মধ্যরাত : পর্ব-১৪১

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : সকল ধর্মেই বাবা মাকে দেখা শুনা করার জন্য ভক্তি শ্রদ্ধা করার জন্য বলেছেন। মুসলমানদের হাদিস শরীফে আছে। আমি যদি আমার পর কাউকে ছালাম করতে বলতাম, তবে তোমার বাবা ও মাকে ছালাম করতে বলতাম। এ কথা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন। তোমার যদি খেয়ে পড়ে দু’চার পয়সা হাতে থাকে, তবে তোমার ভাই বোন আত্মীয়-স্বজনকে সাহায্য কর। দরিদ্র ভিখারীকে দেখ। এ কথা সকল ধর্মেই আছে। যুগে যুগে মহামানব, মহামনিষীরা আল্লাহর বাণী, ভগবানের বাণী, মানুষের দুয়ারে তারা পৌছে দিতে কার্পন্ন করেননি।
হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে গেলাম। দোলা বলল দাদু, অনেক অনেক বেশী হাটা হয়েছে। চল বাড়ী ফিরে চল। আমরা আবার বাড়ীর পথে এগিয়ে চললাম। দেখি উমা আমাদের জন্য এগিয়ে এসেছে। বলল, বাবা দোলা আমাকে ভাবিয়ে তুলছিল বোন। এতক্ষণ কি মানুষ সকল বেলা বেড়ায় ? দোলা বলল, বারে দাদু হাঁটছেত হাঁটছেই। আমিই বলে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে চলছি। আমি বললাম, উমা ওর কোন দোষ নেই। আমার ভাবতে ভাবতে হাঁটতে খুব ভাললাগে। তাই অনেক অনেক কথা ভাবছিলাম, আর হাঁটছিলাম।
উমা বলল, প্রশান্ত দা চা খাবেন না ? এত বেলায় চা খেলে লাঞ্চ কখন খাবেন ? আমি বললাম, উমা সারা জীবনত খেয়েই গেলাম। রেখে গেলাম কি ? আমিত আমার স্মৃতি, আমার ভবিষ্যৎ বংশধর কিছুই রেখে যেতে পারছিনা। উমা বলল, কেন প্রশান্ত দা আপনার নাতনী দোলা ? তাকে লেখা পড়া শেখাচ্ছেন। ভাল পাত্রে সম্প্রদান করছেন। এইত একটা তাজমহল প্রেমের সমাধি সৃষ্টি করে গেলেন। দোলা দোলার বংশধররা আপনার নাম করবে। আর ভেবে দেখুনত আমি আর সুশান্ত কি কিছু অক্ষয় কীর্তি রেখে যেতে পারছি ? উমা এই কথা বলে কেঁদে ফেলল। সারাজীবন একটি সন্তানের মা হতে পারলাম না। কেউ এসে মা বলে ডাকলনা। মনের অনন্ত অসীম বেদনাগুলো কাকে বলতেও পারিনা। পারিনা বলে আর বেশি কষ্ট বোধ করি। কাউকে গুছিয়ে বললে বোধ হয় মনটা আমার হলকা হত। আত্মীয়-স্বজন, নিকটতম যারা ইন্ডিয়ায় বা বাংলাদেশে পাবনায়। কেউ তার নিজের সন্তানকে পরের হাতে ছেড়ে দিতে চায় না। সেজন্য কারও কাছে হাত পেতে তাকেও ছোট করতে চাইনা। আর নিজের দীনতা প্রকাশ করিনা।
উমার মনের গভীর ব্যাথা আজ নুতন করে শুনে আমারও বুকে কষ্ট লাগল। বেচারা। দোলা আমি উমা পথ চলতে চলতে বাসার সামনে এসে পরলাম। ঘর খুলে উমা ভিতরে প্রবেশ করে আমাকে দোলাকে চা-নাস্তা খাবার জন্য তাড়া করল। আমরা ভেতরে ঢুকে চায়ের টেবিলে বসে খাবারের প্লেটে হাত রাখলাম। উমা ওভেনের কাছে দাঁড়িয়ে ছল ছল চোখে আমাদের আর রুটি, ডিম, ফল, চিজ লাগবে কিনা জিজ্ঞাসা করছে। আমি বললাম, আর কিছু লাগবেনা। তুমি আমার কাছে বসে চা খাও। উমা বলল, আমি এখনও কিছু খাইনি; ভাবছিলাম আপনাদের সাথে খাব। ও একটা ডিম মামলেট করে খেতে বসল।

(চলবে——-)

 

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।