মধ্যরাত : পর্ব-১২৭

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

 (গত পর্বের পর) : নিয়মমত ৬ ঘণ্টা পর পর এন্টিবায়েটিকগুলো খেয়ে যাচ্ছি। ব্লাড প্রেসারের ঔষধও চলছে। খাওয়া-দাওয়া কন্ট্রোল করে চলছি। ওদেও সুশ্রুসায় আমি আস্তে আস্তে ভার দিকে চলছি। দোলার মুখে পূর্বের হাঁসি ফিরে এসেছে। উমা দোলা বসে বসে টরেন্টোর অনেক গল্প করে। কচ এর অনেক কথা হয়। কচ এর বৌদি উমাকে ও সুশান্তকে ধরেছে দোলাকে কচের কাছে বিয়ে দেওয়ার জন্য। আমি সুস্থ্য হয়ে উঠলে পর সুশান্ত আমার কাছে প্রস্তাব দিবে। আমি নির্জিব হয়ে শুয়ে শুয়ে ওদের গল্প শুনি। আর ভাবি হ্যাঁ দোলাকে এবার পাত্রস্থ করতে হবে। ভাল পত্র যখন হাতে আছে, সুস্থ্য হই তখন দেখব।
দোলার মুখে এখন যেন হাসির ফোয়ারা। বেচারা একয়দিন যেন কেন্দেই ফেলছিল। আমার অসুখে ও একেবারে চিমসে গেছিল। এই বিদেশে বিভুঁয়ে কে বা আছে ? যে দেখবে, তবু সুশান্ত টা এল আমরা দাদু-নাতনীর ধড়ে প্রাণ এল। যাক এখন সুশান্ত সারাদিন আমার কাছে বসে অনেক গল্প করে। সেই কলেজ জীবন এর কথা। ওরা কি খাচ্ছে না খাচ্ছে, আমিত কিচুই দেখতে পারছিনা। দোলাকে ডেকে বললাম, ওদের খাওয়ার দিকে লক্ষ্য রেখ। ওদের যত্ন করো। আমি আস্তে আস্তে সুস্থ্য হয়ে উঠলাম। এখন একটু ঘোরা-ফিরা করি। একটু বসে বসে খবরের কাগজটা দেখি। উমা, দোলা ওরা দু’জনেই আমার সেবা করে। দু’জনেই আমার জন্য অস্থির থাকে। আমি যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে উঠি। সুশান্ত সপ্তাহের বাজার করে আনে। মাছ, মাংস, তরি-তরকারী, ফল, চিজ, জুস, সংসারের সবই এখন ওর হাতে। টাকা দিলেও নেয়না। বলে যে কয়দিন আমি আছি, আমি চালাব। তুই চিন্তা করিসনা।
এরকম বন্ধু বর্তমানে দুনিয়ায় খুব কম দেখা যায়। ওর সরলতা, সহজতা, ভদ্রতা আমাকে শান্তি দেয়। আমি আর কি বলব ও যা করে। নীরবে মেনে নেই। উমা যেন আমার ছোট বোনের মত। ওর ¯িœগ্ধতায় আমার সকল দুঃখ-কষ্ট দূর করে দেয়। দোলা বিকেলের দিকে এখন গীটার নিয়ে একটু একটু প্রাকটিস করে। বেহালায়ও একটু টুং-টাং সুর তুলে সে কোন গানের না। আমার কচের কথা মনে হয়, ও থাকলে আমাকে সুন্দর সুন্দর গান শোনাত। আমি আজ আকাশের মত একলা। এ গানটা আমার সব সময় মনে হয়। দোলা এসে বলে, দাদু জান ? সব ভুলে গেছি; আমি বললাম, প্রাকটিস কর। আমি আরও সুস্থ্য হলে আমরা সুশান্ত দাদুর ওখানে গিয়ে কিছু দিন বিশ্রাম নেব। তখন আবার কচ তোমাকে শেখাতে পারবে। আর কপালে থাকলে ভবিষ্যতব্যে কি আদেশ জানিনা। হয়ত সারা জীবনের জন্যই কচ তোমায় গান শেখানোর জন্য পাশে পাশে থাকবে। দোলা বলল, দাদু ওঃ কি যে বল, আমি তোমার কাছে থেকে গান শিখতে পারব। আমি বললাম, দোলা মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়েছ, বিয়ে-ত তোমাকে একদিন করতেই হবে। ভাল চেলে হাত ছাড়া হয়ে গেলে, আর পাবনা। আরে পাগলী, আমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি, আবার অসুস্থ্য হয়ে পরলাম, কবে কখন চোখ বুঝি, তোদের দু’হাত এক করে দেই।

(চলবে—–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।