান্ত বিবাহিত। পাশে স্ত্রী উমা বসা, আদর্শে কর্তব্যে অটল। আমিও এসে সুশান্তের কাছে বসে কথায় মন দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে ক্যামেলিয়া তার স্বামীকে নিয়ে আমাদের কাছে এসে দাঁড়াল। আমি তাদের স্বাদর সম্ভাষণ জানালাম। পার্কে পাশের বেঞ্চে বসার জন্য অনুরোধ করলাম। ওরা দু’জনে বসল। ক্যামেলিয়া সুন্দরের যেন আকর্ষণ, এখনও তেমনি জ্যোর্তিময় বড় বড় চোখ দুটি তেমনি এখন ছল ছল করে কাকে যেন খোঁজে। হাসলে এখন গালে টোল খায়। গায়ের রং এখনও দুধে আলতায় গোলা। দেবপ্রিয় ও তেমনি সুন্দর শুনলাম বম্বের বিখ্যাত ব্রেন স্পেশালিষ্ট। ওর দাদু বম্বেতে মারা গেছেন। বাড়ী ঘর, টাকা পয়সা ওকে সব দিয়ে গেছেন। ওরাও ইন্ডিয়া থেকে ছুটি কাটানোর জন্য ডিজনী এসেছে। দেবপ্রিয় শিক্ষিত, মার্জিত, ভদ্র। ক্যামেলিয়া বলল, এরা দু’জনেই আমার ক্লাস ফ্রেন্ড। পরে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ছেড়ে দাদুর কাছে বম্বে গিয়ে পড়া শুনো করি।
ওর স্বামীর সাথে আমাদের বন্ধুদের আলাপ করিয়ে দিলে। ওর স্বামী হাসি হাসি মুখে, খুশী খুশী বুকে আমাদের সাথে অনেকক্ষণ বম্বের অনেক অনেক মুখ রোচক গল্প করেছিল। উমা এতক্ষণ আমাদের কাছে ছিলনা। দোলাদের সাথে গিয়েছিল। ও সকলকে নিয়ে এসে উপস্থিত হল। বলল প্রশান্ত দা ওনারা কে ? আমি বললাম, ক্যামেলিয়া; আমাদের বাংলাদেশের ঢাকা ইউনিভার্সিটির ক্লাশ ফ্রেন্ড ছিল। আর ক্যামেলিয়ার স্বামী দেবপ্রিয়। মেয়েরা আড় চোখে সকলেই ওকে দেখছিল। দেবপ্রিয়কে আমরা সম্মান দেখালাম। বললাম, চলুন না চা খাই। সুশান্তর স্ত্রী উমার সাথে ক্যামেলিয়ার পরিচয় করে দিলেন। সেই সময়টা আমার খুব ভাল লাগছিল। সব বাংলাদেশের লোক একসাথে হয়ে ঢাকার কথা, ভার্সিটির কথা। সকলেই মেয়েরা শাড়ী পড়া, কপালে লালসিদুঁর যারা বিবাহিত। একটা গান আছে—-বাংলার বধু বুকে তার মধু, নয়নে নীরব ভাষা। যেন বার বার মনে পরে চোখে জল এসে গিয়েছিল। এই সুদূর, দূর দেশে এমেরিকায় এই ওয়ালট ডিজনী ওয়ার্ল্ডে আমি আবার আমার সোনার বাংলায় ফিরে গেলাম।
দেবপ্রিয়কে নিয়ে চা খেতে গেলাম ডিজনীর একটা নামকরা ক্যাফে। ক্যামেলিয়া, ডোরা, দোলা, উমা, কুসুম, সুশান্ত, আকাশ চৌধুরী, কচ, আমি এই ১০জনে একটা থেকে দুটি টেবিল দখল করে আসর জমিয়ে বসলাম। আমিই অর্ডার দিলাম। পছন্দ সই ফিস বারগার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, আপেল পাই, চা বা কোক। খেতে খেতে অনেক কথা হল। দেবপ্রিয় খুলনার ছেলে। বাংলাদেশ হবার পরে ও বম্বেতে ওর দাদুর কাছে পড়েছে। খুলনার মোড়লগঞ্জে ওর বাড়ী। ছোট বেলায় লেখা পড়ায় খুব ব্রিলিয়ান্ট ছিল, কিন্তু ওরা খুব গরীব। দেবপ্রিয় বলল, আমি গরীবের ছেলে বলে আমার সংকোচ নেই। এ আমার অহংকার। আমি নিজের যোগ্যতায় সমাজে পরিচিত। নিজের যোগ্যতায় আমি লব্ধ প্রতিষ্ঠিত। আমার বাবা-দাদা ওনারা খুবই গরীব ছিল, বাজারে খৈ-মুড়ির ব্যবসা করতেন, কিন্তু ভদ্র, সুসংযত, মার্জিত। নিজের যা দু’পয়সা ছিল এ নিয়েই তারা সুখী ছিল।

(চলবে————–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।