মধ্যরাত : পর্ব-১২৯

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : ওরা চা খেয়ে চলে গেল। আমি অনেক কথা বলে হয়রান বোধ করলাম। লম্বা হয়ে পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকলাম। একদিন কত শক্তির বড়াই করেছি। আর আজ একটু কিছুতেই বড় কাহিল লাগে। আস্তে আস্তে যদি সেরে যায় তবেই ভাল। সুশান্ত বলল, প্রশান্ত তোর প্রেসারটা ডেলি চেকআপ করা দরকার। ঔষধটা প্রেসার না থাকলে ঔষধ খেতে দিতে নিষেধ করল। প্রেসার থাকলে ঔষধ খাবে। আমি চুপ করে শুনে যেতে লাগলাম। কতদিন কত বছর আমাকে এই ঔষধ চালিয়ে যেতে হবে। জীবনের শেষ কটা দিন নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে হবে।
দোলা পাশে এসে বসল। দাদু তোমার শরীর খারাপ লাগছে। আমি বললাম, ঘরের আলো জ্বেলে দাও। আমার অন্ধকার ভালো লাগে না। আমাকে একটা বই দাও। শুধু চোখ বুজে থাকলে শত শত চিন্তা এসে আমার মনে ভিড় করে। দোলা বলল, দাদু কোন বই দেব। আমি বললাম, গান্ধী বইটা দাও। আমি শুয়ে শুয়ে বইটা কতক্ষণ পড়লাম। ভাল লাগল এসব মহান মহাত্মাদের জীবন ভিত্তিক কাহিনী পড়ে। ত্যাগেই মানুষকে মহান মহীয়ান করে তুলে। দোলা এসে বলল, দাদু এখন বইটা রাখ; ঘুমো। গায়ে কম্বলটা টেনে দিয়ে লাইট অফ করে দিয়ে দোলা চলে গেল। দোলার যতেœ আমি যেন বড়দির হাতের পরশ পাই। তেমনি ¯েœহ, তেমনি আন্তরিকতা, তেমনি ভালবাসা আমাকে অনেক না পাওয়া পরম পরম উপকথা ভুলিয়ে দেয়।
ভোর হলে দোলা কাছে এসে বলে, দাদু উঠো মুখ ধুয়ে চা খেতে এস। রুটি, টোষ্ট করে ভাতে মাখন মাখিয়ে, ফলগুলো ধুয়ে প্লেটে করে এগিয়ে দেয়। ডিম হাফবল করে গোলমরিচ লবন কাছে রেখে দেয়। উমা কিচেনের সব ভার নিয়েছে। সে অতি যতেœ পরিপাটি করে রাখে। কে, কি খাবে সকলের ফরমাস তামিল করে। কোন অভিযোগ ওর নেই, মান সম্মান, দান-প্রতিদান কোন কিছুর আশা করেনা। মহিয়সী গরীয়সীর মত আলো দান করে দূরে সরে থাকে। সুশান্ত যায়, ঘুমায় নিউজ পেপার পড়ে। প্রাণ খোলা আপন ভোলা দিল দরিয়ার মানুষ। দু’হাতে পয়সা খরচ করে যাকে ভালবাসে সত্যি করে ভালবাসে। সে ভালবাসয় কোন ফাঁকি নেই। কোন সন্তান সন্ততি নেই। দুখ নেই, আফসোস নেই, অভাব নেই, অভিযোগ নেই, খায়-দায়, গায়-ঘুমায়, হৈ-হুল্লো করে, কেউ বলতেই পারবেনা ওর মনের মনি গুহায় কোন দুঃখ বেদনা বাস করে।
আমি কিন্তু সুশান্তর মত না। আমার মনে যে একটা পেয়ে হারানোর দুঃখ আছে। তা আমার চলায়, বলায়, খাওয়ায়, ঘুমায় প্রকাশ পায়। মধ্য রাতের ম্যধ তারাগুলি তার জলন্ত প্রমাণ। মধ্য রাতের চাঁদ একপাশে হেলান দিয়ে যখন ঝিমায়। তখন এক খানা সপ্তর্ষি অনন্ত প্রশ্নের মত যখন আমাকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে। তখন মধ্য রাতের রাত জাগা পাখি প্রহর ঘোষণা করে, আমার মত রাত জেগে জেগে। দোলা এসে বলল দাদু, দিদিমা’র চিঠি এসেছে। শুনে মনটা যেন আনন্দে লাফিয়ে উঠল। কই কই দেখি দেখি। বড়দি আমার বড়দি। তাড়াতাড়ি চিঠি খুলে পড়ে ফেললাম। বড়দি দোলার বিয়েতে মত দিয়েছে। লিখেছে, প্রশান্ত ভাল ছেলে, সুদর্শণ ছেলে, শিক্ষিত ভদ্র মর্জিত হলে আমার কোন আপত্তি নেই। তোর মতই আমার মত।
দোলার ভাই ইন্দ্রনীল, স্বপ্ননীল ওরাও দোলাকে চিঠি দিয়েছে। ওর মা-বাবা ওর দিদিমা সকলের চিঠি দোলা খুশীতে অস্থির। দৌড়ে উমার কাছে গেল। উমাদি উমাদি দেখ কত চিঠি। আমার এ কয়দিন খুব মন খারাপ দাদুর অসুখ। তারপর এই বিদেশে তারপর সুশান্ত দাদু তুমি এলে। আজ আমার কি ভাল লাগছে। মনে হয় আমার সব আছে। আমি ডাকলাম দোলা দেখি স্বপ্ন-ইন্দ্র ওদের চিঠি। দোলা, দাদু দেখ কি লিখেছে। দোলা বলল, জান দাদু ওরা খুব দুষ্ট। ওদের জ্বালায় দিদিমার পুজো-টুজো সব নষ্ট হয়ে যায়। আমাকে আমার বই ছিঁড়ে পেন্সিল লুকিয়ে কত বিরক্ত করেছে। তা তোমাকে আমি বোঝাতে পারব না দাদু।

(চলবে—-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।