সর্বশেষঃ

আগামী ১৮ জুলাই ভোলা ও বরিশালে অবস্থান কর্মসূচী

ভোলাকে বঞ্চিত করে গ্যাস অন্য কোথাও নেয়ার চেষ্টা করলে বাঁধার সৃষ্টি করা হবে

ভোলার বাণী ডেস্ক ॥ ভোলা-বরিশাল ব্রীজ নির্মাণ ও জেলায় গ্যাসভিত্তিক শিল্পায়নের আগে জেলার মজুদ এলএনজি করে সিলিন্ডারে আনতে দেয়া হবে না। বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) নাগরিক সমাজের এক বৈঠকে এমন ঘোষণা দেয়া হয়। গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে থাকা কোম্পানী সুন্দরবন ডিস্টিবিউশন লিমিটেড ও ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন কোম্পানীর গোপান চুক্তি বাতিলের দাবি জানানো হয় ওই বৈঠকে। সিলিন্ডারে গ্যাস নেয়ার জন্য ইতিমধ্যে ইন্ট্রাকো কোম্পানী ভোলার জেলা সদরের বেপারী বাজার ও ইলিশা এলাকায় দুটি স্টেশন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। নাগরিক কমিটির সভায় এর তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। ভোলায় অনুষ্ঠিত ওই সভায় বরিশাল থেকে অংশ নেন দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিক আন্দোলনের নেতা ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী। তিনি ভোলা-বরিশালের ব্রীজ নির্মাণ, ভোলার গ্যাস ভোলার প্রতিটি ঘরে ঘরে জ্বালানি হিসেবে সংযোগ দেয়া, গ্যাস ভিত্তিক সার কারখানাসহ অন্যাণ্য শিল্প কারখানা গড়ে তোলা, ভোলায় একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের দাবীগুলো সাথে একমত পোষণ করেন।
ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ চাই আন্দোলন কমিটির সভাপতি মোবাশে^র উল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ভোলার গ্যাস ভোলাকে বঞ্চিত করে অন্য কোথাও নেয়ার চেষ্ট করলে বরিশালের জনগণ ভোলার জনগণের সাথে একত্রিত হয়ে বাঁধার সৃষ্টি করা হবে। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন দৈনিক আজকের ভোলার সম্পাদক মু. শওকাত হোসেন, ভোলা স্বার্থরক্ষা উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক অমিতাভ রায় অপু, প্রথম আলো প্রতিনিধি নেয়ামত উল্লাহ, গ্যাস সংযোগ ঠিকাদার সমিতির সম্পাদক আব্দুল জলিল, শ্রমিক নেতা রবিউল আলম, ইমাম সমিতির সম্পাদক হাফেজ বনি আমিন, কলেজ শিক্ষক আব্দুল বাছেদ, বরিশাল শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মানিক হাওলাদার, এ্যাডভ্যাঞ্চার ক্লাব অব ভোলা’র সম্পাদক এস এম বাহাউদ্দিন সহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। পরে মজুদ গ্যাস দিয়ে ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের শিল্পায়নের দাবিতে লংমার্চ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এই সময় বক্তারা জানান, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী বরিশালের এক জনসমাবেশে বলেছিলেন, ভোলার গ্যাস দিয়ে বরিশাল বিভাগের উন্নয়ন হবে আগে। এবং ওই সমাবেশে তিনি ভোলা-বরিশাল ব্রীজ নির্মাণ করারও ঘোষণা দিয়েছিলন। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। এছাড়া ভোলার গ্যাস ভোলার প্রতিটি ঘরে ঘরে জ্বালানি হিসেবে সংযোগ দেয়া, গ্যাস ভিত্তিক সার কারখানাসহ অন্যাণ্য শিল্প কারখানা গড়ে তোলা, ভোলায় একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করারও দাবী জানানো হয়।
বক্তারা আরো জানান, ভোলা থেকে চট্টগ্রাম, মংলা, পয়রাবন্দরসহ ২১ জেলার সহজ যোগযোগ সুবিধা রয়েছে। ফলে মজুদ গ্যাস দিয়ে ভোলায় শিল্পায়ান হলে এর উৎপাদিত পণ্য সহজে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নেয়া যাবে। এ জন্য ভোলা-বরিশাল ব্রীজ নির্মানের গুরুত্ব অনেকটা বেড়ে যাবে।
এদিকে বাপেক্স সূত্রে জানা যায়, ভোলা জেলায় বর্তমানে ৯টি কূপ খনন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মজুদ পাওয়া গেছে প্রায় পোনে দুই ট্রিলিয়ান ঘনফুট। নতুন করে আরো ৫টি কূপ খননের বিষয়টি প্রক্রিয়াধিন। এতে আরো দেড় ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনরা রয়েছে। ফলে বিপুল পরিমান গ্যাস দিয়ে জেলায় সহজেই শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে বলেও জানান বাপেক্স কর্মকর্তারা।
এদিকে সুন্দরবন গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর ভোলার দায়িত্বে থাকা ডিজিএম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় ঢাকার শিল্পকারখানা সচল রাখতে সিলিন্ডারে গ্যাস নেয়ার জন্য ইন্ট্রাকো’র সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় সুন্দরবন। এদিকে সুন্দরবনের এমন সিদ্ধান্তকে হটকারিতা বলে উল্লেখ করেন নাগরিক সমাজ। তারা মনে করেন ভোলায় গ্যাসের মজুদ থাকলেও ভোলাবাসীকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক নতুন কোন সংযোগ দেয়া হচ্ছে না। জেলায় ব্যবহারের সুযোগ না দিয়ে কোন গ্যাস কোথাও নিতে দেয়া হবে না। ওই সভায় সুন্দরবন অফিস ঘেরাও কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও জানানো হয়।
সভাশেষে “ভোলার গ্যাস রক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিক আন্দোলন” নামে একটি সংগঠন দাড় করানো হয়। এতে মোবাশ্বির উল্যাহ চৌধুরীকে আহ্বায়ক এবং ডাঃ মণীষা চক্রবর্তীকে সদস্য সচিব নির্বাচিত করা হয়। সিদ্ধান্ত হয় আগামী ১৮ জুলাই একযোগে ভোলা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চত্ত্বরে এবং বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের চত্ত্বরে অবস্থান কর্মসূচী পালন করা হবে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।