মধ্যরাত : পর্ব-১৫৯

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : কচ আমার মুখের পানে তাকিয়ে ছিল। আর আমাকে দেখে কি যেন ভাবছিল। আমি বললাম, আমাকে কি দেখছ ? যাও ঘরে যাও, আর একজন তোমার পথ চেয়ে বসে আছে। কচ লজ্জা পেয়ে চলে গেল। আমি সন্ধ্যার সময় কতক্ষণ টেলিভিশনের খবর শুনলাম। তারপর কিছু খেয়ে ঘুমুতে গেলাম। সুশান্তর কড়া হুকুম প্রশান্ত একটু ঘুমের চেষ্টা কর। একটু ঘুমাও তাই চুপ করে শুয়ে থাকি। ও ভাবে আমি বুঝি ঘুমিয়ে পরেছি। কিন্তু আমি ঘুমাইনি, ঘুম আমার আসেনা, কতরাত, কত বছর যে আমি ঘুমাইনি তা আমি আজ নিজেও ঠিক করতে পারিনা।
সুশান্ত ওর ঘরে উমার সাথে ছিল। বিয়ের হুলস্থুল এ অতিথি অভ্যাগতদের ভিড় বেচারা এ কয়দিন উমার সাথে থাকেনি। তবু সব সময় ওর মুখে হাসি ফুটে থাকত, কি ধৈর্য্য-ত্যাগ-তিতিক্ষা। আদর্শ ওর কাজে কর্মে প্রকাশ পায়। দোলা-ত ওর কেউনা, আমার নাতনী। তবুও সব ঝামেলা ওর উপর দিয়েও গেল। তারপর আমার অসুস্থ্যতা ওর অনেকখানি কাজের ক্ষতি হয়েছে। ভার্সিটি থেকে ছুটি নিয়ে মন্ট্রিল থেকে আমাকে, দোলাকেসহ নিয়ে এল। সত্যি সুশান্তর অনেক অনেক ধৈর্য্য। পরের জন্য দরদ, কর্তব্য বোধ সদা জাগত। বর্তমান বিংশ শতাব্দির যুগে এরকম বন্ধুত্ব দুর্লভ। আমি আর ভাবতে পারছিনা। কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে জেগে উঠলাম। পাশের রুম থেকে সুশান্তর নাক ডাকা শুনতে পেলাম। শুয়ে শুয়ে আর ভাল লাগছিলনা। পিঠ ব্যথা করছিল, বিছানা থেকে উঠে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে রাতের অন্ধকার কে দেখছিলাম।
কি অন্ধকার ভীষণ অন্ধকার। এর নাকি একটা ভীষণ রূপ আছে। কবিদের কাব্য কবিতায় অনেক জায়গায় প্রকাশ পায়। কয়েকটা পাখি কিচির-মিচির করে ও ডালে, এ ডালে ওড়াওড়ি করছিল। একটা সুন্দর সাদা ধবধবে বেড়াল জানালার ফাঁক দিয়ে মিউ মিউ করে ঢুকে পড়ল। বাড়ীর অনেক দিনের পুরোন কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করে বেড়ালটাকে ধাওয়া করছিল। আমি অপলক নেত্রে আঁধার রাতের এইসব দৃশ্য দু’চোখ দিয়ে অবলোকন করছিলাম। রাত আস্তে আস্তে বেড়ে যাচ্ছিল। রাতাজগা পাখি মধ্যরাতে প্রহর করছিল। আকাশের তারাগুলি মিটমিট করে আমার পানে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছিল। আমার মত ওরাও রাত জেগে রাতের প্রহর গুনে।
আস্তে আস্তে ভোর হয়ে গেল। ভোরের আলো সমস্ত পৃথিবীর উপর পরে চারিদিক আলোয় আলোকিত হয়ে গেল। সুশান্তর গলা শোনা গেল। ওখানার টেবিলে বসে আমাকে ডাকদিল। আমি মুখ হাত ধুয়ে পরিপাটি হয়ে খাওয়ার টেবিলে গেলাম। নাতশা খেতে খেতে সুশান্ত বলল, প্রশান্ত ভাল করে খাওয়া-দাওয়া ও বিশ্রাম করে তাড়াতাড়ি করে শরীরটাকে শারিয়ে তুল। তোর সুস্থ্যতার উপর বাইরে ফ্লোরিডা বা ডিজনীতে যাওয়া নির্ভর করছে। আমি বললাম, এখন অনেক সুস্থ্য বোধ করছি। তুই আমার জন্য অহেতুক ভেবে মন খারাপ করসিনা। তুই ছুটি নিতে পারিস বিনাদ্বিধায়। উমা বলল, তবু প্রশান্ত দা প্রেসারের কোন মাথা মুন্ডু নেই। আপনি সাবধানে থাকবেন। আপনার জন্য আমারও চিন্তা হয়।

(চলবে————)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।