মধ্যরাত : পর্ব-১৫৫

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : আমি বললাম, আজ দোলাকে কচ এর হাতে তুলে দিতে আমার বুক ভেঙ্গে যাচে॥ছ এত ¯েœহ করে ভালবেসে, আদর করে আমি—–আমি পারবনা সুশান্ত। সুশান্ত বলল, তোকেই করতে হবে। আমি মন শক্ত করে এগিয়ে গেলাম। ঠাকুর মন্ত্রপাঠ করছেন, দোলা-কচ বিয়ের পিড়িতে বসা। দোলার দু’চোখ দিয়ে অজ¯্র জল গড়িয়ে পরছে। তখন শুভদৃষ্টি, সময় একটা সুন্দর ওড়না দিয়ে ওদের দু’জনকে ঢেকে দেওয়া হল। দোলা জল ভরা দুটু চোখ নিয়ে কচ এর বিশাল বড় বড় দুটো চোখের পানে তাকিয়ে ছিল। তারপর সাতপাক ঘোরান হল। আমি বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সম্প্রদান এর পালা আস্তে আস্তে, ধীরে ধীরে দোলার কাছে এগিয়ে গেলাম। দোলার দু’খানি হাত আমি কোনদিন ধরে দেখিনি। আজ প্রথম ধরে কচের হাতে সম্প্রদান করলাম। দোলা আকুল হয়ে কেঁদে উঠে আমার কোলে মাথা রাখল। আমিও নিজকে সংবরণ করতে পারলাম না। ফুলে-ফুলে কেঁদে উঠলাম।
কচ নত মন্ত্রকে সব দেখছিল। তারপর আমি সরে এলাম। সুশান্ত আমাকে ডেকে নিয়ে দূরে বসিয়ে রাখল। তারপর বিয়ের আনুষ্ঠানিক খুটি-নাটি-বাসি বিয়ে এসব সারতে দু’দিন লেগে গেল। বিয়ের যৌতুক সেরকম কিচুই বিশ্বজিত বাবু দাবী করেনি। তবু আমি দোলার জন্য খাট, ড্রেসিং টেবিল, সোফাসেট, ওয়ার্ড রো এসব দিলাম। দোলা চলে গেল। শ্বশুর বাড়ীতে (বিশ্বজিত বাবুর বাড়ী)। দোলার ফুলশয্যা হবে। চব্বিশ তারিখ ওদের বৌ-ভাত। সেদিন আমাদের সকলের নিমন্ত্রণ, আমার জ্বর জ্বর; ঔষদের দৌলতে আর উমা-ডোরা ওদের সেবা-যতেœ অনেক কমে গেছে। কিন্তু আমি মানসিকভাবে অনেক ভেঙ্গে পরেছি। দোলা চলে যাওয়াতে আমি বড় অসহায় বোধ করছি। আমার শয়নে স্বপনে, জাগরনে অহরহ দাদু, দাদু ডাক শুনছি। চোখের সামনে ছায়ার মত যেন দেখছি দোলা ঘুরছে, ফিরছে, কার্লমার্ক, গান্ধী, নেহেরু, মাওসেতুং এর বই নিয়ে আমার সাথে তুমুল বাত-বিতন্ডা করছে। আমি ওর সাথে হেরে যাচ্ছি।
বৌ-ভাতের দিন উমা-ডোরা-সুশান্ত আমাকে জোর করে ধরে নিয়ে গেল। আমি বাহির বাড়ীতে বসেছিলাম। বিশ্বজিত বাবু আমাকে দোলার ঘরে ডেকে নিয়ে গেল। তখন দোলা একটা গাঢ় সবুজ রংয়ের বানারসী পড়ে বসেছিল। চোখদুটো ফোলা ফোলা। আমাকে দেখে দাদু বলে ছুটে এসে বুকে ঝাপিয়ে পড়ল। কেঁদে কেঁদে বলল দাদু, তুমি আমাকে ভুলে যেওনা। এখানে কেই নেই দাদু। দিদিমা নেই, মা নেই, স্বপ্ন-ইন্দ্র কেউ নেই দাদু। আমি বললাম, তুই চুপ কর। আমি সব বুঝি, সব জানি। ঘর ভর্তি নিমন্ত্রিত মহিলা, অল্প বয়সের মেয়েরা। কুসুম এসে আমাকে প্রণাম করল। বলল বৌদি তুমি কেঁদনা। তুমি কাঁদলে আমার মন খুব খারাপ লাগে। আর দাদা খুব দুঃখ পাবে। বিশ্বজিত বাবু ছুটে এলেন, দোলা কেঁদনা। আমি তোমাকে প্রশান্ত বাবুর মত ¯েœহ মায়া-মমতা দিয়ে ঘিরে রাখব।
দোলার প্রতি শ্বশুর কূলের ¯েœহ ভালবাসা দেখে, আমি যেন আকুল সমুদ্রের এক কূল কিনারার হদিস পেলাম। তবু, তবু যদি দোলা নিজের বুদ্ধির বলে সকলের মন জয় করে নিজের আসন প্রতিষ্ঠা করে নিতে পারে। মাধুরী (কচের বৌদি) খুব ব্যস্ত সকল নিমন্ত্রিত নিমান্ত্রিতদের দেখা শুনে, খাওয়া-দাওয়া, আদর-আপ্যায়ন তার উপরই ভার। কুসুম তার বৌদিকে নিয়ে ব্যস্ত। তবু মাধুরী আমাকে প্রণাম জানাল। দোলার কাছে বসে গল্প করতে বলল। সকলের সাথে আলাপ পরিচয় করে দিলেন। বললেন, দোলার দাদু। উমা-ডোরা ওরা ও দোলার ঘরে দোলার থেকে অনেক দূরে বসে গল্প-গুজব করছিল। কচকে মেয়েরা ডেকে নিয়ে এল ফাঁকি দিয়ে। কচ এসে বলল, দাদু ডেকেছিলেন ? আমাকে প্রণাম জানাল। বললাম, দাদু আমি-ত ডাকিনি। তোমার নিজেরই আসার প্রয়োজন হয়েছে, তাই এসেছ বল।

(চলবে——)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।