মধ্যরাত : পর্ব-১৫৭

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : দোলা কচ সেই ঘরে ঢুকে দরজায় চেয়ার চেপে রাখল। তখন অনেক রাত, আকাশের বড় চাঁদটা সেদিন অনেক বড় করে উঠেছিল। তারায় তারায় বড় আকাশটা ছেঁয়ে গিয়েছিল। তখন অনেক রাত, গভীর রাত, মধ্য রাত, দুর আকাশের সীশানা বেয়ে দূর প্রাচ্যেও অনেক পাখি, অনেক উচু দিয়ে যাত্রা করেছে সীমাহীন দূর প্রাচ্যে। আমি সুশান্ত এক রুমের ভিতর আছি। ও ঘুমুচ্ছে, আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। গভীর রাতে নাকি ভগবান শেষ আসমানে নেমে আসেন। মানুষের আরাধনায় সাড়া দেন। আমি, আমি জানি- মধ্য রাতে জেগে অন্তহীন আকাশের পানে চেয়ে প্রশ্ন রাখি এক খানা অনন্ত সপ্তর্ষির কাছে। ভগবান ওদের আকাশে সৃষ্টি করে, আকাশে সদা জাগ্রত রেখেছেন। আমাকেও সৃষ্টি করে এই মধ্য রাতে আমাকেও সৃষ্টি করে এই মধ্য রাতে তার সাথে কথা বলার জন্য, তার সাধনায় মগ্ন থাকার জন্য, এই মধ্য রাতে অনন্ত প্রহরীর মত, নিশিজাগা পাখির মত, প্রহর ঘোষণা করতে বলেছেন।
ভোর হলো। উমা ডোরা ওরা দু’জনেই ঘুম থেকে উঠে। ভোরের টেবিলে নতুন জামাইর জন্য নানা রকম নতুন নতুন ধরনের নাশতা বানিয়েছে। আমারত মনে হয় সেরকম নাশতা আমি উমার হাতে কোনদিন খাইনি। ডোরা ও দু-একটা নতুন জিনিষ তৈরী করে টেবিলে রাখল। মিষ্টি, বিয়ের মিষ্টি অনেক ঘরে ছিল, ওসব কেউ হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতেও চায়না। দোলা ও কচ ¯œান করে খেতে এল। দোলাকে সদ্য বিবাহিত লাল সিদুঁরের ফোটায়, সিথিতে সিঁদুরের দাগে, গহনায় শাড়ীতে যেন অপূর্ব্ব লাগছিল। সত্যি বিয়ের লগ্নে নাকি ছেলে মেয়ের রূপ অনেক বেড়ে যায়। এখন নিজের চোখে তা দেখে বিশ্বাস করলাম। দোলা কচ সুশান্ত আমি খেতে বসলাম। বললাম– উমা জামাইর জন্য এত নতুন নতুন জিনিষ তৈরী করেছে ? দোলার মা যা করত তুমি তা করেছ। ডোরা বলল বারে ? আমি দু’টো নতুন আইটেম করেছি তার-ত প্রশংসা করলেনা প্রশান্ত। আমিও সুশান্ত হেসে উঠলাম। আমরা দু’জনেই বললাম তাই নাকি ? আমি বললাম, তা তোমার আন্তরিকতা প্রকাশ পায়। ডোরা বলল শুধু আন্তরিকতা ? বল, ভালবাসা। আমি বললাম, আমি খুব দুঃখিত, বলতে ভুল করেছি। তা তোমার একনিষ্ঠ ভালবাসা প্রকাশ পায়।
অনেক কথায়, অনেক গল্পে, অনেক হাসিতে, সেদিন নতুন জামাই কচের সাথে দোলার সাথে আমরা সকলে মিলে নাশতা খেলাম। সেদিনটা আমার জীবনের খাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকল। খাবার টেবিলে কচ বলল, দাদু চলুন না আমরা হানিমুন করে আসি। আপনারা দু দাদু, বৌদি সকলে আমরা মায়ামি ডিজনী যাই। সুশান্ত বলল, তুমি দোলাকে নিয়ে ঘুরে এস। প্রশান্ত এইত ক’দিন জ্বরে-প্রেসারে টরেন্টো এসেও ভুগল। ওর শরীরটা একটু সারুক। আর আমার ইউনিভার্সিটি-ত খোলা। বড়দিনের জন্য ভাবছি একটা লম্বা ছুটি নিয়ে মায়ামি বা ডিজনী যেতে।
কচ বলল, চলুন জাহাজে করে নদীতে ভ্রমন করা যাক। লেকের পাড়ে বসে আকাশের চাঁদ দেখে তারা গুনা যাক। আমরা হেসে উঠলাম। আমি বললাম, কচ তুমি দোলাকে নিয়ে মায়ামি যাও। সমুদ্রের উচ্ছলতা উদ্দলতা উদ্দমতা যৌবন মদে মত্তা মায়ামিকে দেখে তোমাদের ভালো লাগবে। কচ বলল, দাদু আপনি আরও সুস্থ্য হোন, আপনাকে না নিয়ে আমি যাবনা। দিন ১৫ কি মাস খানেক পর আমি সিদ্ধান্ত নেব। এখন টরেন্টোর মধ্যে সুন্দর সুন্দর জায়গাগুলি দর্শণ করব, নায়াগ্রা যাব।

(চলবে———-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।