মধ্যরাত : পর্ব-১৮০

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : বাবা-মাকে রোগে ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা করতে পারিনি। ছোট বোন ডাক্তার ডাকতে গিয়ে ডাক্তার এর ভিজিট দেবার সামর্থ নেই শুনে ডাক্তার আসতে অসম্মতি প্রকাশ করল। ডাক্তার এর পায়ের উপর লুটিয়ে পরল, ডাক্তার বাবু আমার মায়ের জন্য একটা প্রেশক্রিপশন লিখে দিন, তবু ঔষধটা নিয়ে মাকে বাঁচাই। ফার্মেসিতে ঢুকে ঔষধ নাড়াচাড়া করতে গিয়ে ঔষধ চুরি করে ধরা পড়ে নাজেহাল হয়। মা বিনা চিকিৎসায় মারা গেল। বাবা দুরারোগ্য ব্যধিতে ভুগে ভুগে বিনা ঔষধে, বিনা চিকিৎসায় একদিন তিনিও চলে গেল। থাকল ৩টা বোন, ১টা ভাই। ভাইটা ছোট, বোন দু’টো স্কুলে যায়। একটা বোন বাড়ী থেকে ছোট ভাইটাকে দেখে। বোন দু’টো লেখা-পড়ায় খুব ভালো। ফোর থেকে স্কলার শিপ পেয়ে, বন্ধুদের কাছ থেকে বই চেয়ে পড়াশুনা করে, বই-নোট করে, এমনি করে মাষ্টারদের সহায়তায় স্কুল থেকে কলেজ, কলেজ থেকে ইউনিভার্সিটি। বোন ৩টি দেখেতে ভালো ছিল। তিন বোনেরই গানে গলা খুব ভালো ছিল। গানের টিচারি করে বড় দু’বোন পড়ার খরচ ও ছোট ভাই বোনটারও খরচ চালাত। এই বড় বোনটিই মেঝ বোনটিকে, ছোট বোনটিকে লালন-পালন ও পড়াশুনা করিয়ে বিয়ে দেয়।
পড়তে পড়তে আমার একটু তন্দ্রা এসে গিয়েছিল। কিন্তু বইটা পড়তে দারিদ্রের একটা করাল ছায়া যেন আমাকে গ্রাস করে ফেলল। ছোট বোনটার স্বামীর সাথে মিল হলনা। বড় বোনের কাছে ফিরে এল। স্বামীও যখন দু’ছেলে-মেয়ের মা, তখন আর এক বিধবা মেয়ের সাথে প্রেমে গদ গদ। এই ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে সে এক বিরাট ফিরিস্তি। ছোট্ট ভাইটি আধো আধো কথা যখন বলতে পারে, তখন বাবা-মা চলে যায়। এই ব্যথা বেদনা, দুঃখ দারিদ্রের মাঝে পড়াশুনা করে এই বড় বোনই সংসারের হালকে আকড়ে ধরে রেখেছে। তাদের কচি কচি ৩টি ভাই বোনের মুখের দিকে চেয়ে নিজের জীবনের সুখ-শান্তি, প্রেম-ভালবাসা সবকিছু বিসর্জন দিয়ে। ভাইটার জীবনটা আরও করুন। সে ম্যাট্রিক পড়তে, আই.এ পাশ করে তারপর বি,এ দিয়ে সে শেষ পর্যন্ত টিবিতে মারা যায়। ঔষধের অভাবে, পথ্যের অভাবে, বিশ্রামের অভাবে। একদিন সে বড়দির মুখের দিতে চেয়ে চেয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। মেঝ বোনটি স্বামীর বাড়ীতে বাবা-মা গরীব ছিল বলে রাত-দিন স্বামীর মুখ ঝামটা খেত। বাপের বাড়ী থেকে তথ্য তালাশ যানা বলে। অনেক বড় উপন্যাস। বড় বোন সকলের চাহিদা মিটাতে, নিজের মনের চাহিদা, শরীরের চাহিদার প্রয়োজন ভুলে গেল। বিরাট বই। পড়তে আমার প্রায় দু’দিন লেগেছিল।
একি ডোরার নিজের জীবনের কথা ? অনেক অনেক ব্যথা, বেদনা, অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা, অনেক অনেক সংযম, বইয়ের মধ্যে লিপিবদ্ধ করে আছে, মানুষের জীবনের অনেক অনেক দুঃখ-কষ্ট। অভাব-অনটন, দারিদ্র, শোক, তাপ জর্জ্জরিত ব্যক্তিগত বলার লেখার অনেক কিছু আছে বা থাকে, সেগুলোই যারা লেখক-লেখিকা তাদের লেখার মাধ্যমে ফুটে উঠে। দু’দিন পর্যন্ত ডোরার সাথে চোখাচোখি বা কথা হয়নি। আমার মন খুঁজছিল সুপ্রিয়া চৌধুরীকে, কে এই সুপ্রিয়া চৌধুরী ? সে কি এই মিস ডোরা ? নায়ক প্রশান্ত চৌধুরী, কে এই প্রশান্ত চৌধুরী ? সেকি আমি ? উৎসর্গ করেছে আমাকে। অনেক উৎকণ্ঠা, অনেক চিন্তায় আমি ভাল করে খেতে শুতে পারিনি। সুশান্ত সকালের খাওয়ার টেবিলে বলল, প্রশান্ত পরশু রোববার আমার মনে হয় আমাদের ডিজনী রওয়ানা হলে ভাল হয়। তুই কচ দেবযানী ও না দোলা কুসুম আকাশ চৌধুরীকে জানিয়ে দিস।

(চলবে————-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।