মধ্যরাত : পর্ব-১৫৩

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : সুশান্তকে আমি কাছে ডেকে বললাম, একটু ফোন কর। আমাকে এসে মিউজিক শুনিয়ে যেতে। সুশান্ত বলল, প্রশান্ত কি কুসংস্কার আছে, আশির্বাদের পর ছেলে নাকি বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত শ্বশুর বাড়ী আসেনা। আমি শুয়ে শুয়ে বললাম, বাদ দে ও সব কুসংস্কার। ওকে ডাক আমার মাথার কাছে এসে বসুক। সুশান্ত কচকে ফোন করল। তোমার দাদুর ভীষণ প্রেসার বেড়েছে, বিছানায় শোয়া, তোমাকে দেখতে চায়। কিছুক্ষণের মধ্যে কচ এল। আশির্বাদের পাঞ্জাবী, পরণে নতুন ধুতী, কপালে শ্বেত চন্দনে আল্পনা, মুখে মৃদু মৃদু স্বলাজ হাঁসি। তখন উমা, ডোরা আমার কাছে বসেছিল, কচ ঢুকেই প্রণাম জানাল।
ডোরা অবাক হয়ে কচকে দেখছিল। যেন স্বর্গ থেকৈ কোন দেবদূত আমার ঘরে এসে ঢুকল। রূপ যেন আজ শতগুনে বেড়ে গেছে। আশির্বাদের পরকি মানুষ সুন্দর হয় ? কে জানে জানিনা। অনেক দিন দেশের বিয়ে দেখিনি। কচের চাওয়া পাওয়া, মান মন্দিরের মানস প্রতিমাকে আজ কাছে পেতে চলেছে। অজানা আনন্দে, জানা আনন্দে, বসন্তের পুষ্পিত কাননে লাখে লাখে মঞ্জুরীর সুগন্ধে এখন সে বিভোর। অধীর, ব্যকুল সেই সুন্দরের মাঝে স্নান করে আরও সুন্দর, আরও নবীন, আরও কিশোর, আরও তরুণ।
আমি বললাম, কাছে এস কচ। আমার মাথায় তোমার স্নেহশীতল হাতখানা রাখ। আর আর ঐ মিউজিকটা বাজাও। জীবনে যদি দীপ জ্বালাতে নাহি পার। উমা বেহালাটা এনে ওর কাছে রাখল। ওকে খাবার জন্য চা-মিষ্টি-কোন দিল। একটু মিষ্টি মুখে দিল। তারপর বেহালাটা কোলের পর নিয়ে ছর টানতে লাগল। বেহালাটায় আমার সেই ইষ্পিত গানটা বেজে বেজে থেমে গেল। সারা ঘরটায় যেন ধ্বনি হতে লাগল মোর সমাধির পরে জেলে দিও। জীবনে যদি দীপ জ্বালাতে নাহি পার মোর সমাধির পরে জ্বেলে দিও।
উমা বলল প্রশান্ত দা, কি সব অলুক্ষণে গান। আমি বললাম, উমা দুঃখ আছে বলে, ব্যথা আছে বলে, বেদনা আছে বলে, চাওয়া-পাওয়ার অহেতুক বিঘ্ন আছে বলে, কবিরা এসব গান সৃষ্টি করেছে। কচ বলল, দাদু আপনি কি লিখেন ? আমি বললাম, আমি না। আমার বান্ধবী লিখে, আকাশের কত রং, নামে মিস ডোরার একখানা উপন্যাস বাজারে চলছে এবং খুব নাম করেছে। কচ মুগ্ধ সৃষ্টিতে ডোরার পানে চেয়ে দেখল। ডোরা বলল, প্রশান্ত এ তোমার বড় দোষ। নিজের গুন চাঁপিয়ে রেখে পরের গুন নিয়ে বাড়াবাড়ি। ডোরা বলল, আপনার দাদু একজন নাম করা লেখক। আমরা ঘষে মেজে কোন রকম দাঁড়িয়েছি। আর আপনার দাদু ? নাট্যকার, গায়ক, শিল্পী, লেখক, ইউনিভার্সিটির আর্টের জন্য নামকরা ছাত্র। ইউনিভার্সিটিতে সিরাজ-উদ-দ্দৌলা করেছিল। অবিকল সত্যি সিরাজ। কোথায় আপনাদের বাংলাদেশের আনোয়ার হোসেন ? ছাই।

(চলবে————)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।