মধ্যরাত : পর্ব-১৫৮

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : আমি বললাম, বেশ। তোমার যা ভালো লাগে তা করো। এমন সময় ফোন বেজে উঠল। দাদা দাদা কই, উমা এসে বলল, কচ কুসুম ডাকছে। কচ খাওয়ার টেবিল থেকে উঠে গেল। ফোন ধরল হ্যাঁলে কে কুসুম ? দাদা তুমি কখন আসবে। কচ বলল, আমি দু’দিন পর আসব। কুসুম তুই বৌদিকে নিয়ে আয়না ? আমরা জাহাজে কুরে ঘুরব। কচ এর কথা গুলি আমি শুনছিলাম। বোনের প্রতি ওর খুব দরদ। বৌদিকেও ডাকছে। কচের অনুরোধে আমরা ঠিক করলাম সকলেই একটু ঘুরব। আমি আরও সুস্থ্য হয়ে উঠি। কচের কথামত আমরা বিয়ের দু’দিন পর হাজাজে করে নদীতে ভ্রমন করা ঠিক করলাম।
বেশ লাগল, সুশান্তই বন্দোবস্ত করল। বাসা থেকে লুচি, পরটা, মাংস, ডিম, মিষ্টি এসব নিয়ে ডোরা-উমা-সুশান্ত-আমি নতুন বর-বধু দোলা-কচ আর কুসুম বৌদি বিশ্বজিত বাবু সহ বিরাট একদল নিয়ে আমরা নদী ভ্রমন করতে এগিয়ে চললাম। দু-তিনটা গাড়ী পার্কিং এ রেখে টিকেট কেটে জাহাজে চড়লাম। জাহাজ ভর্তি নর-নারী প্রমোদ তরীতে ভ্রমনের জন্য এসেছে। আমরাও তার ব্যতিক্রম নই। দোলা-কচ অনেক দূরে এক কোনায় চুপ করে বসেছিল। নদীর মনোরম দৃশ্য আমাদের অভিভুত করে ফেলল। দোলার কপালে সদ্য লাল তাজা সিঁদুরের লাল টকটকে ফোটা। পড়নে লাল কাতান, হাত ভর্তি লাল কাচের চুড়ি, সকলের দৃষ্টি তার প্রতি নিবদ্ধ।
বেশিক্ষণ ঘুরতে ভাল লাগলনা। জাহাজ থামার সাথে সাথে আমরা নেমে পরলাম। বাসায় এলাম সকলে। বসলাম চা খেলাম, বললাম কচ তোমরা দু’জনে যেখানে ভাললাগে যাও। ওরা চুপ করে হাসল। কচ তার বাড়ী যেতে চাইল। আমি বললাম বেশ যাও। দোলাকে নিয়ে ও চলে গেল। বিয়ের হৈ-হুলস্থুল অনেক কমে গেল। এ কয়েক দিন বিয়ের আনন্দে বাড়ীটা যেন সরগরম হয়েছিল। যেন কত ভাল লেগেছিল। আজ আমার মনে হচ্ছে কেউ নেই, কিছু নেই।
ডেরা যেতে চাইল। ওর ইউনিভার্সিটি ছুটি ফুরিয়ে আসছে। বলল, প্রশান্ত আমারত এখন ফিরতে হয়। আমি বললাম, যাবে ? যাও। সুশান্ত বলল, মিস এত কম ছুটি নিয়ে এসেছেন ? ডোরা বলল, আপনি উমা প্রশান্তকে নিয়ে আমার ওখানে আসুন না ? সুশান্ত বলল, যাব। প্রশান্তর শরীরটা একটু সারুক, আমি শিঘ্রই ছুটি নিব। সেদিন ডোরার যাওয়ার দিন আমরা সকলে ডোরাকে এয়ার পোর্ট নিয়ে প্লেনে তুলে দিয়ে এলাম। ডোরা চলে গেল। যাওয়ার সময় হাত ধরে বার বার অনুরোধ করল, প্রশান্ত বেড়াতে এস, না আসলে কিন্তু আমি ভীষণ রাগ করব। আমি ডোরার যাওয়ার পথে নির্নিমেষ নয়নে চেয়ে থাকলাম।
আমি সুশান্ত ও উমার তত্ত্বাবধানে থাকলাম। উমার আদর-যতœ, সেবা-শু¯্রুশায় ধীরে ধীরে আমি সুস্থ্য হবার পথে এগিয়ে গেলাম। দোলা রোজ ফোন করে সাদু কেমন আছ। শরীর ভাল-ত ? দোলা ফোনে জানাল, কুসুম খুব ধরেছে ভার্ভিনিয়া যাবার জন্য। ভার্জিনিয়া থেকে ডিজনী যাবে। আমি বললাম, যাও। আনন্দ কর, বেড়াও, ফুর্তি কর। কচ বিকেলের দিকে এসে জানাল, ওরা দু’জন নায়াগ্রা যাবে। সেখানে দু’রাত মোটেলে থাকবে। শুনে খুশীতে আনন্দে আমি লাফিয়ে উঠলাম। এইত চাই, যৌবনের রংয়ে রাঙ্গিয়ে দাও তোমার উন্মুক্ত যৌবনকে। কচ বলল, দাদু আপনি খুব রসিক না ? আমি বললাম, রসিক না, ওমর খৈয়াম বলেছেন, জীনটাকে ভোগ কর; খাও-দাও, ফুর্তি কর। দুঃখ করে কোন লাভ নাই। ক্ষণিকের পৃথিবীতে আমরা এসেছি। দু’দিনের মুসাফির খানায়। তাই জীবনটাকে গানে, গল্পে, হাস্যে লাসে, প্রেম ভালবাসায়, আলিঙ্গনে জীবন সুধা পান করো।

(চলবে———)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।