মধ্যরাত : পর্ব-১৪২

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : উমা বলতে লাগল, সুশান্তর কত সক একটা শিশুর মুখ দেখার জন্য। আমি তাকে এ জীবনেও উপহার দিতে পারব না। একটি সুন্দর কচি সন্তানের মুখ। ডাক্তার বলে দিয়েছে আমার সন্তান হবে না। আমি কি করব, কেমন করে একটি শিশুর হাসি হাসি মুখ, আধো আধো কথা, হাটি হাটি পা এ সংসারে ভগবানের কাছে থেকে ভিক্ষা করে সুশান্তকে দিতে পারি ? আমি বললাম, তুমি আজ এত অধীর, ব্যকুল হয়েছ কেন ? ধৈর্য্য ধর। ভগবান তোমার মঙ্গল করুন। তুমিত খুব ধৈর্য্যশীল মেয়ে, শুধু মুখ বুজে কাজ কর। পরের খুশীতেই দেখেছি তোমার খুশী।
দোলা বলল, চলনা দাদু এখানে একটি প্রকান্ড ও সুন্দর একখানা লেক আছে, দেখে আসি। জাহাজে চড়ে তোমাকে নিয়ে ঘুরে আসি। উমাদি চলনা, আমরা বেড়িয়ে আসি। উমা বলল, তোমার আশীর্বাদটা হয়ে যাক, তারপর কচকে নিয়ে আমরা বেড়িয়ে পরব। এখন ক’দিন চুপ থাক। প্রশান্তদার শরীরটা আর সারুক, তখন অনেক বেড়ানো যাবে, ফুর্তি করা যাবে। ভার্জিনিয়া থেকে ফোন করল নভেম্বরের চৌদ্দ তারিখ ডোরা ছুটি নিয়ে টরেন্টোয় আসছে। দোলার আশির্বাদ এর সময় ডোরা কাছে থাকবে। টরেন্টোর বাসার ঠিকানা ফোনে চেয়ে পাঠলা। সুশান্ত অফিস থেকে আসলে ডোরাকে ঠিকানা জানিয়ে দেবে। এই কথা বলে আমি ফোন ছাড়তে উদ্যত হলে বললাম, ডোরা, তুমি ভালতঃ তুমি কেমন আছ ? শীরের যতœ নিও, ডোরা বলল।
ডোরার সাথে কথা বলে বুঝলাম ভার্সিটি থেকে ফিরে এসে বোধ হয় ফোন করেরছে। খুব ব্যস্ত এবং কথাগুলি শুস্ক ও রুখ্য। তবে আমাদের প্রতি একটা কর্তব্যবোধ করে ভালবাসার দাবী নিয়ে এগিয়ে আসতে চায়। দোলাকে সে দেখে নাই, তবু দোলার আশির্বাদের সময় কাছে থাকতে ভালবাসে বা পছন্দ করে। সুশান্ত অফিস থেকে এলে আমি বললাম, মিস্ ফোন করেছিল। তোর বাড়ীর এড্রেস চায়। ও দোলার আশির্বাদের সময় এখানে থাকবে। সুশান্ত বলল, ভাল কথা; আচ্ছা আমি জানিয়ে দেব। আমি বিকেলে দিকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য বের হলাম। সুশান্ত বলল, চল আমিও একটু বেড়াই। দু’বন্ধুতে অনেকক্ষণ হাটলাম। অনেক কথা হল। দোলার বিয়েতে গহনা, ফার্ণিচার, ছেলে ঘড়ি, আংটি, স্যুট, বাসন-কোসন, এসব দেওয়া। ছোট খাট খাওয়া দাওয়ার আয়োজন। মেয়ের গহনা পত্র ও শাড়ী কসমেটিক। আমি বললাম, সুশান্ত আমরা দু’জনেই অনভিজ্ঞ। কোন কিছুতেই সেরকম জ্ঞান নেই। আমি বললাম, আমাদের দু’জনকে ছেলে পক্ষ ক্ষমার চোখে দেখলেই আমরা কৃতার্থ হব। সুশান্ত হেসে উঠল। সুশান্ত বলল, বিশ্বজিৎ বাবু খুবই ভদ্র ও বিনয়ী। কচ শিল্পী মনা, প্রতিভাবান ছেলে। কুটিলথা আছে বলে মনে হয় না। উদার উজার মন। কচের বৌদি মাধুরী শিশু সুলভ প্রাণ। সব কিছুতেই হাসি হাসি মুখ, যেন কল্যাণময়ী।
মাধুরীর ছেলে মেয়ে হয়নি। কচ কুসুমকে আপন ছেলে মেয়ের মত মানুষ করেছে। অগাধ ¯েœহে ভালবাসায় সন্তানতুল্য মায়া মহব্বতে বড় করেছে। দোলা মাধুরীর কাছে আদর যতেœ লালিত-পালিত হবে বলে আশা করি। এসব কথা ভাবতে ভাবতে বাড়ীতে পা রাখলাম। এসে দেখি কচ ড্রইং রুমে নিউজ পেপারটা নাড়া-চাড়া করছে। উমা চা খাবে কিনা জিজ্ঞাসা করছে। কচ বলল খেয়ে আসছি। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়াল। সুশান্ত পথে যেন তার পরিচিত কোন বন্ধুর সাথে কথা বলছিল। ও অনেকক্ষণ পরে এসে বলল, হ্যালো কচ, কেমন আছ ? ভালত ? কচ নমস্কার বিনিময় করল। সুশান্ত বলল হ্যালো কচ তোমার দাদা বৌদি ভালত ? কুসুম আসছে কবে ? কচ বলল, জামাই কুসুম সামনের সপ্তাহে আসবে। সুশান্ত বলল, আমাদেরও একজন গেষ্ট আসবে ভার্জিনিয়া থেকে। কচ বলল, দাদু ওনি দাদুর কে হন ? তোমার প্রশান্ত দাদুর ক্লাশ ফ্রেন্ড। ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসার।

(চলবে———–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।