মধ্যরাত : পর্ব-১৫৪

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : অনেক কথা বার্তা হল। কচ চুপ করে সব শুনল। নতুন জামাই নতুনের মতই থাকল। আমি বললাম, কুসুমের জামাই এসেছে ? কচ বলল, হ্যাঁ। ও বলল, আসি দাদু। আমি বললাম এসো। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আমার বিছানার পাশের জানালা দিয়ে অজ¯্র আলো এসে আমার বিছানাকে আলো করে দিয়ে গেল। এই সব বড় বড় ধনীদের দেশ আমার একদম ভালো লাগে না। এই জন্য ভাললাগেনা সব আর্টিফিশিয়াল। চাঁদের আলো যে একটু উপভোগ করব তাও পারিনা। লাইট আর অসংখ্য লোক ইলেট্রিক এর উপর ইলেট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর পি,এইচ,ডি করছে। তাহলে পৃথিবীটাকে কৃত্তিমতায় ছেয়ে ফেলবে।
আমার কিন্তু এই কৃত্তিমতা একদম পছন্দ নয়। সেজন্য নায়াগ্রা সি-বিচ, পাহাড়, গভীর গভীর বন, বীথির কাছে বা নদ-নদী, সমুদ্র, মেঘলার, পাশে আমি মন বিছিয়ে ওদের সাথে কতক্ষণ কথপোকথন করি। তবু এই কৃত্তিমতার মধ্যে বেঁচে আছি। জানিনা কত দিন বাঁচব। দোলা এসে কাছে বসল, দাদু বল; তুকি কি খাবে ? আমি বললাম, দোলা আমার পিয়াজি খেতে ইচ্ছে করছে, আর কুমড়োর বড়ি দিয়ে একটু রুই মাছ রান্না কর। তোর হাতের রান্না একদম বড়দির হাতের রান্নার মত। উমাও চমৎকার রাঁধে, তবু আজ তোর হাতের খাব।
দোলা খুশী খুশী মনে চলে গেল। আর একদিন পর ওর বিয়ে, ওকে দূর করে দিতে আমার মন চাইছেনা। কাকেওত আমি চিরদিন কাছে রাখতে পারবনা। তবু মেয়েটা আমার কাছে এসেছিল, আমার সুখ-দুঃখের অংশগ্রহণ করেছিল। ভার্সিটিতে যেত, রান্না করত, গান শেখত, গান শুনতে ভালবাসত। ও আসার পর আমার আঁধার ঘর আলো জ্বলত। আজ আমার জীবনটাকে আঁধারে ম্লান করে দিয়ে ও গিয়ে অন্যেও ঘরে আলো জ্বালাবে। কচ কত ভাগ্যবান। এমন একটি সুশ্রী শিক্ষিতা বিদষীভার্য্যা ওর ভাগ্যে ভবিতব্য মিলিয়ে দিলেন। কত জনম জনম তপস্যা করলে এরকম একটি গৃহলক্ষ্মী কপালে মিলে।
আর দোলা ? খুব ভাগ্যবতী, কচের মত এত উচ্চ শিক্ষিত, গান বাজনায় পটু, স্বাস্থ্যে-সৌন্দর্য্যে কমনীয়তায়, নমনীয়তায়, প্রতিভায়, সমুজ্জল ছেলে এই টরেন্টো-মন্ট্রিলে খুঁজে পাওয়া দুস্কর। এতটুকু অহঙ্কার কচের নেই, আত্ম অভিমান নেই, আত্মমর্যাদার বালাই নেই। পরের খুশীতে ও খুশী। ধীরস্থির ন¤্র বিনয়ী। লোকের দুঃখে দুঃখী, সুখে সুখী। সুখের সন্ধানে সে ঘোরেনা, পরকে সুখী করে দেখে বোধ হয়, ভগবান তার কপালে সুখ এনে দেয়। বিয়ের দিন ভোর থেকেই সানাই বাঁজছে। বর এলো বিয়ে হয়ে গেল। দধি মঙ্গল হয়ে গেল। কড়িখেলা চলছে, বন্ধু-বান্ধবীরা সব ভিড় করে দেখছে। দোলা নতুন চকচকে বানারসী পড়ে ঘোমটার আড়াল থেকে কাকে যেন খুঁজছে। এখন সম্প্রদানের পালা, আমি সুশান্তকে বললাম, সুশান্ত তুই সম্প্রদান কর। সুশান্ত বলল, প্রশান্ত তুইকি পাগল হলি ? তুই ওর দাদু, তুই মেয়েটাকে সম্প্রদান কর। (চলবে———)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।