মধ্যরাত : পর্ব-১৮৩

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : ডোরার নিমন্ত্রণের কথা অমিয় এখঅনে কিছু বললনা। বলল মোটেলে গিয়ে জানাবে। চিন্তা করে দেখবে। আমি ওদের যাওয়ার সময় ওদের সাথে অনেক দুর পর্যন্ত হেটে গিয়ে ওদের গাড়ীতে পৌঁছে দিয়ে এলাম। রাহাত খাঁন বার বার অনুরোধ করল এক সাথে ডিজনীতে যাওয়ার জন্য। আমি বললাম, দেখি নাত জামাই কি বলে। রাতে খেয়ে দেয়ে ডোরা অনেক্ষণ মন্ট্রিলের গল্প বলছিল, সুশান্ত পূর্বের কথা মনে করে হাসছিল। আমি বললাম, সত্যি সুশান্ত, উমা, ডোরা তুমি ভার্জিনিয়া থেকে যখন মন্ট্রিলে আমার কাছে এসেছিলে বরং আমার আনন্দ লেগেছিল, বড় ভাল লেগেছিল। সে কয়টা দিন আমার জীবনে একটা গল্প হয়ে থাকবে। আমার শরীরও তখন বেশ সুস্থ্য ছিল।
আচ্ছা কাল ওদের কি খাওয়াবে ? কাদের ? আমি বললাম, বিজন অমিয় রাহাত খানকে ? ডোরা বলল, ওরা নিমন্ত্রণ করল কিনা তাওত জানাল না, কুসুম আকাশকে, কচ দোলাকে আমি বাড়ীর লোকের মতই মনে করি। এমন সময় রাত তখন ১১টা হবে, ফোন এল রাহাত খান বলল, হ্যালো ব্রাদার; কাল বিকালের নিমন্ত্রণ আমরা স্বাদরে গ্রহণ করলাম। আমি বললাম, ধন্যবাদ। আমি ডোরাকে ডেকে বললাম, তোমার নিমন্ত্রণ স্বাদরে গ্রহণ করেছে। অমিয়, বিজন, রাহাত খাঁন। ডোরা হাসি হাসি মুখে চেয়ে থাকল। আমি দোলাকে ফোন করলাম। দোলা তুই কুসুমকে নিয়ে জলদি কাল সকালেই চলে আসিস। কেন দাদু ? মন্ট্রি থেকে কয়েক জন প্রফেসার এসেছে। ডোরা ওদের ও তোদের সাথে খেতে বলেছে। দোলা বলল, আচ্ছা দাদু।
সকালে ব্রেক ফাষ্টের পরই দেখা গেল আকাশ অফিসে যাওয়ার পথে ওদের দু’জনকে ডোরার কোয়ার্টারে নামিয়ে দিয়ে গেল। ডোরা ওদের পেয়ে খুব খুশী হল। রান্নার মেনু করা হল। বিরিয়ানী, রোষ্ট, কাবাব, দধি, মিষ্টি। বিরিয়ানি দোলাই বানাবে, রোষ্ট কুসুম, কাবাব ডোরা তৈরীর ভার গ্রহণ করল। মিষ্টি উমা। এমনি করে ওদের চার জনের গল্পে-গুজবে, হাসি-ঠাট্টায় সেদিনের রান্না খুব চমৎকার ভাবে তৈরী হয়েছিল। ডোরার ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির বাঙ্গালী কয়জন প্রফেসার জন চারেক বা পাঁচজনের মত ভদ্রলোককেও ডেকেছিল। সন্ধ্যার কিছু আগেই নিমন্ত্রিত অতিথিবর্গ ভার্সিটির প্রফেসাররা, অমিয়, বিজন, ভবতোষ, রাহাত খাঁন, আকাশ, কুসুম, কচ, আমি, সুশান্ত, উমা, ডোরা (বাড়ীর গৃহকর্ত্তি) (বাড়ীটা) ছোট্ট এপার্টমেন্টটা যেন ঝলমল করে উঠল। ডাইনিং টেবিলে অসংখ্য ডোরার এপার্টমেন্টের বাগান থেকে তোলা লাল, হলুদ গোলাপের তোড়ায় যেন জীবন্ত হয়ে কথা কয়ে উঠল- হে অনাদি, হে অনন্ত, হে অসীম, কথা কও, কথা কও।
সেদিন ডোরা পড়েছিল কাঁচা হলুদ রংয়ের সিল্ক, হাতে ভরতি হলুদ কাঁচের চুরি, কানে হলুদ পাথরের দুল, কপালে হলুদ টিপ, প্রকান্ড চুলে করেছিল লম্বা একটি বেণী। ডোরা নিমন্ত্রিত অতিথিবর্গের সাথে সকলের পরিচয় করিয়ে দিল। তখন ছুটে যাচ্ছিল। জর্জিয়াওয়েলকাম সেন্টারে কতক্ষণ নেমে পথের জন্য একটা ম্যাপ নিলাম। পথের বিভিন্ন দৃশ্য আমাদের হাতছানি দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলল। সন্ধ্যার কিছু আগেই আমরা ওরোল্যান্ড কিচমিতি পৌছে গেলাম। দুধারে রাঙ্গামাটির মত লেক, মাঝখানে রাস্তা একে বেকে চলে গেছে। বিরাট বিরাট দালান-কোঠা, বড় বড় দোকান-পাট, মোটেলে উঠলাম। দুটো কামরা নিলাম। এক কামরায় আমরা ছেলেরা থাকলাম, আর এক কামরায় মেয়েরা থাকল। রান্না খাওয়ার ঝামেলা করলামনা, বাইরে খাব। মেয়েরা বাসায় রান্না করে বাইরে এসে রান্নার ঝামেলা। খাওয়া দাওয়ার কোন চিন্তা নেই। কুসুম, দোলা, উমা, ডোরা এরা যেন গল্পের ফুলঝুড়ি খুলে বসেছে। কত রাজ্যের গল্প, মা-বাবা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব; গল্পের যেন শেষ নেই। কোন কাজ নেই, নাই কথার গল্প। আবার গহনা-শাড়ী এসব বাধা ধরা মেয়েদের মুখরোচক গল্প।

(চলবে———-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।