সর্বশেষঃ

লালমোহনে জনমানুষের দুয়ারে স্বাস্থ্য সেবা

জাহিদ দুলাল, লালমোহন ॥ কমিউনিটি ক্লিনিক। শেখ হাসিনার অবদান কমিউনিটি ক্লিনিক বাঁচায় প্রাণ শ্লোগানে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চলছে প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চল ও তৃণমূল পর্যায়ে। বর্তমান সরকারের অভূতপূর্ব সাফল্যের মধ্যে একটি হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা গ্রাম পর্যায়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। এটি সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র কমিউনিটি ক্লিনিকের কারণে। বাড়ির কাছে বিনামূল্যে ওষুধ এবং সেবা পাওয়ার কারণে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো গ্রামাঞ্চলের জনসাধারণের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গ্রামাঞ্চলে মা ও শিশুর পাশাপাশি সকল জনসাধারণের মৌলিক স্বাস্থ্যসেবার সুবিধাগুলো এই কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে দেয়া হয়ে থাকে। জনগনের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয় এখানে। রোগীর অবস্থা অনুযায়ী বা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনবোধে উন্নত চিকিৎসার জন্য উপজেলা হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
ভোলার লালমোহন উপজেলা ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বর্তমানে ৩৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এখান থেকে প্রায় ২৯ ধরনের ঔষধ বিনামূল্যে রোগীদের সরবরাহ করা হয়। এখানে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজননস্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, টিকাদান কর্মসূচি, পুষ্টি স্বাস্থ্য শিক্ষা, পরামর্শসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। প্রতিদিন গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ জন বিভিন্ন রোগের রোগী এখান থেকে সেবা নিয়ে থাকে।
উপজেলার রমাগঞ্জ ইউনিয়নের হাফিজ উদ্দির বাজার এলাকার পূর্ব চর উমেদ কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি (কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রেভাইডার) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এই ক্লিনিকটি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের কারণে প্রতিদিনই প্রায় ৫০ জন বিভিন্ন রোগী আসে এখানে সেবা নেয়ার জন্য। এই ক্লিনিকটি গরীবের হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসে নারী ও শিশু রোগী। জটিল ও কঠিন রোগীদেরকে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেফার্ড করি।
কমিউনিটি ক্লিনিকে যে সমস্ত সেবা দেয়া হয় : মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য পরিচর্যা, শিশু রোগের সমন্বিত চিকিৎসা সেবা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরামর্শ প্রদান, ইপিআই এআরআই সেবা, সাধারণ রোগ ও জখমের চিকিৎসা, সদ্য প্রসুতি মা-মারাতœক পুষ্টিহীন ও দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া এবং হামে আক্রান্ত শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল প্রদান, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধিদের শনাক্ত ও রেফার করা, সদ্য বিবাহিত এবং অন্তসত্তা মহিলাদের নিবন্ধীকরণ- সম্ভাব্য প্রসব তারিখ নিরুপন ও সংরক্ষণ, জরুরী ও জটিল রোগী উচ্চতর পর্যায়ে রেফারের মাধ্যমে কার্যকরী রেফারেল পদ্বতি প্রতিষ্ঠা করা, কিশোর কিশোরীদের স্বাস্থ্য শিক্ষা, প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা ও নিরাপদ মাতৃত্ব সেবা, পুষ্টিশিক্ষা ও সম্পূরক অণুপুষ্টি প্রদান, বয়স্কদের লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান ইত্যাদি।
