মধ্যরাত : পর্ব-১৪৮

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : পরদিন শুক্রবার ছিল বেলা ১২টায় আশির্বাদের পালা। বিশ্বজিৎ বাবু সাত-আট জন লোক সাথে করে আনবেন জানিয়েছেন। এদিকে সুশান্তর বন্ধু-বান্ধবী ৮জনের মত। সকাল থেকেই উমা মঙ্গল ঘট বসিয়েছে। সুশান্ত উমাকে বার বার বলছে। দেখ বিদেশ বিভুঁয়ে এত ঝকমারির দরকার নেই। উমা শুনেও শুনছেনা। লোকজনে সুশান্তর ছোট্ট এপার্টমেন্ট এ তিল ধরনের জায়গা নেই।
বেলা ১২টা বাজার ৫ মিনিট আগে বিশ্বজিৎবাবু তার সহচর বন্ধুদের নিয়ে সুশান্তর বাড়ীতে শুভ পদার্পণ করলেন। সাথে করে আনলেন প্রচুর মিষ্টি। সুন্দর একখানা বড় কুলোয় করে দামী শাড়ী, ব্লাউজ, পেটিকোট, স্যান্ডেল সব নিয়ে এসেছেন। লোকজনের হুড়াহুড়ি, দৌড়া দৌড়িতে এত ছোট জায়গার ভিতর সঙ্কুলান অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবু আমি জায়গা করে বিশ্বজিৎ বাবুর পাশের এক খানা চেয়াওে আসন নিলাম।
সুশান্তর উপর সকল ভার। ছেলে পক্ষের আদর আপ্যায়ন, সামাজিকতা রক্ষা করার সব দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে আমি নিশ্চিত হয়ে বসে আছি। উমার উপর দায়িত্ব এখন দোলাকে সাজিয়ে এই আশির্বাদের আসরে আগমন করার। প্রচন্ড গরম সুশান্ত টেবিল ফ্যান ছেড়ে দিল। অনেকক্ষণ হল দোলাকে নিয়ে আসার কোন লক্ষণ নেই, সুশান্ত কয়েক বার গিয়ে ঘুরে এল। ওখুব রাগ রাগ ভাব। এর মধ্যে দেখলাম ডোরা দোলাকে সাথে করে এগিয়ে আসছে। দোলাকে যেন এত সুন্দর লাগছে। আমি নিজেই চিনতে বার বার ভুল করছি। প্রকান্ড চুলগুলো হাঁটু ছুই ছুই করছে। স্যম্পু করে আরও ফুলে ফুলে চুলগুলি বিশালতা প্রকাশ করছে। লাল বেনারসিতে কপালে লাল টিপে লালের রাজ্যে দোলা সকলের মনকে লাল আবীরে রাঙ্গিয়ে দিল। আস্তে আস্তে ডোরা দোলাকে নিয়ে এসে কলের সামনে দাঁড়াল। সুশান্ত এগিয়ে এসে ডোরারে দেখিয়ে দিল বিশ্বজিৎ বাবুকে। ডোরা দোলাকে দিয়ে প্রণাম করাল। বিশ্বজিৎ বাবু কেঁদে ফেললেন। রিং বের করে দোলার আঙ্গুলে পড়িয়ে দিলেন। দোলা আবার প্রণাম করল। বিশ্বজিৎ বাবু দোলাকে পাশে বসতে বললেন। সকলের চোখ দোলার উপর। দোলার রূপে যেন ঘর আলো হয়ে গেল। সুশান্ত ডোরাকে সকলের সাথে পরিচয় করার আগে আমার সাথে সকলের পরিচয় করিয়ে দিল। সুশান্ত বলল, আমার বন্ধু প্রশান্ত মন্ট্রিল কঙ্ক্রোডিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসার। দোলা যার আজ আশির্বাদ হচ্ছে তার নাতনী। দোলা কঙ্ক্রোডিয়া ইউনিভার্সিটিতে এম এস করেছে।
মিস ডোরা প্রশান্তও আমার দু’জনের ক্লাশফ্রেন্ড। মিস ডোরা ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির ইকনমিকসের প্রফেসার। দোলার বিয়ের আমন্ত্রণে এখানে এসেছে। ডোরা দোলাকে আশির্বাদের আসর থেকে উঠে নিয়ে চলে গেল। এবার সকলকে মিষ্টি খাওয়াবার পালা, চা দেওয়া হল, কোক সেভেন আপ সকলেই খেয়ে ভাবীবর বন্ধুকে আশির্বাদ করে চলে গেল। উমা ঘরের মধ্যে থেকে সকল কাজ সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করেছে। সকল প্রশংসার একমাত্র উমা দাবীদার।

(চলবে———)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।