মধ্যরাত : ১৮১

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম। ডোরা বলল, প্রশান্ত তোমার শরীর ভালত ? পথে কোন কষ্ট হবে না-ত ? দেখো। সুশান্ত বলল, ক’দিন আমরা ভার্জিনিয়ায় বসে থাকব। আমি দু’সপ্তাহের ভিতর টরেন্টোয় চলে যেতে চাই। আমি পাওয়া রুটির টুকরো নাড়াচাড়া করছিলাম। কি বলব ভেবে নিচ্ছিলাম। বতু কিছু বললামনা। যেতে-ত আমাকে এখান থেকে হবেই। আজ হোক, কাল হোক, তবু যেতে হবে। ডোরার মুখটা যেন চন্দ্র গ্রহণের মত একটা কালো ছায়া এসে ঢেকে ফেলল। উমা হাসি হাসি মুখে ডিজনী যাওয়ার লোকে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বলল বলণা গো কি নেব সাথে ? প্রশান্ত দা আমাদের গাড়ীতে থাকবেন-ত ? সুশান্ত বলল, হ্যাঁ, হ্যাঁ। ডোরাদি কোন গাড়ীতে থাকবেন ? সুশান্ত বলল, আমাদের গাড়ীতে। নাশতা খেয়ে যেয়ে চুপ করে শুয়ে থাকলাম। মনটা বড় ব্যাথায় ভারাক্রান্ত হয়ে থাকল। কে জানে কিসের ব্যথা কি বিয়োগ ব্যথা, কি হারানোর ব্যথা আমার সমস্ত জীবন জুড়ে মিলিয়ে গেল।
ডোরা ইউনিভার্সিটির কি কাজে যেন বেরিয়ে গেল। আমরা আসাতে ও ক’দিনের ছুটি নিয়েছিল। ছুটি কি ফুরিয়ে গেছে নাকি বুঝলাম না। উমা কিচেনে রান্না বান্না করছিল। কুসুম দোলা হঠাৎ এসে উপস্থিত। বলল দাদু, সু-খবর কচ পি.এইচ.ডি পেয়েছে। আমি বললাম মিষ্টি কই, খালি মুখে সু-খবর দিতে নেই। কিছুক্ষণের মধ্যে কচ এসে হাজির। হাতে ওখানকার মিষ্টি। কনগ্রাচুলেশন। ওর সাথে হাত মিলালাম, বুকে জড়ায়ে ধরে চুমু খেলাম। কচ অনেক গল্প করল। এতদিন খুব চিন্তায় অস্থিও ছিল মন, খুলে কারো সাথে কথা বলতেও ইচ্ছে করছিলনা। আমার মন আজ আবার ডানা মেলে অনন্ত আকাশে উড়ে চলেছে। আমি হেসে উঠলাম। আমি বললাম, আমরা পরশু রোববার ডিজনী যাওয়ার প্রোগ্রাম করেছি। আমারও ভার্সিটি খুলে যাচ্ছে, সুশান্তরও তাই, তোমার বোন কুসুমকে, আকাশ চৌধুরীকে জানিয়ে দিও। আমি দোলা আপনাদের সাথে যাবার জন্য রেডি, কিন্তু ছোড়দি জামাই বাবুর কথা জানিনা। উমা এসে বলল, আমি ফোন করেছি বলল সন্ধ্যাবেলা জানাবে।
কচ যেন আনন্দে ভরপুর। দোলাও স্বামী গর্বে গর্বিত। ওদের সুখী দেখে আমার আনন্দে মনটা ভরে যায়। আমি বললাম, দোলা তোমার এসএসটা নষ্ট করোনা। ওটা দেবার চেষ্টা করো। দোলা বলল, দাদু ডোরাদি কই ? আমি বললাম, ও বোধ হয় ইউনিভার্সিটিতে। ওরা চলে যেতে চাচ্ছিল, আমি বললা- এখন যেওনা। খাও-দাও বিশ্রাম করো, বিকেলে যেও। এস ডোরার লেখা আকাশে কত রং বইটা পড়ো। ওর লেখায় আমাদের দেশের নির্যাতিত মানুষের কথা শুনতে পাওয়া যায়। ডোরার রচনাবলীর ভিতর দিয়ে নিজস্ব সমাজের এই ঐতিহ্যেও যেমন পুনরুত্থান ঘটিয়েছে। তেমনি আধুনিক সাহিত্যেও সকল উপকরণেরও সংমিশ্রণ ঘটিয়েছে। একই সঙ্গে মানুষের মানবিক মূল্যবোধ, মানবতার বিজয় কেতনের জন্য ডোরা লড়েছে। তার সাহিত্য হাতিয়ার নিয়ে। ডোরার লেখায় মানুষের মানবিক মূল্যবোধ সু-প্রতিষ্ঠিত করার আকুতিই বড় হয়ে উঠেছে।
দোলা বলল, দাদু বইটা দাওনা; আমি নিয়ে যাই। আমি বললাম, আচ্ছা। রবিবার দিন কিন্তু নিয়ে এস। এরি মধ্যে ডোরা ফিরে এসে কচের পি.এইচ.ডি পাওয়ার সু-খবর শুনে আনন্দে ওর মুখটা ছেয়ে গেল। প্রশান্ত একটা পার্টি করনা ? আমি বললাম, ডোরা এ পার্টি কচ এর করার কথা ও এখন পার্টি দেবে। সেদিন আমরা সকলে খুব আনন্দে হাসিতে কচের সাফল্যে খুশী হয়েছিলাম। এরি মধ্যে আমি বললাম, কচ তোমার বিয়ের পর আর কিন্তু একদিনও তোমার গীটার সেতার বাজনা আমাকে শুনাওনি। ডোরা উমা তোমার বাজনার কলা-কুশলী দেখতে চায়। ওরা বিশ্বেস করতেই বিস্ময় বোধ করে যে, তুমি এত ভালো বাজাও। কচ মৃদু হাসল, কচ বলল, পরীক্ষার পর বিনা কাজে ঘুরে বেরিয়েছি। কোন চিন্তা ছিলনা, এখন ? অনেক অনেক চিন্তা। মাথার মধ্যে ঘুড়পাক খাচ্ছে। তারপর বিয়ে করলাম। এখন রোজগারের চিন্তা। আচ্ছা দেখি কখন, কোন জায়গায় বসা যায়। আপনারাত আবার ডিজনী যাচ্ছেন ? আচ্ছা, কুসুমের বাড়ীর ডিনারের দিন বেঁচে থাকলে আপনাদের মিউজিক শোনাব। কচ দোলাকে বিয়ে চলে গেল। রোববার দিন আমরা কথা থাকল ডোরার বাড়ীতে সকলে একত্র হয়ে ডিজনীর পথে পাড়ি জমাব।

(চলবে——–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।