পূর্ব চর উমেদ কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা রোগী তাজুল ইসলাম, মজিবল হক, গনি ব্যাপারী, রিজিয়া, ফাতেমা ও রুনা বলেন, এই ক্লিনিকটি হলো আমাদের জন্য আর্শিবাদ। আমাদের বাড়ীর কাছাকাছি হওয়ার কারণে আমরা সহজেই আসতে পারি এবং এখানকার ডাক্তার আমাদের কথা শুনে বিমামূল্যে ঔষুধ দিয়ে থাকে। এখানে গরীব ধনী সকল ধরনের রোগীরাই আসে। এই ক্লিনিকের নজরুল ডাক্তার খুব ভালো লোক। তিনি রোগীরা আসলে রোগীদের কথা শুনে বিনামূল্যে ঔষুধ প্রদান করেন।
ধলীগৌর নগর ইউনিয়নের দালাল বাজার এলাকার কুলচড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচপিপি রিতা রায় বলেন, জনগণের দোরগোড়ায় বন্ধু হয়ে দাড়িয়ে আছে কমিউনিটি ক্লিনিক। আমি রোগীদেরকে বন্ধুর মত সেবা প্রদান করি। রোগীদের কথা শুনে ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে ঔষুধ দিযে থাকি। শহরের হাসপাতালের সেবা কমিউনিটি ক্লিনিকে পেয়ে খুশি রোগীরা। এখানে গর্ভবতী মা ও শিশুরা বেশি আসে। এই ক্লিনিকে গর্ভবতী মাদের ডেলিভারীসহ বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হয়। তিনি আরো বলেন, সমস্যা হলো এই ক্লিনিকটি অনেক পুরানো হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে ছাদ দিয়ে পানি পড়ে, বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। দ্রুত এই ক্লিনিকের ব্লিল্ডিংটি মেরামত করা প্রয়োজন।
কুলচড়া ক্লিনিকে আসা নাজমা বেগম তার ছেলে ইশানকে জ্বর ও সর্দির জন্য নিয়ে এসেছেন। নাজমা বলেন, আমাদের বাড়ীর কাছাকাছি এই ক্লিনিকটি হওয়ার কারনে আমি নিজে আমার ছেলেকে নিয়ে আসছি এবং দিদির সাথে ছেলের সমস্যা বলার পর তিনি দেখে ঔষুধ দিয়েছেন। হাজেরা, নুরজামাল, হাসিনা নামের কয়েকজন রোগী বলেন আমরা এখান থেকে বিনামূল্যে ঔষুধসহ সবধরনের সেবা পাচ্ছি। এই দিদি সকলের কথা মনোযোগ সহকারে শুনেন এবং সেবা দেন। আমরা এজন্য অনেক খুশি।
লালমোহনে কর্মরত কয়েকজন কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি বলেন, গত ১৩ বছর জনগণের দৌঁড়গোড়ায় কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে আমরা স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে আসছি। আমাদের ভালো কার্যক্রমের কারণে জাতিসংঘে বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু আমাদের কর্তব্যরত সিএইচসিপিদের কোনো সুযোগ সুবিধা বাড়েনি। যার বড় উদাহরণ ২০১১ সাল থেকে বেতন এখনও একই অবস্থায় রয়েছে। বলা হচ্ছে চাকুরী সরকারিকরণ করা হয়েছে। কিন্তু তার কোন সুযোগ সুবিধা আমরা পাচ্ছি না। আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনমানুষের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করলেও আমাদেরকে সেইভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছেনা। এই ক্লিনিক থেকে জনগণ সুবিধা পাচ্ছে কিন্তু ভালো নেই সিএইচসিপিগণ। বেতন ভাতাসহ সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করার জন্য তারা সরকারের কাছে জোর দাবী জানান।
কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্যাপারে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: তৈয়বুর রহমান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের একটি সফল প্রতিষ্ঠান এবং গ্রামাঞ্চালের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার প্রাণকেন্দ্র হলো কমিউনিটি ক্লিনিক। যুগোপযোগী কল্যাণকর একটি প্রতিষ্ঠান হলো কমিউনিটি ক্লিনিক। এটি হওয়ার কারণে জনগণের হাতের কাছে স্বাস্থ্যসেবা চলে আসছে। এখানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ঔষুধসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। এখানকার সিএইচসিপি দের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষভাবে তৈরী করা হয়েছে। যে রোগীগুলো তাদের সেবার আওতার বাইরে পড়বে তারা সে রোগীগুলোকে রেফার্ড করে থাকে। এছাড়া লালমোহন উপজেলার কয়েকটি ক্লিনিকের অবকাঠামো খুবই জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে এগুলোর তালিকা তৈরী করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হযেছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে অবকাঠামোগত সমস্যার সমাধান করা হবে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।