মধ্যরাত : পর্ব-১৫২

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

 (গত পর্বের পর) : ডোরা কাছে এসে বলল, প্রশান্ত দিলেত সে মেয়েটাকে কাঁদিয়ে। নাঃ তোমাকে নিয়ে আর পারলাম না। সুশান্ত এসে বলল, কি ছেলে মানুষী করছিল প্রশান্ত। অসুখ মানুষ মাত্র সকলের হয়। তবু তবু আমি যেন দোলার কোলে মাথা রেখে প্রাণ ভরে কাঁদলাম ও বড়দি বড়দি বলে। দোলা কেঁদে ফেলল দাদু দিদিমাত আমাকে তোমার কাছে পাঠিয়েছিল, তুমি একা তোমাকে দেখার জন্য। দাদু, তুমিত আমায় দুর করে দিচ্ছ। আমি আর কোন কথা বলতে পারলাম না। অজ¯্র কান্নার আবেগে আমার কণ্ঠ রোধ হয়ে আসছিল। চোখ বুজে থাকলাম তারুণ্যের দিন কচের আশির্বাদের পালা। দোলা সারা রাত জেগে আমার সেবা করে। উমা সুশান্ত আশির্বাদের সাজ সরঞ্জাম মিষ্টি দই সব নিয়ে বিশ্বজিতের বাড়ী গেল। সাথে সুশান্তর কয়েকজন ঘনিষ্ট বন্ধু গেল, বান্ধবীদের বাড়ী থেকে যাওয়ার জন্য বিশ্বজিতের বাড়ীর লোকেশান বলে দিল। আমার অসুখের জন্য বাড়ীতে বন্ধু-বান্ধবীদের আসার জন্য আগ্রহ দেখালনা। বাড়ীটা যেন নিঝুম লাগল। দোলা আমার পাশে বসে ঝিমুচ্ছিল। আমি বললাম যা একটু ঘুমো গিয়ে। দোলা ডোরাকে ডেকে দিয়ে বিছানায় একটু গড়াতে গেল।
ডোরা এসে কপালে হাত বুলাতে লাগল, মাথায় আইসব্যাগ রাখল। আমার হাত খানা হাতে নিয়ে নিজের মুঠোয় ধরে রাখল। আমি যেন শান্তিতে, আবেশে চোখ বুজলাম। যেন কত যুগের, কত বাসনার চাওয়া-পাওয়ার উর্ধ্বে অবস্থান করছিলাম। স্বর্গ থেকে যেন কিন্নবীরা আমাকে পুষ্প বৃষ্টি করছিল। আমি যেন আস্তে আস্তে কি বলছিলাম, ডোরা আমার মুখের কাছে ওর মুখ স্পর্শ করল। আমি কেঁপে উঠলাম। ওর গাল দুটো আমার গালের সাথে লাগিয়ে বলল, প্রশান্ত আমি তোমায় ভালবাসি। জীবনে-মরণে আমি তোমার। আমি ফুলে ফুলে কাঁদছিলাম, কতযুগের পুঞ্জিভূত বেদনা সঞ্চিত ছিল তা কেঁদে আমি বুকটাকে হাল্কা করতে চাইলাম। ডোরা বলল প্রশান্ত উত্তেজিত হয়োনা। আমি ভীষণ ভীষণ উত্তেজিত হয়ে গেলাম। ও তাড়াতাড়ি আইস ব্যাগটা মাথায় ধরল। আরও আরও এগিয়ে এসে ওর বুকের সাথে আমার মুখটা আরও আরও কাছে টেনে নিল।
ও কতক্ষণ এই ভাবে ছিল আজ আমার সেকথা মনে নেই। আমি যেন সেদিন একটা নিরাপদ আশ্রয় ওর বুকের মধ্যে পেয়েছিলাম। শিশু যেমন মাতৃক্রোড়ে একটু নিরাপদ আশ্রয় খুজে, আমি যেন সব হারিয়ে, সব বিলিয়ে ডোরার একটু আশ্রয়ে, একটু অভয়ে, নিরাপদ জায়গা খুজে পেয়েছিলাম। হঠাৎ দোলার পায়ের শব্দে ও শঙ্কিত হয়ে দুরে সরে গেল। দোলা এসে কাছে বসল। বলল দাদু, তুমি কেমন আছ ? বললাম, দোলা কচ আসে না ? ও বলল না। আমি বললাম, বিয়ের কথা ঠিক হওয়াতে বেচারা লজ্জ্বা পাচ্ছে। অসুখের ভিতর ওর বাজনা মিউজিক শুনলে আমার খুব খুব ভাল লাগে। সুশান্ত ওকে ডাকেনা কেন আজ, আজ কুসুম আসার কথা না ? দোলা বলল, দাদু কুসুম আজ আশির্বাদে থাকার কথা। জ্বও তখন খুব চলছিল। প্রেসারের ঔষধ খাওয়ার সময় হয়ে এল। ডোরা জল দিয়ে ঔষধটা খাইয়ে দিল। কিন্তু জ্বরটা কমছেনা। সুশান্ত বিশ্বজিতের বাড়ী থেকে আশির্বাদের পালা শেষ করে বাসায় ফিরে এল। উমা বলল, জান প্রশান্ত দা সুশান্তর বন্ধু বন্ধুপতœীরা কচের সৌন্দর্য্যরে যা—-প্রসংসা করল। বলল, যেমন দেখতে তেমন স্বাস্থ্য, তেমনি গায়ের রং।

(চলবে———–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।